বাআ॥ ‘আমার ইট্টু জমি হবে, একখান ঘর হবে, এই কথা স্বপ্নেও ভাবি ন্যাই। তয় এইবার আল্লাহ মুখ তুইল্যা তাকাইছে। মাইয়াডারে নিয়ে নিজের ঘরে বসবাস করছি! আমি অহন নিজের এট্টা ঠিকানা পাইছি। আল্লাহ আমাকে এখন অনেক ভালো রেখেছেন।
এই ঘর যিনি দিয়েছেন সেই বঙ্গবন্ধুকন্যার জন্য নামাজে বসে দোয়া করি।’ একদমে কথাগুলো বলছিলেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার আতাইকুলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বিলকিস খাতুন।
শুধু বিলকিস খাতুনই নন, এমন আনন্দ-উচ্ছাস দেখা মিলল এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা হাফিজা খাতুনের চোখে মুখেও। তিনি বললেন, ‘সত্যি অবাক লাগছে আমাদের দেখতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রী (প্রতিমন্ত্রী) সাব এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে আমরা কেমন আছি তা জানতে চাইছেন। সত্যি অন্যরকম ভালো লাগছে। এ অনুভূতি প্রকাশ করতে পারব না। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন গত বৃহস্পতিবার সিংড়ার আতাইকুলা আশ্রয়ণ প্রকল্প পরিদর্শন করেন। সঙ্গে ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রতিমন্ত্রী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের দেখতে গেলে তারা এটাকে অন্যরকম বিকেল বলে অভিহিত করেন।
প্রকল্প এলাকায় প্রবেশ করতেই মাহিমা খাতুন তার বাক প্রতিবন্ধী শিশুকে নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রতিমন্ত্রীর সামনে হাজির। প্রতিমন্ত্রী পলক শিশুটিকে পরম মমতায় কোলে তুলে নিয়ে আদর করলেন। এ সময় আবেগে কান্না শুরু করলেন শিশুটির মা মাহিমা।
এ দুই নেতা একের পর এক ঘরে প্রবেশ করছেন, খোঁজ-খবর নিচ্ছেন আগে কেমন ছিলেন? এখন কেমন আছেন। ৮-১০টি ঘর পার হয়ে আবুল বাশারের ঘর। সেখানে গিয়ে তাঁর কাছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল হোসেন জানতে চাইলেন কেমন আছেন? বাশারের শরীরে নানা রোগব্যাধী থাকরেও বললেও অতীতের চেয়ে এখন খুব ভালো আছি। নিজের ঘরে ঘুমাতে পারি। এর চেয়ে বড় পাওয়া কী হতে পারে?
এরপর বিলকিস খাতুনের ঘরে গিয়ে দেখা মিলল, কালার টেলিভিশন, ফ্রিজ, রাইস কুকার, গ্যাসের চুলা। তাঁর ঘর দেখে বোঝার উপায় নেই-এরা একসময় আশ্রয়হীন-গৃহহীন ছিলেন। ঘরের পাশে পেঁপে গাছ, পিয়ারা গাছ, শিম গাছ, লাউ গাছ ও বেগুন গাছ লাগানো। জানালেন, ‘সবজি কিনতে হয় না। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা রাখিনি। ’
জানা গেছে, গত ১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগের আট সাংগঠনিক সম্পাদককে নিয়ে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের জেলা সফর করার সময় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের খোঁজ-খবর নিতে নিদের্শনা দেন। এর ধারাবাহিকতায় এসএম কামাল হোসেন গত মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের খোকসাবাড়ী, বগুড়ার নিশিন্ধারা এবং নাটোরের সিংড়া উপজেলার আতাইকুলা আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখেন। তারা আগে কেমন ছিলেন? এখন কেমন আছেন? কোনো সমস্যা আছে কিনা, আরো কেউ ঘর পায়নি এমন ব্যক্তি আছে কিনা সেসব খোঁজ-খবর নেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দোয়া কামনা করেন।
