কসবার মাদলা বিজিবি ক্যাম্প সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় হয়রানীর অভিযোগ:- প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের হতদরিদ্র মানুষগুলোও বাদ যায়নি

ভজন শংকর আচার্য্য, কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামে নিরীহ সাধারন মানুষকে মিথ্যা মাদক মামলায় জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে মাদলা বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডারসহ কতিপয় সদস্যদের বিরুদ্ধে। মিথ্যা মামলায় পলাতক আসামী দিয়ে স্থানীয় মানুষকে হয়রানী করাসহ বাড়িঘরে তল্লাসী দিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এ ধরনের হয়রানীতে ছুটিতে আসা রেমিটেন্স যোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের লোকজনসহ প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্পের দরিদ্র মানুষগুলোও বাদ যায়নি। ফলে আতংকে কাটাচ্ছে সীমান্তের মাদলা, খাদলা ও গৌরাঙ্গলাসহ সীমান্তবর্তী জনপদের সাধারন মানুষ।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানিক মিয়া (২০) আশ্রয়নের বাসিন্দা। পিতা আবদুল আলীম গরু ব্যবসায়ী। দাদা ছিলো মুক্তিযোদ্ধা। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় পা ভেংগে ফেলায় পুলিশে চাকুরী হলোনা। তাই মনের দুঃখে বিদেশ পাড়ি দেয়ার জন্য টাকা ও পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন ঢাকা রিক্রুটিং এজেন্সিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্রয়ন প্রকল্পের অপর বাসিন্দা মোঃ আনিছ মিয়া (৩০)। কৃষি শ্রমিক ও দিন মজুর হিসেবে পরিচিত। অথচ গত ২৮ এপ্রিল স্থানীয় মাদলা ক্যাম্পের নায়েক গাজী আনোয়ার হোসেন ২৫ বোতল ভারতীয় স্কর্ফ সিরাপ দিয়ে বিজিবি সদস্য অন্য কোথাও থেকে উদ্ধার করে তাদের দু’জনকে পলাতক আসামী করে কসবা থানায় মামলা দিয়েছেন।

মোঃ আনিছ মিয়ার বড় বোন লাভলী আক্তার বলেন, আমার ভাই আনিছ মিয়া অনেকটা প্রতিবন্ধি। এই মামলায় যে দুজনকে বিজিবি আসামী করেছে তা উদ্দেশ্য মুলক ও বানোয়াট।

মামলায় স্বাক্ষী করা হয়েছে একই গ্রামের নুরুল ইসলাম ও আনোয়ার হোসেন কে। দুজনেই সাংবাদিকদের জানান, কখন কোথা থেকে বিজিবি স্কর্ফ সিরাপ আটক করেছে তারা কিছুই জানেনা। তাদেরকে বিজিবি স্বাক্ষ্য করেছে শুনে দুজনই হতবাক হয়েছেন। দুজনেই বলেন বিজিবির এমন কাজে গ্রামে মারামারি হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমরা এই মিথ্যা স্বাক্ষ্য কিভাবে দেবো ?

গত ৪ মে মাদলা ক্যাম্পের নায়েব সুবেদার মোঃ আবু বক্কর অন্য কোথাও থেকে ৪৭ বোতল স্কর্ফ সিরাপ উদ্ধার করে উত্তর মাদলায় মোঃ জামিল মিয়া ও জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে তাদের পলাতক আসামী দেখায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রেমিটেন্স যোদ্ধা মোঃ জামিল মিয়া (৩৫) চিকিৎসার জন্য তিন মাসের ছুটি নিয়ে প্রায় একমাস আগে দেশে আসেন। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন। তিনি জানান, গ্রামের একটি চোরাকারবারী চক্রই তাকে ওই বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডারকে প্রভাবিত করে এই কাজ করিয়েছেন। এই মামলায় জসিম উদ্দিনকেও এমনি করে মামলায় জড়িয়েছেন বলে দাবী করা হয়।

ভুক্তভোগী রেমিটেন্স যোদ্ধা জামিল হোসেন জানান, আমি গত তিন বছর যাবত মালেশিয়ায় চাকুরী করি। স্বাস্থ্য খারাপ হওয়ায় গত একমাস আগে তিন মাসের ছুটিতে দেশে এসেছি চিকিৎসা নিতে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছি। মাদলা ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা কোথা থেকে স্কর্ফ সিরাপ উদ্ধার করেছে আমরা জানিনা। অথচ প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্দে মামলা না করে আমাকে পলাতক দেখিয়ে আসামী করে কসবা থানায় মামলা দায়ের করেছে বিজিবি। এখন মিথ্যা মামলার কারনে আমার বিদেশ যাওয়া বন্ধ হয়ে গেলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।

বিজিবির দায়ের করা মামলার অপর তিন আসামী মানিক মিয়া, জসিম মিয়া ও আনিছ মিয়া জানান, স্কর্ফ সিরাপ উদ্ধারের বিষয়টি আমরা কিছুই জানিনা। অপরাধ না করেও আমরা এখন বিজিবির করা মিথ্যা মামলায় হয়রানীর শিকার। আমরা এর সুষ্ঠ ুবিচার চাই। ইতিমধ্যে গতকাল কসবা থানা পুলিশ মাদলা ওয়ার্ডের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জসিম মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে।

বায়েক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন; দুটি মামলায় যাদেরকে পলাতক আসামী দেখানো হয়েছে এরা কেউ মাদক ব্যবসায়ী নয়। জসিম উদ্দিন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড সভাপতি। অপরদিকে যুবলীগের বায়েক ইউনিয়ন সাংগঠনিক সম্পাদক। স্থানীয় বিএনপি জামাতের নেতারা বিজিবিকে প্রভাবিত করে এমন কাজ করেছেন।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপহার মাদলা ৭৬ পরিবার আশ্রয়নের বাসিন্দা রোকসানা বেগম, তাজুয়ারা বেগম, জাহানারা বেগম ও আলীম মিয়া জানান, বিভিন্ন সময়ে মাদলা ক্যাম্পের বিজিবি কর্মকর্তারা আমাদের হয়রানী করেন। গত ২৮ এপ্রিল ও ৫ মে বিজিবি দুটি মিথ্যা মামলায় আমাদের চারজনকে আসামী করে হয়রানী করছে। আমরা হয়রানী ও মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি চাই এবং ন্যায় বিচার চাই।

এ বিষয়ে মাদলা বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার নায়েব সুবেদার আবু বক্করের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করিনি। আসামীরা ভারতীয় স্কর্ফ সিরাপ নিয়ে আসার সময় আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে মালামাল ফেলে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় আমরা তাদের চিনতে পেরে পলাতক দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কসবা থানায় মামলা দায়ের করেছি।

কসবা থানা অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, আমরা এ সমস্ত বিষয়ে তদন্ত করে আদালতে রিপোর্ট প্রদান করবো। 

এ বিষয়ে কথা বলতে সুলতানপুর ৬০ বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ আশিক হাসান উল্লাহ’র সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.