প্রশান্তি ডেক্স ॥ দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ বাহিনী। আইনি যেকোনও সমস্যা, সংকট বা বিপদে নাগরিকদের প্রথম ভরসা বাংলাদেশ পুলিশ। নাগরিকদের নিরাপত্তায় শহর থেকে গ্রামে সবখানে দিনরাত দায়িত্ব পালন করে চলেছেন পুলিশ সদস্যরা। ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে, পুলিশ আছে জনতার পাশে’ এই ে¯্লাগান নিয়ে নানা ধরনের সেবা দিচ্ছে বাহিনীটি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশে সৃষ্টি করা হয়েছে নানা ধরনের ইউনিট। তবে যানবাহন, স্বাস্থ্য, জনবল ও লজিস্টিকসহ নানা সংকটে জর্জরিত বিশাল এই বাহিনী। সেসব সংকট নিয়েই আজকের আমাদের এই সিরিজ প্রতিবেদন ‘পুলিশের কষ্ট’।
রাজধানীর বিভিন্ন অফিসপাড়া, শপিং মল কিংবা বাসা-বাড়িতে নেই পর্যাপ্ত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা। ফলে দীর্ঘ সময় পাশের সড়কেই রাখা হচ্ছে গাড়ি। এতে সড়কে তৈরি হচ্ছে বাড়তি চাপ, সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে পার্কিং-জনিত সমস্যা সমাধান রাতারাতি সম্ভব নয়। এই সমস্যা দূর করতে হলে আধুনিক ব্যবস্থাপনার দিকে যেতে হবে, তৈরি করতে হবে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং।
ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকা শহরে প্রায় আড়াই কোটির মতো মানুষ বসবাস করছে। বিভিন্ন জায়গায় চলাচলের জন্য রাজধানীতে প্রায় ২৫ লাখের মতো নানা ধরনের যানবাহন রয়েছে। যেকোনও আধুনিক শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য মোট আয়তনের ন্যূনতম ২৫ ভাগ সড়ক বরাদ্দ থাকার কথা। তবে জনসংখ্যার ঘনত্বের ওপর সড়কের বিষয়টিও নির্ভর করে। নিয়ম অনুযায়ী, বর্তমানে আড়াই কোটি লোকের শহরে ৩০ থেকে ৩৫ ভাগ সড়ক বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন। অথচ ঢাকা নগরীতে সড়কের পরিমাণ সাত থেকে আট ভাগ।
দেখা গেছে, রাজধানীতে সীমিত এই সড়কে প্রায় সারা বছরই বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করে সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, তিতাস ও ডেসকোসহ বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। ট্রাফিক বিভাগের তথ্য বলছে, বিভিন্ন সড়কের পাশে ফুটপাতে হকাররা বসে। ফুটপাত ছাড়াও তারা রাস্তায় আশেপাশে বসার প্রয়াস চালায়। বিভিন্ন ইউটিলিটি সার্ভিসের কাজ এবং হকারদের বিষয়টি বিবেচনা করলে সাত-আট শতাংশের সড়কের অনেকটা অংশই তাদের দখলে থাকে। এসব হিসাবে ধরলে যানবাহন চলাচলের জন্য বাকি থাকে আনুমানিক ৬ শতাংশ রাস্তা।
বেশ কয়েকজন ট্রাফিক সার্জেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পার্কিং সংকটের কারণে প্রায়ই যানবাহনের চালক এবং মালিকদের সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের তর্কাতর্কিও হয়। মামলা করলেই গাড়ির চালক ও মালিকের কাছে ‘খারাপ’ হতে হয়, না করলে ‘ভালো’। সড়কে পার্কিং করা গাড়ি সরাতে বললে উল্টো তারা পুলিশের কাছে পার্কিংয়ের জন্য জায়গা চান। বিত্তবান ও ক্ষমতাবানদের মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থাপনা পরিচালনা করায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করাও অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। গাড়ির চালক-মালিকের কাছে কাগজপত্র চাইলে তারা সময়ক্ষেপণ করেন, এতে স্বাভাবিক দায়িত্বরত পুলিশের কাজ ব্যাহত হয়। আবার বিভিন্ন সংগঠনের মিছিল, সভা-সমাবেশ ও ছাত্রদের অসহযোগিতার বিষয়গুলো উল্লেখ করেন মাঠে থাকা ট্রাফিক সার্জেন্টরা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ট্রাফিক বিভাগ (দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, ‘পার্কিং নির্মাণের বিষয়টি দেখভাল করে সিটি করপোরেশন। পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মিটিংয়ে পার্কিং সংকটের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরা হয়। রাজধানীতে জায়গা এমনিতেই কম, সে কারণে বহুতল পার্কিং ব্যবস্থাপনার দিকে যাওয়া দরকার। তাহলে কম জায়গায় বেশি গাড়ি পার্ক করা সম্ভব হবে।’
রাজধানীতে যত্রতত্র পার্কিং ‘অনেক বড় সমস্যা‘ উল্লেখ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মুনিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন জরিপ করা হয়েছে। এই জরিপের উদ্দেশ্য হচ্ছে যেসব স্থাপনা রয়েছে সেসব স্থাপনার পার্কিং এরিয়া ও বেজমেন্ট পার্কিং থাকার কথা, সেখানে রয়েছে কিনা। বেজমেন্ট পার্কিং থাকার পরেও অনেক সময় অনেকেই সেখানে অতিরিক্ত লাভের আশায় দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেন। সেসব বিষয় সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়।’
তিনি বলেন, ‘নতুন ভবন তৈরি করতে হলে বর্তমানে ইমারত আইন অনুযায়ী, বিভিন্ন সুউচ্চ ভবন ছাড়াও ভবনগুলোতে বেজমেন্ট তৈরির নির্দেশনা রয়েছে। ভবনের নকশা অনুমোদনের সময়ে এ বিষয়টি উল্লেখ করা থাকে। যেসব জায়গায় বাণিজ্যিক স্থাপনা, হাসপাতাল ও স্কুল মূল সড়কের পাশে পড়েছে সেগুলোতে পর্যাপ্ত পার্কিং রয়েছে কিনা, তা যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।’