নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহাসড়কে তিন চাকার যান, বাড়ছে দুর্ঘটনা

প্রশান্তি ডেক্স॥ হাইকোর্টের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ২২ মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন (ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি) নিষিদ্ধ করেছিল সরকার। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলছে তিন চাকার যানবাহন। শুধু যে চলছে তা নয়; মাঝেমধ্যে উল্টোপথে চলছে এসব যান।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার জামালদী, ততৈতলা পাখির মোড়, বালুয়াকান্দি, ভাটেরচর, ভাটেরচর নতুন রাস্তা, আনারপুরা, ভিটিকান্দি, আলীপুরা, ভবেরচর, বাউশিয়া, দড়ি বাউশিয়া, বাউশিয়া পাখির মোড়, ঢাকা-সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা রোড এলাকায় দুই দিক দিয়েই চলছে তিন চাকার যানবাহন। কোনও ধরনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না এসব যানের চালকরা। যত্রতত্র যাত্রী উঠানো-নামানো ও ট্রাফিক আইন অমান্য করে চলছেন তারা। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রাণ হারাচ্ছেন যাত্রী ও সাধারণ মানুষজন।

সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়ার মধ্য বাউশিয়া এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাকে সাইড দিতে গিয়ে একটি মিনিবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে চার যাত্রী আহত হন। এর আগে গত ১১ নভেম্বর মহাসড়কের গজারিয়ার আলীপুরায় বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার তিন যাত্রী গুরুতর আহত হন। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীরা বলছেন, মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ। এরপরও কীভাবে চলাচল করছে তা বুঝতে পারছেন না তারা। কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় মহাসড়কে বেপরোয়া হয়ে উঠছে এসব যান।

এসব যানের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে জানিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বাসচালক জামাল হোসেন বলেন, ‘ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, নছিমন, করিমন ও ভটভটি মহাসড়কে চলাচল করায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মহাসড়কে চলছে এসব যানবাহন। ফলে যানজট সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব যান মহাসড়কে না উঠলে সবাই নিরাপদ থাকবে।’

মহাসড়কে গাড়ি চালানোর কথা স্বীকার করে গজারিয়ার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক মো. সেলিম বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যখন যানবাহন কম থাকে তখন মহাসড়কে উঠি। মাঝেমধ্যে গজারিয়ার জামালদি বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রী নিয়ে মহাসড়কের পাশ দিয়ে বালুয়াকান্দিতে যাই। ভেতরের সড়কে যাত্রী না পেলে মাঝেমধ্যে মহাসড়কের পাশ দিয়ে গেলে যাত্রী পাওয়া যায়।’

অটোরিকশাচালক জাকারিয়া হাবিব বলেন, ‘রায়পুরা থেকে আনারপুড়া ভবেরচর মহাসড়কের পাশ দিয়ে যাত্রী নিয়ে মাঝেমধ্যে চলাচল করি। অনেক যাত্রী কাছাকাছি স্থানে যাতায়াত করেন। তবে মাঝেমধ্যে পুলিশ দেখলে আটক করে। খুব প্রয়োজন না হলে মহাসড়কে যাই না।’

স্থানীয় পিকআপভ্যান চালক মো. আনছার আলী বলেন, ‘ভেতরের সড়ক দিয়ে গেলে অনেক সময় লাগে। তাই যখন মহাসড়ক ফাঁকা থাকে তখন পাশ দিয়ে যাই। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে। এজন্য বিপদে না পড়লে যাই না।’

বিকল্প যানবাহন থাকলে তিন চাকার যানে উঠতাম না উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, ‘আমি জামালদি বাসস্ট্যান্ড এলাকার হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি। বালুয়াকান্দি এলাকায় থাকি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাছাকাছি হওয়ায় গণপরিবহন না থাকায় অটোরিকশায় যাতায়াত করি। বলতে গেলে প্রতিদিনই অটোরিকশার চালকরা মহাসড়কের পাশ দিয়ে যাত্রীদের নিয়ে যান। এজন্য সবসময় একটা আতঙ্কে থাকি। বিকল্প যানবাহন থাকলে তিন চাকার যানে উঠতাম না।’

এ বিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের মুন্সিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম লিটন বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের কোনও ভূমিকা নেই। তাদের কার্যকর ভূমিকা থাকলে এসব যানবাহন মহাসড়কে উঠতে পারতো না। সেইসঙ্গে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটতো না। মাঝেমধ্যে এসব যানবাহন উল্টোপথে চলাচল করে। নিসচা’র আগামী বৈঠকে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। মহাসড়কে যেসব ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্বে রয়েছেন তাদের সঙ্গে কথা বলবো।’

নাগরিক সমন্বয় পরিষদের মুন্সিগঞ্জের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সুজন হায়দার জনি বলেন, ‘মহাসড়কে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে সবার সচেতনতা জরুরি। ট্রাফিক আইন ও রাষ্ট্রের আইন মেনে চলা আরও বেশি জরুরি। আইন অমান্য করার প্রবণতা মহাসড়কে দুর্ঘটনা বাড়িয়ে দিয়েছে। নিষিদ্ধ যানবাহনগুলো আইন অমান্য করে মহাসড়কে চলাচল করায় দুর্ঘটনা ঘটছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো উচিত।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভবেরচর হাইওয়ে পুলিশের ওসি এএস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ। হাইকোর্টের নির্দেশের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। এজন্য আমরা সবসময় তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করি। এরপরও কিছু যানবাহন চলাচল করে। সেগুলো আটক করে মামলা দিচ্ছি। তবে অন্য স্থানের তুলনায় এখানে খুব কম তিন চাকার যান মহাসড়কে চলাচল করে। বিশেষ প্রয়োজনে যেমন যেসব স্থানে বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে সেসব স্থানে গ্রামের লোকজন যাতায়াত করায় মাঝেমধ্যে যাত্রীর জন্য মহাসড়কে চলে তিন চাকার যান। আমাদের চোখে পড়লে ওসব যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.