পবিত্র রমজান মাসও জনগণের দুর্ভোগের প্রতি বিএনপির কোন অনুভূতি নেই : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাআ ॥ রোজার মাসে আন্দোলনের ডাক দেওয়ায় বিএনপির সমালোচনা করে অন্তত এই মাসে মানুষকে দুর্ভোগে না ফেলার আহ্বান রেখেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “তারা (বিএনপি) এই রমজান মাসেও আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। অন্তত এই রমজান মাসে তো জনগণকে আন্দোলন থেকে নিস্তার দেন।“

বাসস জানায়, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গত সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন সরকারপ্রধান। সরকার ‘হটানোর’ ১০ দফা দাবি আদায়ে গত সপ্তাহে মহানগর থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত ‘অবস্থান-গণসংযোগ ও মতবিনিময়’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বিএনপি। রোজায় এ কর্মসূচির বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাষ্য ছিল, “রমজান মাসে আমাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়ার কথা নয়। কিন্তু আজকে দেশের যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, আমরা বাধ্য হয়েছি এই রমজান মাসেও মানুষকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ অন্যান্য দাবি-দাওয়া আদায়ে আন্দোলন-কর্মসূচি দিতে।”

এর আগেও রোজার মধ্যে বিএনপি আন্দোলন করেছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “রমজান মাসে বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে খালেদা জিয়া ১৭ শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। যারা রমজান মাসে মানুষকে গুলি করে হত্যা করে, তারা রমজান মাসের প্রতি সম্মান দেখাবে কি করে? তাইতো তারা এই মাসে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। পবিত্র রমজান মাস ও মানুষের দুর্ভোগের প্রতি তাদের কোনো অনুভূতিই নেই।” দেশের মানুষকে ‘উন্নয়নের বিরুদ্ধে’ যে কোনো ধরনের আন্দোলনের বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ এবার কোনো ইফতার পার্টির আয়োজন না করে দুঃস্থদের মাঝে ওই অর্থ ও খাবার বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান দলের সভাপতি। তিনি বলেন, সরকারের প্রচেষ্টা আর গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকায় ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ১৪ বছরে দেশে ‘ব্যাপক’ উন্নয়ন হয়েছে। দেশের উন্নয়নে বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের প্রতি সম্মান দেখাতে ‘বাধ্য’ হলেও বিএনপি এবং ‘বুদ্ধিজীবীদের’ সেটি চোখে পড়ে না বলেও মন্তব্য করে শেখ হাসিনা।

“বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বর্ণনা করতে বাধ্য হয়েছে। তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশে কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না বলার পাশাপাশি দেশে-বিদেশে (সরকারের) বদনাম করতে ব্যস্ত। কিছু তথাকথিত স্থানীয় বুদ্ধিজীবীর পাশাপাশি অনেক আন্তর্জাতিক শক্তি রয়েছে, যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন অব্যহত রাখতে চায় না।”

পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসার আগের ২১ বছর এবং ২০০১ সালে নির্বাচনের পর বিএনপির ক্ষমতায় থাকার পাঁচ বছর এবং পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদসহ মোট ২৯ বছরকে বাংলাদেশের জন্য একটি ‘কালো অধ্যায়’ হিসেবে বর্ণনা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশের মানুষের জন্য কালো মেঘ দূর করে একটি নতুন সূর্যের আলো নিয়ে এসেছি।”

বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী আওয়ামী লীগ ও সরকারের বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার চালাচ্ছে’ অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, “কোনও মিথ্যার দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন না।”

প্রধানমন্ত্রী অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, বিদ্যুৎসহ নানা খাত এবং পদ্মাসেতু, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পে সরকারের অবদানের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “ বিএনপি নেতাদের তাদের আমলে এমন একটি উন্নয়ন দেখাতে বলেন।”

আওয়ামী লীগ সভাপতি তার দলের নেতাকর্মীদের জনগণের নির্ভরতা ও আস্থা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান এমপি, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বীর বিক্রম, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক, রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, এমপি, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. পারভীন জামান কল্পনা ও অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম এমপি, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে হুমায়ুন কবির ও এসএম মান্নান কচি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সঞ্চালনা করেন আবদুস সোবহান গোলাপ এবং সৈয়দ আবদুল আউয়াল শামীম।

Leave a Reply

Your email address will not be published.