ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ৭০ জন শ্রমিক এক যোগে কাজ ফেলে চলে যাওয়ায় কসবায় আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ভ’মিহীন পরিবারের জন্য কসবায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর হস্তান্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরো কসবা উপজেলায় আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতাধীন প্রায় ১৮৭০টি ঘর। ইতোমধ্যে মাদলা, কসবা সদর, বাদৈর, হাতুরাবাড়ী এলাকায় প্রায় ৪ শতাধিক ঘর গৃহহীনদের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। মন্দভাগ, চাটুয়াখলা, গোপিনাথপুর ও মনকাশাইর নামক স্থানে ঘর তৈরির কাজ চলছিলো। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে বার বার হস্তান্তরের সময় পেছানো হলেও মনকাশাইর গ্রামের মাঠে একসাথে প্রায় চারশত ঘরের কাজ এখনো শেষ হয়নি। গত অর্থবছরে কাজ শেষ করে গৃহহীন মানুষদের হস্তান্তরের কথা থাকলেও তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
জানা যায়, মনকাশাইর গ্রামের মাঠে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পাশে এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের মধ্যে সর্ব বৃহৎ আশ্রয়ন প্রকল্প। অন্যদিকে কসবা উপজেলায় এলাকার সংসদ সদস্য আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এমপি বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে সর্বাধিক ঘরের বরাদ্দ নিয়েছেন । মনকাশাইর প্রকল্পটি নীচু জমি হওয়ায় মাটি ভরাট করে ঘর নির্মান করায় এখানে জুলাই মাসে অতিবৃষ্টিতে কয়েকটি ঘরের ভিটি ধসে গিয়েছিলো।
তবে মনকাশাইর আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর তৈরি হলেও এখনো ঘরের মেঝে মাটি ভরাটের কাজও শেষ হয়নি। কিছু কিছু ঘরের মেঝ মাটিতে ভরাট করা হলেও সেখানে ইট সুরকী বিছানো হয়নি। অপরদিকে বাথরুমের কাজও শেষ হয়নি। এই প্রকল্পের আওতাধীন বিদ্যালয়, খেলার মাঠ, মসজিদ, মন্দির, বাজার, পুকুর, কবরস্থান, গভীর নলকুপ ও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা বরাদ্ধ থাকলেও কোনটাই এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। প্রকল্পের বিভিন্ন লেনে মাটি এবরো থেবরো হয়ে পড়ে চলাচলের রাস্তাও তৈরি হয়নি। ফলে উপকারভোগী মানুষদের মাঝে হতাশা নেমে এসেছে। তারা অপেক্ষার প্রহর গুনছে কখন পাবে প্রধানমন্ত্রীর ঘর।
এদিকে ঘর নির্মানের যারা নিয়োজিত ছিলেন তাদের ৪টি দলের ৭০জন শ্রমিক একযোগে রাগ করে চলে যাওয়ায় এখন কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রকল্পে কর্তব্যরত গ্রাম পুলিশ ফারুক মিয়া জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর একযোগে ৭০ জন শ্রমিক কাজ বন্ধ করে চলে যায়। তারা এই এলাকার কেউ নন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অধীনে কাজ করে আসছিলেন।
দেশের নীলফামারী এলাকার নুরন্নবী নামক একজন সহ শ্রমিক ঠিকাদারের সংগে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তার অধীনে ৭০ জন মিস্ত্রি ও শ্রমিক কাজ করতো। তিনি বলেন, সহ ঠিকাদার রফিক মিয়া আমাদের ঠিকমতো টাকা-পয়সা দেয়না। বাড়ি থেকে টাকা এনে প্রায় ৬০ হাজার টাকা লেবারদের দিয়েছি। পারিশ্রমিক ঠিকমতো না পাওয়ায় কাজ ফেলে চলে এসেছি।
নীলফামারীর জিয়া নামক এক রং এর ঠিকাদার ও মিস্ত্রি মুঠোফোনে জানান, তিনি কসবায় মনকাশাইর আশ্রয়ন প্রকল্প শাহপুর প্রকল্প ও কালিকাপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ করেছেন। চার লাখ টাকা বকেয়া থাকায় রং এর কাজে নিয়োজিত অন্যান্য শ্রমিকদের টাকা দিতে পারেননি তাই নিরুপায় হয়ে চলে যান। সহকারী ঠিকাদার রফিক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সিএ মোতাহার হোসেনের সংগে বহুবার টাকার জন্য ঘোরাঘুরি করি। কিন্তু টাকা না পেয়ে গ্রামে ফিরে আসি। ঈদের পূর্বে দুই হাজার নির্মান শ্রমিক এক যোগে কাজ করছিলো। নিয়মিত টাকা না পাওয়ায় একে একে সবাই চলে যায়। সর্বশেষ ৭০ জন অর্ধাহার ও অনাহারে থেকে একসাথে চলে যায় কাজ ফেলে।
কখন আবার কাজ করতে আসবেন জানতে চাইলে জিয়া বলেন, সহকারী ঠিকাদার রফিক মিয়া আমার পাওনা টাকা পরিশোধ করলে হয়তো কাজে যাবো।
মনকাশাইর বাজারের মাসুদ নামক এক দোকানদার বলেন, সহকারী ঠিকাদার রফিক মিয়ার নিকট তিনি ৭০ হাজার টাকা পাবেন। এখন তার মোবাইল বন্ধ। মাসুদ জানায়, এখানে সহ ঠিকাদার ও শ্রমিক যারা কাজ করেছেন তাদের সকলের বাড়ি উত্তর বঙ্গে। এরা বাড়িঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করে এখানে কাজ করেছেন। বিল না পেয়ে অনাহার ও অর্ধাহারে থেকে চলে গেছে।
এ বিষয়ে সহঠিকাদার রফিক মিয়ার সংগে তার ০১৩১৮০০৬১৪১ নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি ঠিকাদার নই। ঠিকাদার হলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। ওখানে কাজ করে পোষায়না। তাই চলে এসেছি। তবে যখন কথা বলার সুযোগ আসবে তখন কথা বলবো। এখন আর কিছু বলতে চাইনা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস সুপারেন্ডেন্ট মোতাহার হোসেন বলেন, তাদেরকে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য আমরা চাপ সৃষ্টি করেছিলাম। তাই কাজ ফেলে চলে গেছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে ইউএনও স্যারের সাথে আপনারা যোগাযোগ করুন।
খাড়েরা ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কবির আহাম্মদ খান বলেন, আমি মনকাশাইর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ কমিটির সভাপতি। শ্রমিকরা কাজ ফেলে চলে গেছে এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। সব কিছুই দেখাশুনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলম। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে এখন আমাদের ইজ্জত নষ্ট হওয়ার কারন হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ উল আলমের সংগে যোগাযোগ করতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেন না। এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডভোকেট রাশেদুল কাওসার ভ’ইয়া জীবনের সংগে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।