প্রশান্তি ডেক্স॥ রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল রাখালগাছি ও বেতকা। পদ্মা ও যমুনা নদীবেষ্টিত এই দুই বিচ্ছিন্ন জনপদে প্রায় তিন হাজার মানুষের বসবাস। উত্তরপূর্ব দিকে মানিকগঞ্জ, পশ্চিমে পাবনা, সিরাজগঞ্জ এবং দক্ষিণে রাজবাড়ী জেলা সদর। দুর্গম চরাঞ্চল রাখালগাছি ও বেতকা এলাকার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা নৌকা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নে অবস্থিত অন্তারমোড়। সেখান থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দুইটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা পারাপার করে। প্রতিদিন অন্তারমোড় থেকে চার বার এবং রাখালগাছি থেকে চার বার নৌকা ছাড়ে। অন্তারমোড় থেকে ইঞ্জিনচালিত বড় নৌকা পদ্মা পাড়ি দিয়ে রাখালগাছি যায়। সেখান থেকে আরও কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে বেতকা পৌঁছাতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে নদী পাড়ি দিতে সময় লাগে প্রায় ৪০ মিনিট। বর্ষাকালে তা লেগে যায় এক ঘণ্টার বেশি। বছরের অর্ধেকটা সময় পদ্মা নদী ভরাট থাকে। উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জ সদরে যাতায়াত করতে হয়।
রাখালগাছি থেকে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে রাজবাড়ী শহরে যাচ্ছিলেন মোক্তার ব্যাপারী। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমাদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়। আর শুষ্ক মৌসুমে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে আবার নৌকায় আসতে হয়। রাখালগাছি থেকে পদ্মা নদী পার পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ইউপির এক নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে রাখালগাছি-বেতকা গ্রামে প্রায় তিন হাজার মানুষের বসবাস। এখানকার ভোটার সংখ্যা প্রায় এক হাজার। প্রতি বছর পয়লা বৈশাখে অন্তারমোড় ও রাখালগাছি খেয়াঘাট ইজারা দেওয়া হয়। ইউনিয়ন পরিষদ বছরে প্রায় ২০ হাজার টাকার মতো রাজস্ব পায়। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার যাত্রীসহ অনেক মোটরসাইকেল পারাপার হয়। স্বল্প সময়ে পাবনা, রাজশাহী অঞ্চলে যাতায়াতের জন্য অনেকে এই ঘাঁট ব্যবহার করেন।
অন্তরমোড় থেকে পাবনার কাশিনাথপুরে আত্নীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন নেয়ামত খাঁ। তিনি বলেন, রাজবাড়ীর জৌকুড়া-কাজির হাট দিয়ে পাবনা গেলে দুই-তিন ঘণ্টা সময় লাগে। স্বল্প সময়ে যাতায়াতের জন্য এই খেয়াঘাট দিয়ে আসা–যাওয়া করেন।
রাখালগাছি-বেতকা এলাকায় বেতকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার বা স্থাপনা নেই। প্রায় তিন বছর আগে পাবনা থেকে এই এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। দুর্গম এই চরাঞ্চলে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী ও সর্বহারাদের আনাগোনা আছে।
রাখালগাছি এলাকায় রাস্তা নির্মাণ নিয়ে সম্প্রতি পাবনার ঢালার চর এলাকার স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাকে দিনের বেলায় কুপিয়ে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে।
সম্প্রতি অন্তরমোড় খেয়াঘাটে কথা হয় নৌকার মাঝি হাবির মন্ডলের সঙ্গে। তিনি বলেন, এই খেয়াঘাটে ১৪টি নৌকা চলে। পর্যায়ক্রমে প্রতিদিন দুইটি নৌকায় যাত্রী পারাপার হয়। এক সপ্তাহ পর একেকটি নৌকা যাত্রী পারাপারের সুযোগ পায়। একটি নৌকায় চার জন শ্রমিক কাজ করেন। বহিরাগত যাত্রীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে ভাড়া আদায় করা হয়। প্রতিদিন চার-পাঁচ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়। এ ছাড়া বছর শেষে কৃষকরা ধানও দিয়ে থাকেন।
বেলা ৩টার দিকে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় বেশ কিছু মানুষকে অন্তারমোড় খেয়াঘাটে দেখা যায়। সেখানে একাধিক টং দোকান আছে। তবে যাত্রীদের বসার মতো বিশেষ কোনো ব্যবস্থা নেই। রাখালগাছি থেকে নৌকাবোঝাই যাত্রীরা এসে নদীর পাড়ে নামেন। অনেক কৃষক আছেন, যাদের রাখালগাছি-বেতকায় জমি আছে। আবার পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে কারও কারও বাড়ি আছে।
দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, অন্তারমোড়-বেতকা দিয়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ নদী পারাপার হন। রাখালগাছির সঙ্গে পাবনার ঢালারচর রেলস্টেশন আছে। নদী পাড়ি দিয়ে রাখালগাছি পৌঁছেই পাবনা ও রাজশাহী অঞ্চলের মানুষ সহজেই ট্রেনে যাতায়াত করেন। ঢালারচর রেলস্টেশন থেকে রাখালগাছি পর্যন্ত পাকা রাস্তা হয়েছে। ওই রাস্তা থেকে নদীপাড় পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তাটি পাকা হয়ে গেলে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হবে। অন্তারমোড় থেকে বেতকা ঘাট পর্যন্ত নদীর ওপর সেতু করলে রাজবাড়ীর সঙ্গে পাবনা অঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা অনেক সহজ হবে। সরকার কাছে অনুরোধ, রাখালগাছি-বেতকা এলাকায় বিকল্প একটি সড়ক তৈরি করলে জনগণের অনেক সুবিধা হবে।