প্রশান্তি ডেক্স॥ শুরু হয়েছে ভাষার মাস, মহান ভাষা আন্দোলনের মাস ফেব্রুয়ারি। মাসটির শুরুর দিনেই ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, চেম্বার জজ আদালত এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা। এদিন অন্তত ১৪৮টি রায় ও আদেশ বাংলায় দিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে দীর্ঘদিন ধরেই বাংলা এবং ইংরেজিতে রায় ও আদেশ হয়ে আসছিল। তবে একদিনে এত রায় বা আদেশের ঘটনা এটিই প্রথম, যা কিনা দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে নজির স্থাপন করলো।
১ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ১৪৫টি আদেশ বাংলায় দিয়েছেন। এর পাশাপাশি জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্বে থাকাবস্থায় এখন থেকে চেম্বার আদালতের সব আদেশ বাংলায় দিয়ে যাবেন।
এদিকে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের একটি রায় এবং বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি একেএম রবিউল হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি আদেশ বাংলায় দিয়েছেন।
এছাড়াও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ একটা ফৌজদারি রিভিশন মামলায় রুল চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে বাংলায় রায় ও আদেশ দিয়েছেন। এসময় বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘১৩ বছরের বিচারিক জীবনে প্রথম বাংলায় রায় দিলাম এবং বাংলায় এই রায় দিতে পেরে গর্ববোধ হচ্ছে।’ তিনি আরও জানিয়ে দেন, ভাষার মাসে বাংলায় আরও রায় দেবো।
অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত এই রিট মামলাটির রায় দেওয়ার আগে বিচারপতি নাইমা হায়দার বলেন, আজ ১ ফেব্রুয়ারি। ভাষার মাস আজ থেকে শুরু। ভাষা শহীদের আত্মার প্রতি সম্মান জানিয়ে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রতি সম্মান জানিয়ে আজকের প্রথম রায়টি বাংলায় ঘোষণা করছি। বিশ্বের সব বাংলা ভাষাভাষীর প্রতি সম্মান জানিয়ে বাংলায় এই রায় ঘোষণা করছি।
আদালতগুলোর এমন উদ্যোগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। বিচারপ্রার্থী জনগণ মাতৃভাষায় আদেশ-রায় পেলে বেশি উপকৃত হবেন। তাদের কথা মাথায় রেখেই এমন প্রচেষ্টা। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। তাই আদালতগুলোর এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক আব্দুন নুর দুলাল বলেন, আদালতের এমন উদ্যোগ অনেক বড় ইতিবাচক দিক। আমরাই একমাত্র জাতি, যারা ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছি। আমাদের সব অর্জন বাংলাকেই ঘিরে। সুতরাং বিচার বিভাগের জন্য এটি বিশাল এক অর্জন হয়ে থাকবে।
একই দিন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটের ‘বাংলা সংস্করণের’ উদ্বোধন করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানিয়েছে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট একটি তথ্যবহুল, জনমুখী ও জনবান্ধব ওয়েব পোর্টাল। দেশের অপামর জনসাধারণ, বিচারপ্রার্থী, আইনজীবী, আইনের শিক্ষার্থী, গবেষকসহ দেশ ও দেশের বাইরের যেকোনও ব্যক্তি এই ওয়েবসাইট থেকে সুপ্রিম কোর্টের মামলা সংক্রান্ত ও অন্যান্য তথ্য পেতে পারেন।
উচ্চ আদালতে নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলায় রায় ও আদেশ দেওয়া শুরু হয়। প্রয়াত বিচারপতি এ আর এম আমীরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলায় আদেশ দেওয়া শুরু করেন। এরপর সাবেক বিচারপতিদের মধ্যে বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, বিচারপতি হামিদুল হক, বিচারপতি আবদুল কুদ্দুছ, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী বাংলায় বেশ কয়েকটি রায় দেন।
বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম হাইকোর্টে থাকাকালীন বেশ কয়েকটি মামলার রায় বাংলায় দিয়েছেন।
তবে নিয়োগ পাওয়ার পর ২০১০ সালের এপ্রিল থেকে বাংলায় রায় দিয়ে যাচ্ছেন হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন। এছাড়াও বর্তমানে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালও বাংলায় রায় লেখেন।