ভারী বৃষ্টিতে এশিয়া জুড়ে শতাধিক মৃত্যু, জলবায়ু বিপর্যয়কে দুষছেন বিজ্ঞানীরা

প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ চলতি মৌসুমে ভারী বৃষ্টিতে এশিয়াজুড়ে শতাধিক মানুষ মারা গেছেন। প্রায় চার মাস ধরে চলা বৃষ্টিতে ভারত, চীন এবং জাপানসহ কয়েকটি দেশে বন্যা ও ভূমিধসের সৃষ্টি করেছে। এতে লাখ লাখ মানুষকে তাদের আবাসস্থল ছেড়ে সরে যেতে হয়েছে।

রাজধানী সিউলে গত শুক্রবার ঝড়ের আঘাতের পর দক্ষিণ কোরিয়া উচ্চ সতর্কতা জারি হয়। অন্যদিকে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়ে সতর্ক করেছেন ফিলিপাইনের কর্মকর্তারা ।

চলতি সপ্তাহের শুরুতে জাপানের কিউশু দ্বীপে রেকর্ডভাঙ্গা বন্যার খবর পাওয়া গেছে। এতে স্থানীয় রাজনীতিবিদসহ অন্তত আটজন মারা গেছেন। অনেকে এখনও নিখোঁজ।

জাপানের আবহাওয়া সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, ‘এমন বৃষ্টি আগে কখনই হয়নি। শহরগুলোতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে।’ জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়েছে বলে সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীরা। অনেক দেশ ইতোমধ্যে চরম আবহাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে।

বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার হাইড্রোলজি, ওয়াটার অ্যান্ড ক্রায়োস্ফিয়ার পরিচালক স্টেফান উহলেনব্রুক বলেন, ‘জাপানের মতো উন্নত দেশগুলো অত্যন্ত সতর্ক ছিল। বন্যা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে তারা খুব ভালভাবে প্রস্তুত।’

তিনি বলেন, ‘অনেক নিম্ন আয়ের দেশে কোনও সতর্কতা নেই। অনেক দেশে বন্যা প্রতিরক্ষা কাঠামো এবং কোন সমন্বিত বন্যা ব্যবস্থাপনা নেই।

জাপানি কর্তৃপক্ষ সপ্তাহের শুরুতে কিউশু দ্বীপের দুটি প্রিফেকচার থেকে চার লাখ ২০ হাজারের বেশি বাসিন্দাকে সরিয়ে নিয়েছে। এদিকে গত শুক্রবার ভোরে দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানীতে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ১৩৫ জনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ সময় ৪ হাজার পরিবারে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

ভয়াবহ বন্যার মুখে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে মানুষ। সরকারি সংস্থার সঙ্গে জরুরি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু বলেন, ‘মৃত্যু কমানোই দেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকা উচিত। বর্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।’ যদিও অনেক কারণ বন্যা হয়, তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন সারা বিশ্বে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিয়েছে। কারণ উষ্ণ বায়ুমন্ডলে আরও বেশি পানি থাকে।

চীন এবং ভারত ইতোমধ্যে কয়েক সপ্তাহের ভারী বৃষ্টিপাত দেখেছে। এতে দেশদুটির বিভিন্ন অঞ্চলে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।

ভাতরের উত্তরাঞ্চলে ভূমিধস, আকস্মিক বন্যা এবং ভবন ধসে কমপক্ষে ১০০ জন মারা গেছেন। রাজধানী দিল্লিতে পাতাল রেল সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশের দ্বিতীয়-জনবহুল শহরটির রাস্তাও তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। অনলাইনে ছবি ও ফুটেজে দেখা গেছে, মানুষ প্লাবিত রাস্তায় আটকা পড়েছেন। কোমর পর্যন্ত পানি জমেছে এসব রাস্তায়।

চীনজুড়ে অস্বাভাবিক ভারী বৃষ্টিতে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অবকাঠামো। দক্ষিণ-পশ্চিম চংকিং থেকে আসা ফুটেজে গত সপ্তাহে দেখা যায়, প্রবল স্রোতের মধ্যে একটি ভবন নদীতে ধসে পড়েছে।

অবিরাম বৃষ্টিতে বিভিন্ন শহরে বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ায় এশিয়াজুডে কয়েক লাখ লোককে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

এদিকে কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এতে শহরের প্রায় ১৪টি জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ফিলিপাইনের দক্ষিণে ভারী বন্যার কারণে রাজধানী ম্যানিলার দিকে যাওয়ার প্রধান হাইওয়েতে ১৭ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি বিবেচনায় ম্যানিলা বিমানবন্দর থেকে কিছু ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। রাজধানীর উত্তর-পূর্বে একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ায় ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.