তাজুল ইসলাম॥ ‘বিশ্বজিতের শেষযাত্রায় কাঁধ দিলেন কালামরা’ জীবন তো আগেও হারিয়েছে বহু বার। এ বার মৃত্যুর কাছেও হার মানল ধর্মের আমরা-ওরা। মানিকচকের বিশ্বজিত রজকের শ্মশানযাত্রায় কাঁধ দিলেন হাজি মকলেসুদ্দিন, হাজি মালেক, শেখ কায়সুল, আবুল কালাম আজাদ। রীতি মেনে হরিধ্বনি, রাস্তায় খই ছিটানো সবই করলেন তাঁরা। শেষমেশ সবটুকু নিয়ম মেনে গঙ্গার পাডে অন্ত্যোষ্টি।
বছর তেত্রিশের বিশ্বজিৎ রজক বছর দুয়েক ধরে ভুগছিলেন লিভার ক্যান্সারে। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, স্ত্রী আর ছোট তিন কন্যা সন্তান। একমাত্র রোজগেরে ছিলেন তিনি নিজেই। তাই তাঁর অসুস্থতায় রীতিমতো পথে বসে পরিবারটি। দাদা রণজিৎ পরিবার নিয়ে পাশে থাকলেও ভাইয়ের পাশে দাঁড়াানোর সামর্থ্য নেই। অবস্থা বাড়াবাড়ি হলে মাসখানেক আগে গ্রামের মানুষদের বাড়ানো হাত ধরে বিশ্বজিতকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কলকাতায়। এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে দিন সাতেক আগে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। তারপর আবার বাড়িতেই ফিরিয়ে আনা হয়।
মানিকচকের যে শেখপুরা গ্রামে বিশ্বজিতের বাড়ি, সেখানে হিন্দু বলতে শুধু তাঁদের পরিবারটিই। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ ইয়াসিন বলেন, ‘‘আমরা চাঁদা তুলে চিকিৎসার জন্য ওকে কলকাতায় পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ওখানকার ডাক্তাররা মুম্বাই নিয়ে যেতে বলেছিলেন। সেই অর্থ আর জোগাড় করতে পারিনি।’’ সোমবার রাতে মারা যায় বিশ্বজিৎ।
বিশ্বজিতের অসুস্থ্যতা, মৃত্যু এবং সংকার এই সবই প্রমান করে বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র এই সবের উদ্ধে আমাদের মানবতা এবং অসাম্প্রদায়ীক মনোভাব। এই মৃত্যুতে জয়ী হলো আসাম্প্রদায়িকতা এবং বিশ্ব মানবতা। এই মানবতায় নেই কোন হিংসা, ধর্মবিদ্ধেশ বা জাত কুলের বাছ-বিচার। এখানেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার সোনালী রূপ ফুটে উঠে। এই বাংলাইতো আমরা চাই। যেখানে মানবতাই হবে সবচেয়ে উদ্ধে এবং জীবন-জীবিকার মাপকাঠি। ধর্মীয় উগ্রবাদী, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, হিংসা, লোভ এবং জাত-কুলের বাইরে যে অনিন্দ সুন্দর শান্তির অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরাজমান তাই প্রমানিত হলো এই বিশ্বজিৎ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তির মাধ্যমে। আমরা এই মানিকচরের শেখপুরা গ্রামের মানুষদের কাছ শিখি এবং আমাদের সমগ্র দেশে তা বিশ্বে এই ঘটনার যে মুল শিক্ষা তা ছড়িয়ে দেয়। যেন আমাদের সমাজ হয় সম্পূর্ণরূপে ঐ মানিকচকের শেখপুরা গ্রামেরই ন্যায়। ধন্য, ধন্য তোমরা ধন্য হোক তোমার মহান মহানুভবতা ও ভাতৃত্ব। সালাম হাজার সালাম ও বিন¤্র শ্রদ্ধা রইল তোমাদের প্রতি। তোমাদের এই দৃষ্টান্তকে সামনের জীবনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই আমার জীবনের কর্মের মাধ্যমে।