ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় টি. আলী ডিগ্রী কলেজ ও কুটি মিয়া আবদুল্লাহ ওয়াজেদ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগে এলাকার সাংসদ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক’র নির্দেশনার প্রায় আট মাস পেরুলেও এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি কলেজ দুটির অধ্যক্ষ নিয়োগ প্রক্রিয়া। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলার দুটি কলেজে দু’জন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রয়েছেন বহাল তবিয়তে। ফলে ওই দুটি কলেজের শিক্ষার মান নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবক মহল। কলেজ দুটির নিয়মিত অধ্যক্ষ না থাকায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আনুগত্য শিক্ষক কর্মচারীরা খেয়াল খুশি মতো কলেজে আসা যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, কুটি মিয়া আবদুল্লাহ ওয়াজেদ মহিলা কলেজ ও কসবা টি. আলী কলেজ প্রায় এক যুগ ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে। এলাকার সাংসদ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক কলেজের তৎকালীন সভাপতি ইউএনও কে দ্রুত অধ্যক্ষ নিয়োগের নির্দেশনা দিলেও রহস্যজনক কারনে অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া নেয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপাধ্যক্ষ নিয়োগে ১২ বছরের অভিজ্ঞতার শর্ত থাকলেও ২০০২ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান অমান্য করে অভিজ্ঞতা ছাড়াই টি. আলী কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে অবৈধভাবে নিয়োগ পান আবুল কালাম আজাদ। ২০১০ সালে অবৈধভাবে নিয়োগের কারনে উপাধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। ২০১২ সালে বিভিন্নভাবে তদবীর করে উপাধ্যক্ষ পদে তিনি আবার পূনর্বহাল হন। পরে ২০১৮ সালে টি.আলী কলেজের অধ্যক্ষ তোফাজ্জল হোসেন অবসরে গেলে জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পান মোঃ হুমায়ুন কবির।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ না পেয়ে উপাধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ ক্ষিপ্ত হয়ে কুটচাল করে তাঁর আনুগত শিক্ষক ও ছাত্রদের নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবিরকে অধ্যক্ষের কক্ষে রেখে বাহির দিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ রয়েছে। কয়েক ঘন্টা পর পুলিশ, কলেজের অন্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাঁকে তালা ভেঙ্গে উদ্ধার করেন। এরপর থেকে আবুল কালাম আজাদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম লংগন করে ও তথ্য গোপন রেখে এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদটি ধরে রেখেছেন। ফলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের অনুসারী অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী নিয়মিত কলেজে আসেন না। তারা কলেজ ফাঁকি দিযে অন্যান্য পেশায় ও ব্যবসা-বানিজ্যে সময় কাটানোর অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে কুটি মিয়া আবদুল্লাহ ওয়াজেদ মহিলা কলেজটিও একযুগ ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে চলছে। ২০১১ থেকে ২০১৬ ও ২০১৭ সালে অধ্যক্ষ নিয়োগের চেষ্টা করা হলেও রহস্যজনক কারনে অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। জেলায় প্রথম প্রতিষ্ঠিত এই মহিলা কলেজটির শিক্ষার মান নিয়ে অভিভাবক ও সচেতন মহল উদ্বিগ্ন।
টি. আলী কলেজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কলেজের অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে নিয়োগ বিষয়ে তিনি কোনো বিজ্ঞপ্তি দেননি।
অপরদিকে কুটি মিয়া আবুদল্লা ওয়াজেদ মহিলা কলেজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুলতান কবির জানান, বিগত সময়ে কমিটি না থাকায় অধ্যক্ষ নিয়োগ সম্ভব হয়নি। বর্তমানে নতুন ব্যবস্থাপনা কমিটি করা হয়েছে। কমিটির পরবর্তী মিটিংয়ে এজেন্ডা দিয়ে অধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান।
কলেজ দুটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আমিমুল এহসান খান জানান, আমি নতুন এসেছি। এ বিষয়ে কিছুই আমার জানা নেই। আইনমন্ত্রী মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গতকাল বুধবার শিক্ষামন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, বেসরকারী মাধ্যমিক-১ শাখা’র উপসচিব মোঃ মিজানুর রহমান’র সাথে টেলিফোন ৯৫৪৫০৩২ নাম্বারে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
পরে গতকাল বুধবার দুপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) ফাহমিদা সুলতানা’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, কলেজ দুটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তথ্য গোপন রেখে দীর্ঘদিন যাবত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে অচিরেই তথ্য গোপন রেখে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করা বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে তিনি জানান।