বাআ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যার অজুহাতে দেশের বন্যা দুর্গত উত্তর-পূর্বাঞ্চরীয় হাওড় এলাকায় খাদ্যশস্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এ ধরনের কান্ড ঘটালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে বর্তমানে খাদ্যের কোন ঘাটতি নেই এবং হাওড় এলাকা থেকে দেশের খাদ্য চাহিদার একটি স্বল্প অংশই পূরণ হতো। কাজেই খাদ্যশস্যের সরবরাহ কমতির অজুহাতে কোনভাবেই খাদ্যের দাম বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই।’ এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা আজ বন্যাদুর্গত হাওড় এলাকা পরিদর্শনকালে শাল্লা উপজেলা সদরের শাহেদ আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত স্থানীয় এক সুধী সমাবেশে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বন্যা কবলিত অঞ্চলের জনগণের দুঃখ, কষ্ট স্বচক্ষে পরিদর্শনের জন্য সকালে এখানে আসেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার পরীক্ষা করে দেখছে, হাওড়াঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে কারো গাফিলতি প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, বন্যার পানি দূর হয়ে নতুন ফসল ওঠার আগ পর্যন্ত কৃষিঋণের টাকা ফেরত দেয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে এবং এর প্রদেয় সুদের টাকাও অর্ধেক করে দেয়া হবে। তিনি এখানে দুর্গত প্রত্যেক পরিবারকে মাসে ৫শ’ টাকা করে প্রদান এবং সার, বীজ, কীটনাশকসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে প্রদানের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর হেলিকপ্টারটি শাল্লা উপজেলার শাহেদ আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবতরণের আগে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারে করে সমগ্র দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখেন। তিনি পরে স্পিড বোটে করেও কিছু কিছু দুর্গত এলাকায় যান।
প্রধানমন্ত্রী এখানে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকান্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত সিনিয়র কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে সবাই যেন পর্যাপ্ত ত্রাণ সুবিধাটা পায় তা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন এবং তিনি নিজে উপস্থিত থেকেও দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভয় না পাবার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সমাবেশে বলেন, তাঁর সরকারের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় প্রশাসনসহ সকল মহল নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট রয়েছে।
তিনি বলেন, কাজেই খাদ্য সরবরাহ এবং দুর্গত জনগণের সাহায্যের বিষয়ে সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। দুর্যোগ ও ত্রাণ পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, বন্যায় সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ এবং মৌলভীবাজার এই ৬টি জেলার ৬২টি উপজেলার ৫১৮টি ইউনিয়নের ৮,৫০,০৮৮টি পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির বোরো ফসল নষ্ট হয়েছে এবং ১৮ হাজার ২০৫টি বাড়ি-ঘরের পুরোপুরি বা আংশিক ক্ষতি সাধন হয়েছে।
এ সকল এলাকায় ত্রাণ বিতরণের জন্য ৫৮৭টি ত্রাণ কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে, ৪ হাজার ২২৪ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং ২ কোটি ২৫ লাখ ৯৭ হাজার টাকা মানবিক সাহায্য হিসেবে দুর্গতদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভিজিএফ কর্মসূচিও চালু করা হয়েছে।