গত বৃহস্প্রতিবার বিকালে সিংড়ার আতাইকুলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক প্রতিটি পরিবারের জন্য ২০ কেজি চাল, চার কেজি পেঁয়াজ, চার কেজি ডাল, দুই কেজি সয়াবিন তেল উপহার হিসেবে নিয়ে যান। এসব উপহার এবং কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রতিমন্ত্রীকে দেখে আপ্লুত হয়ে পড়েন অনেকেই।
এখানের বাসিন্দা সাথী খাতুন বলেন, কখনো কখনো সিংড়া সদরে দিয়ে দূর থেকে মন্ত্রী সাবকে দেখি। কিন্তু আমাদের ঘরে প্রধানমন্ত্রীর উপহার নিয়ে হাজির হবেন ভাবতেও পারিনি। সত্যি অন্য রকম এক দিন আজ আমাদের জন্য।
সাথীদের ঘর ছেড়ে তিনঘর পার হয়ে কবির হোসেনের বাড়ি। ঘরের চারপাশে পেপের কাজ। গাছেও প্রচুর পেপে ধরেছে। পেঁপে গাছ পরিদর্শন করার সময় সম্রাট নামের এক শিশু এগিয়ে এসেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন। এ সময় পলকও সম্রাটকে কোলে নিয়ে জয় বাংলা স্লোগান দেন।
আতাইকুলা আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা ঘুরে ঘরগুলো ছাড়া এটা যে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ বোঝার উপায় নেই। এখানে কবুতরের ছোট খামার, হাঁসের ছোট খামার, ছাগল পালনসহ নানা আয় বৃদ্ধি মূলক কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছে বাসিন্দারা। ঘরের চারপাশেও সবুজের সমারেহ। যেন আশ্রয়ণ প্রকল্প নয়, দৃষ্টি নন্দন গ্রাম।
স্থানীয়দের খোঁজখবর নেওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন। তিনি বলেন, মানবিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারনেই অসহায় গৃহহীন মানুষ উন্নত জীবন যাপন করছেন। যারা এক সময়ে খোলা আকাশের নীচে বসবাস করতেন, তারা আজ বাড়িসহ ঘরে পেয়েছেন। পাশাপাশি খুব অল্প দিনেই তাদের জীবন মানের উন্নয়ন শুরু হয়েছে। আতাইকুলা আশ্রয়ণ প্রকল্পটি মনে হচ্ছে একটি দৃষ্টি নন্দন পরিপূর্ণ গ্রাম।
এসএম কামাল হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে পাঠিয়েছেন, খোঁজ-খবর নিতে। আমি এই উপহারের ঘর পাওয়া মানুষের সাথে কথা বলছি, তাদের আর কোনো চাওয়া পাওয়া আছে কিনা, তাদের কোনো অসুবিধা আছে কিনা তা জানতে এসেছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেখানো পথে আমরা চলি। প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়ন করছেন সারা দেশে। এই এলাকার আর কেউ জমি ছাড়া আছে কিনা, ঘর ছাড়া আছে কিনা। শেখ হাসিনার লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশের একটি লোকও ঘর ছাড়া থাকবে না। তার মাথাগোজার ঠাঁই জননেত্রী শেখ হাসিনা করে দেবেন। এবং একটিও লোকও বলবে না তার কোনো জমি নাই। দুই শতাংশ জমির ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এই স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখে ছিলেন। আর স্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ করতে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে জননেত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এবং বাবা স্বপ্ন সত্যি করতে কাজ করে যাচ্ছেন। আজ দেখলেন প্রধানমন্ত্রীর কথা বলে একজন বৃদ্ধ মহিলা কান্না করলেন।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মুজিবশতবর্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে আমার নির্বাচনী এলাকায় ১২৯০টি গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আরো কিছু তালিকা করেছি সেগুলোকেও ঘর করে দেওয়া হবে। জাতির পিতার স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে বাস্তবায়ন হচ্ছে। একটি মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না।