ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেল এক খেলনা বিক্রেতা হকার কন্যা সামিয়া আক্তার। বাক প্রতিবন্ধী দরিদ্র হকার কন্যা সামিয়া আক্তার শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে স্কুল ও কলেজ শিক্ষকদের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত পড়াশোনা করে মেডিকেলের ভর্তির সুযোগ পেয়েও স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন সর্বনাশী অভাব ও দারিদ্রতা। বাচ্চাদের খেলনা বিক্রেতা বাকপ্রতিবন্ধী বাবার একমাত্র মেয়ে স্বপ্ন পূরনে সরকারএবং হৃদয়বান মহলের সহযোগিতা চাই শিক্ষক, এলাকাবাসী ও সামিয়ার পরিবার।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার খাড়েরা ইউনিয়নের মনকশাইর গ্রামে ছোট্ট একটি দোচালা টিনের ঘরে সামিয়াদে বসবাস।বাবা পাক প্রতিবন্ধী সেলিম মিয়া পেশায় একজন হকার। গ্রামের স্কুলমাঠে কয়েক হাজার টাকার বাচ্চাদের খেলনা নিয়ে বসে যা বিক্রি হয় তা দিয়েই চলে সামিয়াদের সংসার। সেলিম মিয়ার এক ছেলে এক মেয়ে। দরিদ্রতায় জর্জরিত সেলিম মিয়া ছেলেকেও হাফেজ বানিয়েছেন। মেয়ের পড়াশোনায় আগ্রহ দেখে শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় মেয়েকে শতকষ্টেও নিজেরা খেয়ে না খেয়ে সামর্থ অনুযায়ী সামান্য খরচ দিতে পেরেছেন। দরিদ্র কন্যা পিএসসি,ও জেস এসসিতে গোল্ডেনমার্ক পেয়েছে।
মেধাবী হওয়ায় স্কুল শিক্ষকরা তাকে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে বলে এবং শিক্ষকরা তাকে বিনামূল্যে প্রাইভেট পড়ায়। এসএসসিতে ও সামিয়া বিজ্ঞান বিভাগের গোল্ডেন মার্কস পেয়েছে ।পরে কসবা মহিলা ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করায় কলেজ শিক্ষকরা তাহাকে মেডিকেলে আবেদনের পরামর্শ দিলে পরিবারের অভাব থাকে হতাশ করে। সামিয়ার পরিবারের অবস্থা জানতে পেরে শিক্ষকরা ভর্তির আবেদনের বিষয়ে অর্ধেক টাকা (বার হাজার টাকা) ব্যবস্থা করে দেয়। শেষ পর্যন্ত শেষ সম্বল সামিয়ার কানের দুল বিক্রি করে ভর্তির আবেদন করে। প্রথমে ওয়েটিং তালিকায় থাকলেও গত ১৫ সেপ্টেম্বর নীলফামারী মেডিকেল কলেজ থেকে তাকে ভর্তির সুযোগ দিয়ে সামিয়াকে কর্তৃপক্ষ মেসেজ পাঠায়। এক খবর সামিয়া খুশি হলেও দরিদ্রতার কারণে আনন্দ নেই পরিবার। সামিয়া আক্তার জানায় দরিদ্র পরিবারের মেয়ে নবম শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগ নেওয়ার পর থেকে সহপাঠী ও গ্রাম মহল্লার অনেকেই তিরস্কার সইতে হয়েছে। মানুষের টিটকারি ও কটু কথায় রাতে শুয়ে শুয়ে নীরবে কেঁদেছি। তবু মনে ইচ্ছা ছিল আমি পারবো। মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলেও দরিদ্র মা- বাবার পক্ষে ভর্তি করানো সম্ভব নয়। তাই প্রধানমন্ত্রী ও আমাদের এলাকার আইন মন্ত্রীর নিকট আমার আবেদন তারা যেন আমার স্বপ্ন পূরণে ভর্তি সহ যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেন। আমি যেন ডাক্তার হয়ে আমার মত সমাজে অবহেলিতদের পাশে দাঁড়াতে পারি।
ইউপি সদস্য বাবুল মিয়া ও গ্রামের বাসিন্দা নাজমুল হোসেন শওকত আহমেদ ও শাহ আলম সহ বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী বলেন আমাদের গ্রামে এই প্রথম কোন মেয়ে নিজ মেধায় মেডিকেলে ভর্তি সুযোগ পেয়েছে। আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। আমরা গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ তিনি এই দরিদ্র পরিবারের মেয়েটির মেডিকেলে ভর্তি সহ যাবতীয় ব্যবস্থা করে দেন।
সামিয়া মা সেলিনা আক্তার বলেন,শিক্ষকদের সহায়তায় এ পর্যন্ত মেয়েকে পড়াতে পেরেছি। আমার মেয়ের স্বপ্ন পূরনে আইনমন্ত্রী সহ সকলের সহযোগিতা চাই ।পাক প্রতিবন্ধী বাবা সেলিম মিয়া কথা বলতে না পেরে চোখের পানিতে একমাত্র মেয়ের স্বপ্ন পূরণে সকলের সহযোগিতা কামনা করছেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম বলেন, অবাক হয়েছি। অভাব অনটনের মাঝেও মেয়েটির অদম্য ইচ্ছাশক্তি থাকায় সে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তিনি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সামিয়া ভর্তির বিষয়ে সহযোগিতা আশ্বাস দেন। বিষয়টি এলাকার সংসদ আইনমন্ত্রী মহোদয়কেও অভিহিত করার আশ্বাস দেন।