প্রশান্তি ডেক্স॥ কোচিং না করলে বা প্রাইভেট টিউশন না নিলে শিক্ষার্থীর প্রতি যদি কোনও শিক্ষক বৈষম্য করেন তাহলে তা অপরাধ— বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আইভি রহমান পরিষদ আয়োজিত সভায় তিনি এ কথা বলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী বেগম আইভি রহমানের ১৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ঠিক মতো যদি না পাড়ান বা পড়ালেও শিক্ষার্থীরা যদি তার কাছে কোচিং করতে যায় তাহলে এটি অনৈতিক। শিক্ষার্থী প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষার্থীকে যদি কোনও শিক্ষক বৈষম্যের চোখে দেখেন বা কম নম্বর দেন কিংবা ফেল করিয়ে দেন— সেটি অনৈতিক। এ ধরনের ঘটনা কোথাও কোথাও ঘটে। কোনও শিক্ষার্থী একটু দুর্বল হতে পারে, আমাদের দেশের ক্লাস সাইজ যে রকম, তাতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রতি সমান মনোযোগ দেওয়ার পরিবেশ এখনও আমরা তৈরি পারিনি। আমাদের ক্লাস সাইজ ৩০, ৩৫, ৪০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। এর বেশি হয়ে গেলে একজন শিক্ষকের পক্ষে শ্রেণিকক্ষে সকল শিক্ষার্থীর প্রতি সমান মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। কাজেই কারও কারও দুর্বলতা থেকে যেতে পারে। কারও কারও বাড়িতে সহযোগিতা নেওয়ার হয়তো সুযোগ নেই, বাবা-মা নিজেরাই হয়তো কর্মজীবী— এজন্যও কারও কারও দুর্বলতা থেকে যেতে পারে। কাজেই কোচিংয়ের দরকার কোথাও কোথাও হতে পারে। কিংবা বিভিন্ন ধরনের দেশি বা বিদেশি পরীক্ষা হয়, সেগুলোর জন্য তৈরি হতে কোচিংয়ের দরকার হতে পারে। অন্যান্য দেশেও কোচিংয়ের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু কোচিংয়ের সমস্যাটা যেখানে আছে, একজন শিক্ষক তার নিজের ক্লাসে ভালো পড়ান বা না পড়ান— নিজের ক্লাসের শিক্ষার্থীদের যদি বাধ্য করেন কোচিংয়ে পড়তে যেতে, আর না পড়লে তখন যদি তার প্রতি বৈষম্য করেন, কম নম্বর দেন, হয়তো তাকে ফেল করিয়ে দেন— এটি হবে অত্যন্ত অনৈতিক ও অপরাধজনক একটি কাজ। সেটি যেনও কোনও শিক্ষক না করতে পারেন সে জন্য আমাদের প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনে সুস্পষ্টভাবে কোচিং নিষেধ করা হয়েছে এবং সেটি বন্ধ করার প্রস্তাব সেখানে আছে।’
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে অপরাজনীতি যারা করছেন, যে অপশক্তি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়, সে অপশক্তি শিক্ষাঙ্গনকে প্রায়শই বেছে নিতে চায় বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য। সেই কাজটি যেই করুক না কেনও সেগুলোকে প্রশ্রয় দেওয়ার সুযোগ নেই। সেটিকে কঠোরভাবে দমন করতে হবে। শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ সবাইকে সঙ্গে নিয়ে শিক্ষাঙ্গনকে শান্তিপূর্ণ রাখতে চাই, যেন শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকে। কারণ শিক্ষার মাধ্যমেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
আইভি রহমানের বিষয় তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তর ও ২১ আগস্টের ঘাতকরা স্বাধীনতার পরাজিত শক্তির দোসর। আইভি রহমান এই দোসরদের নির্মম হত্যার শিকার। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় প্রথমে আহত ও পরে নিহত আইভি রহমানকে বিদেশে চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা করেছিল তার পরিবার। কিন্তু তাকে বিদেশে নিতে দেওয়া হয়নি। তার সন্তানদের হাসপাতালে একটি রুমে তালা দিয়ে রাখা হয়েছিল। এমনকি আইভি রহমান মৃত্যুবরণ করার পর প্রথমে তার লাশ পরিবারের কাছে দিতে চায়নি দোসরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— আওয়ামী লীগ নেতা এম এ করিম, শেখ জাহাঙ্গীর, সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এ বি এম বায়জিদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি এ এইচ এম মেহেদী হাসান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইভি রহমান পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তারুজ্জামান খোকা।