বি এন পির নির্বাচনি কৌশল নিয়ে ধোঁয়াশায় আওয়ামীলীগ

বাআ ॥ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করলেও বিদ্যমান ব্যবস্থায় ভোট হলে তাতে অংশ না নেওয়ার কথা বলছে বিএনপি। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক শিবিরে বিপরীতমুখী এমন অবস্থান নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। বিএনপির নির্বাচনি কৌশলকে ‘রহস্যজনক’ হিসেবে দেখছে আওয়ামী লীগও। এ নিয়ে ধোঁয়াশায় থাকা সরকারি দলের নেতারা বলছেন এবার ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে বিএনপি, যা এখনও স্পষ্ট নয়।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম ও সম্পাদক মন্ডলীর কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল ছিল ভিন্নতর। দুটি নির্বাচনকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে প্রথমটি বয়কট এবং দ্বিতীয়টিতে নামকাওয়াস্তে অংশ নিয়েছিল তারা। আগামী নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষদিকে বা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে আগের দুই নির্বাচন থেকে ভিন্ন ও নতুন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। সেই কৌশল কী বা কেমন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। তারা বলছেন, তত্ত্বাবধায়ক বা নির্দলীয় সরকারের অধীন ছাড়া নির্বাচন হলে, তাতে অংশ না নিয়ে ভোট প্রতিহত করার হুমকি দিচ্ছে বিএনপি। আন্দোলনের পাশাপাশি বিদেশিদের প্রভাবিত করে সরকারের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা করছে তারা। এর মাধ্যমে তারা দেশে আবারও এক-এগারোর মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করছে। বিএনপির রাজনৈতিক আচরণ বা নির্বাচনি তৎপরতা রহস্যে ঘেরা যা বিভিন্ন মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা চলছে। হয়তো এপ্রিলের মধ্যে বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে।

বিএনপির এই কৌশল নিয়ে গত ২৫ মার্চ  প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের  বৈঠকেও আলোচনা হয়েছে। সেখানে দলটির সভাপতিমন্ডলীর একজন সদস্য বলেন, বিএনপি মুখে যাই বলুক না কেন, তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। এর জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে নাও আসতে পারে। এ নিয়ে সন্দেহের কারণ আছে।’

‘বিএনপির আচরণ রহস্যজনক’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তাদের কৌশল কী, তা বোঝা মুশকিল। এবার তাদের কৌশল ভিন্ন। তবে বিএনপির সেই ভিন্ন কৌশল কী, সেটি স্পষ্ট করেননি আওয়ামী লীগ প্রধান। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রভাবশালী নেতা বলেন, বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির নির্বাচনি কৌশল ভিন্ন হবে, এটাই স্বাভাবিক। কোন কৌশল নিয়ে এবার তারা এগোচ্ছে, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। তবে এ নির্বাচনে তারা ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করবে, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।

ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে আসে কিনা, তা নিয়ে আমাদের নেত্রী বৈঠকে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তারা বিদেশি ও এনজিওসহ অন্যদের সহায়তা নিয়ে ভিন্ন পথে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু তাদের মনে রাখা উচিত অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষমতায় যেতে হলে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমেই আসতে হবে।’

কাজী জাফরুল্লাহর মতে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই নির্বাচনে বিএনপিও শেষ পর্যন্ত আসবে। ভোটে না আসার কথা বলে তারা মূলত কনসেশন (ছাড়) নিতে চাইছে। সরকারের কাছ থেকে আরও কনসেশন (ছাড়) নিতে তারা এই কৌশল নিয়েছে। তবে নির্বাচনে না এলে বিএনপিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কোনও কৌশল কাজে আসবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের একজন সদস্য বলেন, আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এবার ক্ষমতায় যেতে বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছে। তাদের কাছে আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। ফলে আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সবাই। কিন্তু বিএনপি সংলাপেও বসতে চাইছে না। সবশেষ নির্বাচন কমিশনের আলোচনার প্রস্তাবও নাকচ করে দিয়েছে তারা। তাতে বোঝা যায়, গোপন কোনও পরিকল্পনা বা ভিন্ন কোনও কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে তারা।

তার মতে, রমজানেও আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। ঈদের পর দেশে তারা নতুন করে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে। দেশি-বিদেশি শক্তির সাহায্যে দেশকে অস্থিতিশীল করে তারা নির্বাচনি প্রক্রিয়া ভন্ডুল করার চক্রান্ত করছে। এর মাধ্যমে অস্বাভাবিক একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করে ক্ষমতায় যাওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি। তবে তাদের সেই অপচেষ্টা নস্যাৎ করে যেকোনও মূল্যে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘বিএনপির অতীত কর্মকান্ড থেকে দেখা যায়, তারা সবসময় বিরাজনীতিকরণ, নৈরাজ্য সৃষ্টি এবং অবৈধ পথে ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে। তাদের এই অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী পথে হাঁটার যে অশুভ লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, তাতে জনগণ সায় দেবে বলে মনে হয় না।’

তিনি বলেন, ‘সরকার এবং আওয়ামী লীগ মনে করে, জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। এতে দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অংশ নেওয়া উচিত। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক মজবুত হয়। কিন্তু বিএনপি জনগণের ওপর আস্থা রাখতে না পারায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছে। তারা এখন ভিন্ন কৌশলে ক্ষমতায় যাওয়ার পথ খুঁজছে। তবে তা সফল হবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.