নতুন তরঙ্গের ব্যবহারে মোবাইল নেটওয়ার্ক কি ভালো হলো?

প্রশান্তি ডেক্স॥ মোবাইল ফোনে কলড্রপ, নেটওয়ার্ক না থাকা, মোবাইল ইন্টারনেটে ধীরগতি, ভিডিও চলার সময় বাফারিং হওয়া- এসব কথা খুবই পরিচিত একটি ঘটনা। কিছুকাল আগেও এসব ছিল রীতিমতো অসহনীয় ও পীড়াদায়ক। সংশ্লিষ্টদের দাবি, মোবাইল নেটওয়ার্কে দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। নেটওয়ার্ক আগের চেয়ে ভালো। এর কারণ হলো— নতুন তরঙ্গ (স্পেকট্রাম) নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে শুরু করেছে।

২০২২ সালের ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত নিলামে দেশের ৪ মোবাইল ফোন অপারেটরই তরঙ্গ কেনে। তরঙ্গ কেনার ফলে গ্রামীণফোনের ১০৭.৪০, রবির ১০৪, বাংলালিংকের ৮০ এবং টেলিটকের ৫৫.২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ হয়। নিলামের আগে গ্রামীণফোনের মোট তরঙ্গ ছিল ৪৭.৪০ মেগাহার্টজ। রবি ও এয়ারটেল একীভূত হওয়ার পর রবির তরঙ্গের পরিমাণ ছিল ৪৪ মেগাহার্টজ। বাংলালিংকের ছিল ৪০ মেগাহার্টজ। আর টেলিটকের হাতে ছিল ২৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ।

নিলাম অনুষ্ঠানে বলা হয়, নতুন তরঙ্গ যুক্ত হলে মোবাইল অপারেটরগুলো আগের তুলনায় গ্রাহককে আরও ভালো সেবা দিতে পারবে। নতুন তরঙ্গ যুক্ত হওয়ার আগে এক মেগাহার্টজ তরঙ্গে (স্পেকট্রাম) গ্রামীণফোন ১৪ লাখ, রবি ১১ লাখ এবং বাংলালিংক প্রায় ৯ লাখ গ্রাহককে সেবা দেয়। নতুন স্পেকট্রাম যুক্ত হওয়ার পরে গ্রামীণফোন ৭ লাখ ৭০ হাজার, রবি ৫ লাখ ২০ হাজার, বাংলালিংক ৪ লাখ ৭০ হাজার এবং টেলিটক ১ লাখ ২০ হাজার গ্রাহককে সেবা দেওয়ার কথা।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মোবাইল নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি হয়েছে। গ্রামীণফোনের সিম বিক্রির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিম বিক্রি করার অনুমতি দেওয়ার আগে আমরা বিটিআরসির (টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা) কাছে মোবাইল অপারেটরগুলোর রিপোর্ট চাই। গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের যে রিপোর্ট আমাদের দেওয়া হয়েছে সেগুলোতে নেটওয়ার্কের দৃশ্যমান উন্নতি আমরা দেখতে পেয়েছি। তাদের সেবার মানের উন্নয়ন হয়েছে কিনা পরীক্ষা করে দেখেছি। আমাদের কনসার্ন ছিল গ্রামীণফোনের কোয়ালিটি অব সার্ভিস নিয়ে। কারণ তাদের গ্রাহক বেশি। ফলে সেবার মান ভালো না করে ফের সিম বিক্রির অনুমতি দিলে গ্রাহকের ভোগান্তি হবে। তারপরও অনুমতি দেওয়ার বেলায় আমরা শর্ত জুড়ে দিয়েছি। তাদের সেসব শর্ত মানতে হবে। আমরা দেখেছি ২০১৮ সালে আমরা যে স্পেকট্রাম তাদের দিয়েছি সেগুলো তারা রোল-আউট  করেছে পুরোপুরি। ২০২২ সালে যা দিয়েছি সেই স্পেকট্রামের ব্যবহার তারা শুরু করেছে।

নতুন স্পেকট্রাম ব্যবহারে অন্য অপারেটরগুলোর সেবার মান বেড়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, অন্যদেরটা আমরা পরীক্ষা করিনি। করলে জানাতে পারবো। তিনি বলেন, আমরা প্রধানত যেসব জায়গায় গুরুত্ব দেই— যেমন নেটওয়ার্ক থাকা। নেটওয়ার্ক আছে কিনা এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা অপারেটরগুলোকে বলেছি, টাওয়ারে ফাইবার ব্যবহার করতে। কারণ টাওয়ার টু টাওয়ার ফাইবার ব্যবহার না করলে নেটওয়ার্কের মান ভালো করা সম্ভব নয়। আমরা বলে দিয়েছি তারা (অপারেটররা) যেন টাওয়ারে ফাইবার ব্যবহার করে।

এ বিষয়ে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশন খায়রুল বাসার বলেন, গ্রামীণফোন দেশের প্রথম অপারেটর যারা ২১০০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম নেটওয়ার্কে ডেপ্লয় করেছে এবং ২৬০০ মেগাহার্টজে নতুন স্পেকট্রাম গত ১ নভেম্বর থেকে নেটওয়ার্কে যুক্ত করেছে। তিনি আর বলেন, আমাদের নেটওয়ার্ক টাওয়ারের ৩২ শতাংশ ফাইবার দিয়ে সংযুক্ত যা গত বছরের জুনের আগে ছিল ২২ শতাংশ। গত বছরে আমরা নতুন ১ হাজার ৮৩১টি সাইট (মোবাইল টাওয়ার) স্থাপন করেছি।

ক্রয়কৃত নতুন তরঙ্গ ব্যবহারের প্রক্রিয়া আমরা ইতিমধ্যে শুরু করেছি যা আমাদের নেটওয়ার্ক ও গ্রাহক সেবার সার্বিক মান উন্নত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে মন্তব্য করেছেন, রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম। তিনি বলেন, গ্রাহকদের সর্বোচ্চ মানের সেবা প্রদানের উদ্দেশে গত বছর অনুষ্ঠিত তরঙ্গ নিলামে রবি ২৬০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে সর্বোচ্চ ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ক্রয় করেছে। নতুন তরঙ্গ নেটওয়ার্কে যুক্ত করায় বাংলালিংকের ইন্টারনেটের গতি আগের চেয়ে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলালিংকের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি অংকিত সুরেকা। এর ফলে গ্রাহকরা আরও উন্নত ডিজিটাল সেবা পাচ্ছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন,দেশের প্রথম অপারেটর হিসেবে বাংলালিংক গত বছর নেটওয়ার্কে নতুন স্পেকট্রাম যুক্ত করেছে। ওকলা টানা তৃতীয় বছরের মতো বাংলালিংককে দেশের দ্রুততম নেটওয়ার্কের স্বীকৃতি দিয়েছে। নতুন স্পেকট্রাম ব্যবহারের পাশাপাশি আমাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কাজও অব্যাহত রয়েছে। গত বছর প্রায় ৪ হাজার নতুন বিটিএস (টাওয়ার)স্থাপন করায় আমাদের মোট বিটিএস’র সংখ্যা এখন ১৪ হাজার ৫০০-তে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.