বাআ\ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের যার ফলে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। পরিবহন খরচ বেড়েছে, পণ্যমূল্য বেড়েছে। প্রতিটি জিনিসের মূল্য ধরাছোঁয়ার বাইরে। অনেক উন্নত দেশ হিমশিম খাচ্ছে, আমাদের দেশে এখনো অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছি।”
গত মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হামিদ সেনানিবাসের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি সবার কাছে আহ্বান করেছি যেহেতু খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়ে গেছে এক ইঞ্চি জায়গাও আমরা অনাবাদি রাখবো না। সব অনাবাদি জমি আমরা আবাদের আওতায় আনবো।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগামীতে যে নির্বাচন হবে এই বছরের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, সেই নির্বাচনেও আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন, সে আবেদনই আপনাদের কাছে জানাই।” প্রধানমন্ত্রী এ সময় জনগণের ওয়াদা চাইলে জনতা উচ্চকন্ঠে দুই হাত তুলে সমর্থন ব্যক্ত করে।
তিনি বলেন, ‘আমার কোন চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। মা, বাবা, ভাই সব হারিয়েছি। আমি নিঃস্ব, রিক্ত। এদেশের মানুষকে আমার বাবা ভালোবেসেছিলেন, তিনি তাঁর জীবন দিয়ে গেছেন। জীবন দিয়ে গেছেন আমার মা, আমার ভাইয়েরা। আজকে আমি আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তন করবার জন্য। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখন ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষের কল্যাণ হয়। মানুষ খেয়ে পরে ভালো থাকে। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। ১৪ বছরে আজকের বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে, উন্নয়নের রোল মডেল। এই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এই মিঠামইন, ইটনা, অষ্টগ্রামসহ কিশোরগঞ্জের প্রত্যেকটি সিটে গত নির্বাচনে এবং পরপর এই তিন নির্বাচনে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন। তাই আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই। এই বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা, সেই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েই এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। এই নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই আজকে কিশোরগঞ্জ আর অবহেলিত নেই। উন্নত একটি জেলায় উন্নীত হয়েছে, প্রতিটি উপজেলা উন্নত হচ্ছে এবং নৌকায় ভোট দিয়েছে বলেই এদেশের মানুষ শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে এবং আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। মুক্তিযুদ্ধকালিন মুজিবনগর সরকারের উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান এবং বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ কিশোরগঞ্জের উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জই সবসময় রাষ্ট্রের প্রধান হয়ে সারা বাংলাদেশ পরিচালনা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিলেই যে দেশের উন্নতি হয় সেটা আজকে সর্বজন বিদীত।
মঞ্চে উপস্থিত রাষ্ট্রপতির ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিককে দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, গত নির্বাচনে রাষ্ট্রপতির ছেলেকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। আপনাদের প্রতি কতৃজ্ঞতা জানাই। আগামীতেও এক মাত্র নৌকা মার্কা সরকারে আসলে আপনাদের উন্নতি হবে, দেশের উন্নতি হবে। এই হাওড় অঞ্চলের উন্নয়নে যে সার্বিক কর্মসূচি আমরা বাস্তবায়ন করছি সেগুলো বাস্তবায়িত হবে। তিনি বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদেরকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। তাই আপনাদের পাশে আমরা সব সময় আছি।
আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে অন্য সরকারগুলোর কাজের তুলনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সব সরকার লুটপাট, অর্থপাচার, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা করে, আর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়। মানুষের ওপর অত্যাচার আর মানুষকে শোষণ করা ছাড়া আর কিছু তারা দিতে পারে নাই, পারবেও না। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরশাসক বিএনপি গঠন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) জনগণকে নির্যাতন ও লুটপাট ছাড়া কিছুই দিতে পারে না। কেননা যাদের হাতে এই দলটি সৃষ্টি, তারা কখনো জনগণের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় যায় না, ক্ষমতা দখর করে। যে ক্ষমতা দখলকে উচ্চ আদালতও অবৈধ ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, তাই যখনই এরা ক্ষমতায় এসেছে, এদেশের মানুষের সম্পদ লুট করেছে, বিদেশে পাচার করে এখন আরাম আয়েশে দিন কাটায়।
মিঠামইন উপজেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, দপ্তর সম্পাদক বিপব বড়ুয়া, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজাল প্রমুখ।
দুপুর ৩টায় জনসভা মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী। মুহুমুহু করতালি ও শ্লোগানে তাঁকে জনতা অভ্যর্থনা জানায়। তিনিও হাত নেড়ে এর উত্তর দেন। এই জনসভাকে ঘিরে সকাল থেকেই দলে দলে হাওরের মানুষ হেলিপ্যাড মাঠে আসতে থাকে। দুপুরের আগেই জনসভাস্থলে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। এসময় ে¯্লাগানে ে¯্লাগানে জনসভাস্থল মুখর হয়ে ওঠে।