প্রশান্তি ডেক্স ॥ উজানের ঢলে দুধকুমার ও ধরলার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছানোর ফলে নদ-নদী তীরবর্তী নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যা পযন্ত ৯ উপজেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্যা দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার পাশাশি ত্রাণ সহায়তা দেওয়া শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
গত শুক্রবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৫ ও ধরলার পানি শহরের সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ২/৩ দিন পানি বেড়ে জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।’
পাউবো নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, জেলার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে গত শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পযন্ত দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ধরলার পানি সদরের সেতু পয়েন্টে ৬২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। একই সময়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি নুন খাওয়া পয়েন্টে ৩৯, চিলমারী পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার যথাক্রমে ২৪ ও ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিস্তার পানি বৃদ্ধির হার বেড়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী ও উলিপুরসহ জেলার ৯ উপজেলার ৪১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে পাবিত এলাকার পরিধি বাড়ছে। এতে করে এসব এলাকার প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি পরিবারের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে নৌকায় আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য বসতবাড়ি ত্যাগ করে উঁচু স্থান, স্থানীয় আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গেছেন।
তবে গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে, পাবিত এলাকার বেশিরভাগ পরিবার ঝুঁকি নিয়ে বসতবাড়িতে অবস্থান করছেন। জিনিসপত্র ও গবাদি পশু সরাতে না পারায় তারা বাড়ি ত্যাগ করছেন না।
এদিকে, দুর্গত এলাকার কিছু পরিবারকে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে তাদের খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানিয়েছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলার ৯ উপজেলার প্রাথমিক প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এতে ৪১ ইউনিয়নের ১৭০ গ্রামের প্রায় ১২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে নাগেশ্বরী। এই উপজেলার ৯ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে দুই হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আহমেদ সাদাত বলেন, ‘বামনডাঙা ইউনিয়নের প্রায় পুরোটাই প্লাবিত। মানুষের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। অনেকে উঁচু স্থানে এবং আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুুত রেখেছি। ত্রাণ সহায়তা শুরু করেছি।’
উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোভন রাংসা বলেন, ‘উপজেলার ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা অববাহিকার পাবিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ১৪টি পরিবারকে নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার জেলার প্রায় ৭০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নাগেশ্বরী, রাজারহাট, উলিপুর উপজেলার কিছ প্লাবিত এলাকা থেকে দুর্গত মানুষদের সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পশুখাদ্য যেন ঘাটতি না হয়, সে প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। দুর্গতদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নৌকা ও স্পিডবোট প্রস্তুত রয়েছে।’
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ধরলা ও দুধকুমার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হতে পারে। পূর্বাভাস অনুযায়ী ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। এরপর পানি দ্রুত নেমে যাবে।’