স্মার্ট বাংলাদেশ গড়লে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাআ ॥ বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে স্মার্ট। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়লে ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে ব্যবসাবান্ধব সরকার। সেটা নিশ্চয়ই আপনারা টের পেয়েছেন। আমি চাই, ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাক।

গত শনিবার (১৫ জুলাই) স্মার্ট বাংলাদেশ ব্যবসায়ী সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে এ সম্মেলনে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও ব্যবসায়ী নেতারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সামনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। সেখানে বেশির ভাগ দক্ষ জনগোষ্ঠী প্রয়োজন পড়বে। দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইনকিউবেটর সেন্টার তৈরি করে কম্পিউটার ট্রেনিং দেওয়া শুরু করেছি। তাছাড়া স্কুল লেভেল থেকে কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছি, সেখানে ট্রেনিং দিচ্ছি। পাশাপাশি ন্যানো টেকনোলজির জন্য একটি আইনও করে দিয়েছি। ন্যানো টেকনোলজির ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। আইন ইতিমধ্যে কেবিনেট অনুমোদন দিয়েছি। দ্রুতই আইন পার্লামেন্টে পাস করে দেব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে ওঠে সে জন্য এসব পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি।

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আর এক একটা কাজ করতে গিয়ে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়। মেট্রোরেল করার সময় শুনতে হলো, ‘৩৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করার কী দরকার। ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করলেই তো নাকি সব সমাধান হয়ে যায়।’ অবশ্য ভালোই একদিকে। আমি বেসরকারিখাতে অনেক টেলিভিশন দিয়েছি, সেখানে সবাই টকশো করে আর টক টক কথা বলেন। সেই টক টক কথা শুনতে হয়। মাঝে মাঝে আমি বলি, আপনারা শুধু টক টক বলেন কেন? কথা যদি টক-ঝাল-মিষ্টি হয় তখন না সুস্বাদু হবে। তো বলে দিল একজন, এতো টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল করার কী দরকার ছিল। মানে আপনি যাই করতে যান, কিছু লোকের মানসিকতাই হচ্ছে কিছুই ভালো লাগে না। তাই কিছুই ভালো লাগে না লোকের কথা ভুলে গিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য যা করা দরকার সেটাই করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের বাংলাদেশ এবং সেই ৮১ সালের বাংলাদেশ অনেক তফাৎ। অনেকেই বলেছিলেন যে, ‘এতো ব্যাংক দিয়ে কী হবে? বাংলাদেশের অর্থনীতি তো এতোবড় না যে এতো ব্যাংক লাগবে। ’ আমার কথা ছিল, অর্থনীতি তো এতো ছোটো থাকবে না, অর্থনীতি বড় করার জন্যই তো আমাকে দিতে (ব্যাংক) হবে। কাজেই সেইভাবেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এদিকে এফবিসিসিআই আয়োজিত ব্যবসায়ী সম্মেলনে অংশ নেওয়া দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা ও শিল্পপতিরা আবারও শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান বলে অভিমত দিয়েছেন। এ বিষয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে আসছেন, আমাদের (ব্যবসায়ীদের) যে অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে ধরে রাখার জন্য আপনাকে (প্রধানমন্ত্রীকে) প্রয়োজন। ব্যবসায়ীদের বিদ্যমান সমস্যাগুলো আপনার (প্রধানমন্ত্রীর) মাধ্যমে সমাধান করতে চাই। এজন্য সব ব্যবসায়ী ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। তারা সবাই আগামীতে আপনার নেতৃত্বে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সুতরাং আমরা মনে করি আপনাকে (শেখ হাসিনা) আমাদের প্রয়োজন। আপনাকে আবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকতে হবে। আমাদের জন্য, ব্যবসায়ীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী থাকতে হবে।’

বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান তর বক্তব্যে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানে আবারও সেই ওয়ান-ইলেভেনের সরকার। কেউ যদি আবার এ ধরণের সরকারের স্বপ্ন দেখে তাহলে সেটি প্রতিহত করার জন্য এই ব্যবসায়ীরাই যথেষ্ট। আমার মনে হয় সে স্বপ্ন দেখে আর কোনো লাভ নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার তিন মেয়াদে দেশের উন্নয়নে কি কি কাজ করেছেন, তা বলতে গেলে সাত দিনেও শেষ করা যাবে না। তিনি প্রথমেই কাজ করেছেন আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি নিয়ে। তিনি চিন্তা করেছেন গ্রামকে কিভাবে উন্নত করা যায়। গ্রামীণ অর্থনীতি উন্নয়নে তিনি ৫ কোটি মানুষকে ভাতা দিয়েছেন। বছরে ৫৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছেন অসহায়-দুস্থ্যদের ভাতা দিয়ে। এর সবকিছু সুফল ভোগ করছেন আমাদের দেশের গ্রামীণ সাধারণ জনগণ।

এখানে যারা বক্তব্য রেখেছেন তাদের সকলেই বলছেন শেখ হাসিনা সরকার বারবার, আমি বলবো শেখ হাসিনার বিকল্প শুধু শেখ হাসিনাই। যেভাবে বঙ্গবন্ধুর বিকল্প শুধু বঙ্গবন্ধুই ছিলেন। আমরা যারা ব্যবসায়ী তারা চাই, সব সময় শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করি, শান্তিপূর্ণভাবে ব্যবসা করি এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। একটা সময় দেশে আগুন সন্ত্রাস করেছে, এখন আবার মিটিং-মিছিলের নামে অস্থিরতা করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কাছে আমার অনুরোধ কেউ যেন জনজীবন বিপর্যস্ত করে রাজনীতি করতে না পারে। গণতন্ত্র মানে এই না, আপনি যা খুশি তাই করবেন। মানুষের জানমাল রক্ষা করতে হবে, অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটাতে হবে।

দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশ পরিচালনায় শেখ হাসিনা যে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন; সে বিবেচনায় আগামী দিনে তাকেই প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন আহমেদ আকবর সোবহান। এ সময় ব্যবসায়ীরা শেখ হাসিনার সঙ্গে রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বসুন্ধরা চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন, সে অনুযায়ী যদি আমরা এগিয়ে যাই তাহলে এদেশে গরিব মানুষ বলে কোনো শব্দ থাকবে না। আমাদের ১৭ কোটি মানুষ একটা শক্তি। এখানে একশভাগ মানুষ বর্তমান সরকার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে ম্যান্ডেট দিয়েছেন। আমরা ব্যবসায়ীরা আছি। আজীবন আপনার সঙ্গে থাকবো, আমৃত্যু আপনার সঙ্গে থাকবো। কারণ, আপনার ব্যতিক্রম তো আপনি। আজ সারা দুনিয়ার চমক শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা সারা দুনিয়াকে আকৃষ্ট করতে পারেন। ইউরোপ-আমেরিকা-ভারত এবং কূটনীতির দিকে তিনি আমাদের দেশকে একটা মিডল অবস্থানে রাখছে। আমাদের সঙ্গে সবার ভালো সম্পর্ক। কারও সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক নেই। তার যে একটা অভিজ্ঞতা, ২০-২৫ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যে অভিজ্ঞতা, এটা আরেক জনের ২০ বছর লাগবে। সুতরাং আমাদের সার্বক্ষণিক উনার সেবা নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশীয় শিল্পের বিকাশ, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। ফলে পরিবর্তনশীল বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আধুনিকতার উৎকর্ষে বদলে যাবে বাংলাদেশ। আমি মনে করি, সরকার ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টায় একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সক্ষম হব। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে দিতে পারব সমৃদ্ধ সুন্দর বাংলাদেশ। বিশ্ব র‍্যাংকিয়ে নিজেদের অবস্থান করবো আরও উন্নত। সেজন্য শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার।’ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে অনুষ্ঠিতব্য এ ব্যবসায়ী সম্মেলনে সারাদেশের চেম্বার, বিশেষায়িত চেম্বার, পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন, রফতানিকারক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠনের নেতারা যোগ দিয়েছেন। পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী, বিদেশি ব্যবসায়ী অংশীদার, আমদানি-রফতানিকারক দেশগুলোর ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা ছিলেন। এ সময় ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের ট্রিলিয়ন (এক লাখ কোটি) ডলারের অর্থনীতির পথে সম্ভবনা ও সমস্যার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে তুলে ধরেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.