স্পেসএক্স ইন্টারনেট সেবা দিতে চায়; যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার

প্রশান্তি ডেক্স॥ দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা দিতে চায় ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। প্রতিষ্ঠানটি স্টারলিংক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এই সেবা দিতে সরকারের কাছে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকার এরইমধ্যে স্পেসএক্স’র উপস্থাপনা দেখেছে। এখন যথাযথভাবে যাচাই বাছাইয়ের পরে সিদ্ধান্ত নিতে চায় সরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) রাতে বলেন, এখনই আমরা তাদের হ্যাঁ বলছি না আবার না-ও বলছি না।

আইসিটি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমরা আগামী তিন মাস পাইলট করবো। তারপরে বিটিআরসি অনুমোদন না দিলে, লাইসেন্স না পেলে কেউ তো ব্যবহার করতে পারবে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, স্পেসএক্স’র কর্মকর্তারা এরইমধ্যে আইসিটি বিভাগে যোগাযোগ করেছেন। নতুন প্রযুক্তি উপস্থাপন করেছেন। যোগাযোগ করেছেন বিডায় (বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ)। বিডা বলেছে, বিটিআরসির কাছ থেকে অনুমোদন নিয়ে আসতে। গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগেও উপস্থাপনা দেখিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।   

ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন বা দুর্যোগ কবলিত জনগোষ্ঠীকে নিরবচ্ছিন্ন উচ্চগতির ইন্টারনেটে সংযুক্ত রাখতে স্পেসএক্স’র সহযোগী প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স ম্যানেজার জোয়েল মেরিথ ও গ্লোবাল লাইসেন্সিং অ্যান্ড অ্যাক্টিভেশন ম্যানেজার পার্নিল’র সঙ্গে তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের কর্মকর্তারা বৈঠক করেন গত বুধবার (২৬ জুলাই)।

এদিকে স্পেসএক্সের কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন। সেই প্রেজেন্টেশনে দেখানো হয়, এই ইন্টারনেটের কী সুবিধা, কীভাবে কাজ করে ইত্যাদি বিষয়। এখন মন্ত্রণালয় বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আমরা এইমাত্র ওদের প্রেজেন্টেশন দেখলাম। এখন বিবেচনা করবো ওদের ইন্টারনেট আমরা নেবো কিনা। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ওরা যে সেবা দেবে তা যদি আমরা অন্যভাবে মিট করতে পারি তাহলে কেন নেবো? প্রাইসিং (সেবার মূল্য নির্ধারণ) কীভাবে হবে সেটাও আমাদের দেখতে হবে। তাছাড়া ওরা প্রাইভেসি কীভাবে রক্ষা করবে- এসব অনেক বিষয় আছে দেখার। ফলে এখনই আমরা তাদের হ্যাঁ বলছি না আবার না-ও বলছি না।  

জানিয়েছেন, স্পেসএক্স স্যাটেলাইটের ডাউনলিংক করতে হলে অবশ্যই সরকারের কাছ থেকে আগে অনুমোদন নিতে হবে। আর ইন্টারনেট সেবা দিতে হলে আইএসপি লাইসেন্সও নিতে হবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি থেকে।

স্পেসএক্সের পক্ষ থেকে এখনও বিটিআরসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কেউ দেখা করেনি এবং আইএসপি লাইসেন্সের জন্য কেউ যোগাযোগ করেনি বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, স্পেসএক্স দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ইন্টারনেট সেবা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং সে কারণে তাদের কর্মকর্তারা এ দেশে এসেছেন।

স্পেসএক্স যেহেতু দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছে সেই কারণে বিএসসিএল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ দেশে এসেছে স্পেসএক্স। প্রতিষ্ঠানটি কী প্রযুক্তি দিয়ে সেবা দেয় তা ওরা আগেই বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। বিএসসিএল বিমানবন্দর থেকে তা ছাড়িয়ে নিয়ে আসে বলে জানা গেছে।  

জানা গেছে, দেশের প্রত্যন্ত এলাকা (বিশেষ করে দুর্গম পাহাড়ি এলাকা, দ্বীপ, ছিটমহল ইত্যাদি) যেখানে ফাইবার অপটিক ক্যাবল পৌঁছেনি, মোবাইল ইন্টারনেট নেই, সেখানে স্পেসএক্স’র স্টারলিংকের স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছানো হবে। এছাড়া যেসব প্রত্যন্ত এলাকার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবে উচ্চগতির ইন্টারনেট পৌঁছেনি সেখানেও স্টারলিংকের মাধ্যমে ইন্টারনেট পৌঁছাবে স্পেসএক্স।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারের ছাদে এর গতি পরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে। প্রথমবারের পরীক্ষায় ১৫০ এমবিপিএস ডাউনলোড গতি পাওয়া যায়। দ্বিতীয়বার পাওয়া গেছে ৫০০ এমবিপিএস গতি।

জানতে চাইলে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এখন কারও ব্যবহার করার অনুমতি নেই। আমরা আগামী তিন মাস পাইলট করবো। তারপরে বিটিআরসি অনুমোদন না দিলে, লাইসেন্স না পেলে কেউ তো ব্যবহার করতে পারবে না।

দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক স্পেসএক্সের ইন্টারনেট সেবা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কি সেবা দিতে পারছি না? না পারলে তখন যদি কাউকে আনা হয় সেটা তখন বিবেচনা করা যাবে। আমরা নতুন প্রযুক্তিকে সব সময় স্বাগত জানাই, কিন্তু আমরা তো এই সেবা দিতে এখনও ব্যর্থ হইনি। যেসব দুর্গম এলাকায় ব্রডব্যান্ড বা মোবাইল ইন্টারনেট সেবা পৌঁছেনি সেখানে তো বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে। তাহলে? প্রশ্ন করেন তিনি। বলেন, এ ধরনের সেবা চালু করা বা আনার আগে স্থানীয় সেবা দাতাদের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন ছিল। যদিও সেটা করা হয়নি।

ইমদাদুল হক বলেন, স্পেসএক্স যদি ইন্টারনেট সেবা দেয় তাহলে তো তাকে বৈদেশিক মুদ্রায় বিল পরিশোধ করতে হবে। ডলার সংকটের সময় এই উদ্যোগ কতটা যৌক্তিক? স্পেসএক্স যদি ইন্টারনেট সেবা দেয় তাহলে কী প্রতিষ্ঠানটিকে আইএসপি লাইসেন্স দেওয়া হবে? দেশের সাইবার সিকিউরিটির সুরক্ষা কীভাবে নিশ্চিত করা হবে। এটা করতে গেলে তো মনিটরিংয়ের জন্য স্পেসএক্সকে আর্থ স্টেশন স্থাপন করতে হবে। সেটা কি স্থাপন করতে দেওয়া হবে। অনেকগুলো প্রশ্ন রেখে ইমদাদুল হক বলেন, আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত গত দুই বছরেও স্পেসএক্সকে সেবা চালুর অনুমতি দেয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published.