প্রশান্তি আন্তর্জাাতিক ডেক্স ॥ ষোলোকলা পূর্ণ হলো মাস মনুমেন্টালে আগত প্রায় লাখখানেক দর্শকের। লিওনেল মেসির গোল ও আর্জেন্টিনার জয় দেখতে এসেছিলেন তারা। তাদের হতাশ হতে হয়নি। হয়তো ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে গিয়েছিল। দুইবার মেসির ফ্রি কিক পোস্টে আঘাত করলে মাথায় হাত পড়েছিল তাদের। কম শক্তির পানামার বিপক্ষে গোল পেতেও অপেক্ষা করতে হয়েছে সোয়া এক ঘণ্টার বেশি। শেষ পর্যন্ত ফ্রি কিক থেকেই মেসি গোল করেছেন। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে ২-০ গোলে জিতেছে আর্জেন্টিনা।
গত ডিসেম্বরে কাতারে ফ্রান্সকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রথমবার একসঙ্গে মাঠে আর্জেন্টিনা। ম্যাচ শুরুর আগে দর্শকদের অভিবাদনে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি মেসি। চোখ অশ্রুতে ছলছল করছিল, মুখে ছিল তৃপ্তির হাসি। তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ী বীরদের বরণ করে নিতে কার্পণ্য ছিল না আর্জেন্টাইন দর্শকদের। বুয়েন্স আয়ার্স ছিল যেন উৎসবের নগরী, সেই উৎসব আরও বেড়ে গেলো দারুণ জয়ে।
আর্জেন্টিনা পানামার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের প্রথমার্ধ শেষ করে একরাশ হতাশা নিয়ে। ১৭ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে গোলের সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। বাঁ পায়ের জাদুকরী শট। পানামার রক্ষণ দেয়াল নাগাল পায়নি। বল ভেসে একটু বেঁকে ছুটলো গোলমুখে। কিন্তু ডানপাশের গোলপোস্ট বাধা হয়ে দাঁড়ালো। বল আঘাত করলো গোলপোস্টে, হতাশ হলেন মেসি।
প্রথম ৪৫ মিনিটে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে আর্জেন্টিনা। বল দখলে রেখেছিল ৭৪ শতাংশ, শট নিয়েছে ১০টি, যার মধ্যে দুটি ছিল লক্ষ্যে। পানামাকে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের আক্রমণ সামলানোতে।
তৃতীয় মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মেসির বাঁ পায়ের শট রুখে দেন পানামা গোলকিপার। ৯ মিনিটে ফের আর্জেন্টাইন অধিনায়ককে ব্লক করেন প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়। মেসির ওই ফ্রি কিক লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার পর ২৯ মিনিটে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট অনেক উঁচু দিয়ে চলে যায়।
বিরতির দুই মিনিট আগে মেসির শট ব্লকড হয়। কিছুক্ষণ পরই গোলবারের পাশ দিয়ে বল মারেন ৩৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। ৪৩ মিনিটে ম্যাক অ্যালিস্টারের পাসে বক্সের বাইরে থেকে এনজো ফার্নান্দেজ লম্বা শট নেন, তাকে রুখে দেন পানামা গোলকিপার হোসে কার্লোস গুয়েরা।
দ্বিতীয়ার্ধে তিনটি পরিবর্তন আনেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। জুলিয়ান আলভারেজ, নিকোলাস ওতামেন্দি ও অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের বদলে মাঠে নামান লাউতারো মার্তিনেজ, লিসান্দ্রো মার্তিনেজ ও থিয়াগো আলমাদাকে। দুই মিনিট পর মেসির বাড়ানো বল লক্ষ্যে নিতে চেষ্টা করেন আলমাদা। তার ডান পায়ের শট ছিল উঁচুতে, লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৫৫ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে মেসির শট উঁচুতে লাফিয়ে ঠেকান পানামা গোলকিপার।
৬৪ মিনিটে মেসির বাঁ পায়ের শট বাঁদিক দিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ৭৩ মিনিটে তার হেড উঁচু দিয়ে মাঠের বাইরে যায়। এর পাঁচ মিনিট পর সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী ফ্রি কিক বাঁ পোস্টে আঘাত করে। ৭৮ মিনিটে সেট পিস থেকে তার নেওয়া শট ফিরে এলে বক্সের মধ্যে লিয়ান্দ্রো পারেদেস বলে পা লাগাতে পারেননি, বাঁদিক থেকে এগিয়ে এসে আড়াআড়ি শটে গোল করেন আলমাদা।
তিনবার ফ্রি কিক থেকে ব্যর্থ হওয়ার পর ৮৯ মিনিটে সফল হন মেসি। প্রথমবারের মতো একই জায়গা থেকে এবার শট নেন। এবার আর কোনও বাধা মানেনি বল। ডান দিক দিয়ে গোলকিপারের বাড়ানো হাতের উপর দিয়ে জাল কাঁপে। এরই সঙ্গে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে ৮০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন ৩৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড। আর্জেন্টিনার হয়ে এটি ছিল তার ৯৯তম গোল। ক্লাবে তার গোল ৭০১টি। বার্সেলোনার হয়ে ৬৭২ গোল করেছেন তিনি, পিএসজির জার্সিতে ২৯টি। ম্যাচ হারলেও পানামার খেলোয়াড়রা মেসির সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ নষ্ট করেননি। মাঠেই তারা একের পর এক ছবি তুলে নেন। মেসিও ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত। কাউকে ফিরিয়ে দেননি। হতাশা নিয়ে ফেরাননি ঘরের দর্শকদেরও।