বাআ ॥ কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে দেশকে স্বনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা নিজের পায়ে চলব। নিজের দেশকে আমরা গড়ে তুলব। কারও মুখাপেক্ষ হয়ে না। গত “শনিবার ঢাকার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে বিকেল ৪টার কিছু আগে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এ সময় রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধ হয়ে তাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান দলীয় নেতাকর্মীরা। পরে কার্যালয় উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। সমাবেশে তিনি বলেন, “বিশ্বব্যাপী খাদ্যমন্দা বাংলাদেশের মানুষকে যাতে স্পর্শ করতে না পারে সেজন্য আমাদের যে মাটি তা ব্যবহার করে এক ইঞ্চি জমিও যাতে অনাবাদী না থাকে, সেভাবে উৎপাদন বাড়াতে হবে। ““কে আমাদের ভিসা দেবে না, কে আমাদের স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে ওনিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নাই। ২০ ঘন্টা প্লেনে জার্নি করে আটলান্টিক পার হয়ে আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু যায় আসে না। পৃথিবীতে আরও অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে; সেই মহাদেশের সঙ্গে আমরা যাতায়াত করব, বন্ধুত্ব করব; আমাদের অর্থনীতি আরও মজবুত হবে, উন্নত হবে, আরও চাঙ্গা হবে।” আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “ভোট যারা চুরি করে, জনগণের ভাগ্য নিয়ে যারা খেলেছে, আমি বলব যে, ওই সন্ত্রাসী দলের দিকে নজর দেন। সন্ত্রাসী দল হিসেবে কানাডার হাইকোর্ট বিএনপিকে ঘোষণা দিয়েছে। এই সন্ত্রাসী এবং দুর্নীতির দায়ে কিন্তু আমেরিকা তারেক জিয়াকে তাদের দেশে ভিসা দেয় নাই। তারাই এখন তাদের কাছে ধর্ণা দেয়। “বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল কোথায়, কল্যাণ কোথায়, সেটা আমরা খুব ভালো করে জানি। সেটা মাথায় রেখেই আমরা কাজ করে দেশকে উন্নয়নশীল দেশ করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হবে। “বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “তারা অবাধ নির্বাচন শিখলো কিভাবে? তারা তো ভোট চুরি করা শিখেছে। তারা নিজেরা চোর তাই সবাইকে চোর সন্দেহে দেখে। জনগণের সম্পদ চুরি করে বিশাল সম্পদের মালিক তারা। জিয়ার মৃত্যুর পর ৪০ দিন পর্যন্ত দেখানো হল অত্যন্ত সৎ ছিল জিয়া, কিছু রেখে যায়নি। ছেঁড়া গেঞ্জি আর সুটকেস ছাড়া। আর খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে যাদুর বাক্স হয়ে গেল! কোকো লঞ্চ ১, ২… সম্পদের পাহাড় গড়ল। তাহলে বাংলাদেশের মানুষকে তারা কি দিয়েছে।”বিএনপি নেতা তারেক রহমানের মানিলন্ডারিংয়ের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “হাজার হাজার কোটি টাকা মানিলন্ডারিং করেছে। ৪০ কোটি টাকা উদ্ধার করে আমরা আনতে পেরেছি। আর এখন দেশের বাইরে বসে চোরা টাকা আর জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী মিলে আমাদের বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়, ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আমি বলতে চাই সত্যের জয় হবেই।”বিএনপির সন্ত্রাস আর দুর্নীতির কারণে ২০০৮ সালে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল সংখ্যগরিষ্ঠতা আর বিএনপি পেয়েছিল মাত্র ২৯টি আসন। তখন জনগণ কিন্তু তাদের ভোট দেয়নি।”
পাকিস্থান আমল থেকে খালেদা জিয়া, বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এদেশের মাটি ও মানুষের জন্য গড়ে উঠিছে আওয়ামী লীগ, কেউ ধ্বংস করতে পারবে না। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় এলেই মানুষের উন্নয়ন হয়।”
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বক্তব্য দেন।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণের সঞ্চালনায় মঞ্চে কেন্দ্রীয় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দায় সৃষ্ট জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “কষ্ট দূর করতে কাজ করছে সরকার। আমি জানি এই গরমে অনেকের কষ্ট হচ্ছে।”
এসময় তিনি সুখবর দিয়ে বলেন, “যা হোক তবুও সুখবর যে, কাতার ও ওমানের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়ে গেছে। আমরা আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে কথা হচ্ছে যাতে আমরা গ্যাস আনতে পারি, এই কষ্ট দূর করতে পারি।”
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা, শতভাগ বিদ্যুতায়ন এবং বিএনপি-জামায়াতের সময়ে সংকটের চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। দু:খজনক হল করোনায় অর্থনীতির চাপ সেটাও আমরা কাটিয়ে উঠলাম, প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছিল, সেটাও কাটিয়ে উঠলাম, কিন্তু যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞার কারণে আজকে আমাদের পরিচালন ব্যয়, পরিবহন ব্যয়, জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ‘অভূতপূর্ব’ উন্নয়নের চিত্র এবং প্রান্তিক মানুষকের আর্থিক অর্ন্তভূক্তিতে আনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি দেশব্যাপী সবাইকে বৃক্ষরোপনের আহ্বান জানান।
বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জোরের সঙ্গে জানালেন তার সরকার বাজেট বাস্তবায়ন করতে পারবে বলেই এ বাজেট প্রণয়ন করেছে। দেশবাসীও তাদের সঙ্গে আছেন।
তিনি বলেন, “জ্ঞানী-গুনী বলছে বাস্তবায়ন করতে পারব না না কি। প্রতিবার বাজেটের আগে যেভাবে বলে সেভাবেই বলে যাচ্ছে। আর আমরা কাজ করে যাচ্ছি মানুষের জীবন উন্নত করার জন্য। এটা সম্ভব হয়েছে টানা সরকারে থাকার কারণে, একটা স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ রয়েছে বলেই। স্থিতিশীলতা আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দেশের কোনো উন্নতি হতো না।”
ভবিষ্যতে তৈরি পোশাক খাতের পর দ্বিতীয় রপ্তানিকারক খাত হিসেবে প্রযুক্তি খাতকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী সবধরনের অবকোঠামো এবং সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
এসময় ঢাকা চারপাশে চারটি স্যাটেলাইট টাউন, ঢাকা ঘিরে এলিভেটেড রিং রোডসহ আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।
ঢাকার তেজগাঁও থেকে ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়ে ফেলতে সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “কোথায় ভালো জায়গা পাওয়া যায় সেটি দেখা হচ্ছে। সেখানে আধুনিক ট্রাকস্ট্যান্ড যাতে করা যায়। একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।”প্রধানমন্ত্রী আবারও বিদ্যুৎ ও পানি সাশ্রয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।