দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশকে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে

প্রশান্তি অর্থনীতি ডেক্স ॥ বড় প্রকল্পের জন্য অর্থায়নে আগামী পাঁচ বছরে অল্প সুদে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া। বর্তমান বিনিময় হার (১ ডলারে ১০৫ টাকা) অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

গত বৃহস্পতিবার (৪ মে) দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচনে এক অনুষ্ঠানে দেশটির সঙ্গে ‘ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সই করেছে বাংলাদেশ। এদিন একই অনুষ্ঠানে মেট্রোরেলের নতুন একটি রুট এবং আরও দুই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ১৪ কোটি ডলার দিতে পৃথক চুক্তি সই হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।

৩০০ কোটি ডলার ঋণের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্টে সই করেন বাংলাদেশের পক্ষে ইআরডি সচিব শরীফা খান এবং কোরিয়ার পক্ষে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রথম ভাইস মিনিস্টার কিসুন ব্যাং। তারা দুই দেশের পক্ষে মেট্রোরেলের প্রকল্পে অর্থায়নের সমঝোতা চুক্তিতেও (এমওইউ) সই করেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড (ইডিসিএফ) তহবিল থেকে ২০২৩ থেকে ২০২৭ সাল মেয়াদে এই ঋণ ছাড় করা হবে। কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) অর্থায়নে সর্বোচ্চ মাত্র ০.৫ শতাংশ সুদের তিন বিলিয়ন ডলারের ঋণ ১৫ বছরের রেয়াতকালসহ ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। তবে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুদের হার সর্বোচ্চ ১ শতাংশ এবং ৭ বছরের রেয়াতকালসহ ২৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে।

ইআরডি জানিয়েছে, এদিন মেট্রোরেলের কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত নতুন একটি রুটে ঢাকা ম্যাস র‍্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এমআরটি-৪ বাস্তবায়নে কোরিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এমওইউ সই হয়েছে। ইডিসিএফ-এর পাশাপাশি ইডিপিএফ থেকে এ প্রকল্পে যৌথভাবে অর্থায়ন করা হবে, যা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের তত্ত্বাবধানে ডিএমটিসিএল বাস্তবায়ন করবে।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা ডিএমটিসিএলের তথ্য অনুযায়ী, এমআরটি লাইন-৪ প্রকল্পটির আওতায় ঢাকার কমলাপুর থেকে মদনপুর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। রুটটি কমলাপুর থেকে শুরু হয়ে সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া-সাইনবোর্ড-চট্টগ্রাম রোড দিয়ে নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে গিয়ে শেষ হবে।

এর প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। ইআরডি জানায়, আরও দুটি প্রকল্পের অর্থায়নে চুক্তি হয়েছে। এরমধ্যে রেলওয়ের ‘রিপ্লেসমেন্ট অ্যান্ড মডার্নাইজেশন অব সিগন্যালিং অ্যান্ড ইন্টারলকিং সিস্টেম অব স্টেশনস অব ঈশ্বরদী-পার্বতীপুর সেকশন’ প্রকল্পের জন্য কোরিয়া দেবে ৬ কোটি ১০ লাখ ডলার। এছাড়া বিআরটিসির জন্য একতলা সিএনজি এসি বাস কেনার প্রকল্পে দেবে ৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলার।

এ দুই প্রকল্পের জন্য ঋণের সুদহার হবে মাত্র ০.১ শতাংশ, যা সাড়ে ১৫ বছরের রেয়াতকালসহ ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এ দুই চুক্তিতে সই করেন ইআরডির অতিরিক্ত সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং কোরিয়া এক্সিম ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট হি সাং ইয়ুন।

দক্ষিণ কোরিয়া তাদের এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে নমনীয় ঋণ দিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে ৬৬ কোটি ৪৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার ঋণে ১৭টি প্রকল্প শেষ হয়েছে। এছাড়া ৬১ কোটি ৬২ লাখ ৮০ হাজার ডলারের সাতটি প্রকল্প বর্তমানে চলমান রয়েছে। দেশটি এ পর্যন্ত বাংলাদেশকে প্রায় ১৪৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার নমনীয় ঋণ দিয়েছে, যা উন্নয়ন অংশীদার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.