প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজারে সেনারা জাতীয় টিভিতে অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলেছে, সংবিধান ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে, সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দেশের সীমান্তও।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বাজুমকে বুধবার সকাল থেকে প্রেসিডেন্ট গার্ডের সেনারা আটকে রেখেছে।
এদিকে নাইজারের আটক প্রেসিডেন্টের প্রতি আকুন্ঠ সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও আটক প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট বাজুম পশ্চিম আফ্রিকায় ইসলামি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পশ্চিমা মিত্র। দেশটির দুই প্রতিবেশী দেশ মালি এবং বুরকিনা ফাসো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিহাদি বিদ্রোহের ফলে অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হয়েছে। দুই দেশেই নতুন সামরিক নেতারা ফ্রান্সের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছে। ফ্রান্স সাবেক ঔপনিবেশিক শক্তি; এক সময় নাইজারকে শাসন করত ফরাসিরা।
গত বুধবার টিভি ঘোষণায় কর্নেল মেজর আমাদু আবদ্রামান যখন অভ্যুত্থানের ঘোষণা দিচ্ছিলেন তখন তার পেছনে নয়জন ইউনিফর্মধারী সেনা ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা বাহিনী… আপনারা জানেন যে আমরা এই শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নিরাপত্তা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি এবং দুর্বল অর্থনৈতিক ও সামাজিক শাসনের প্রতিবাদে আমরা এমন করছি।
তিনি বলেন, ‘দেশের সব প্রতিষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। বিদেশিরা আমাদের এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত স্থল ও আকাশ সীমান্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সময় রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ কার্যকর হবে।’
কর্নেল মেজর আবদ্রামানে জানান, সেনারা ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর দ্য সেফগার্ড অব দ্য হোমল্যান্ডের (সিএনএসপি) হয়ে কাজ করছে।
সেনাদের টিভি ঘোষণার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন প্রেসিডেন্ট বাজুমের মুক্তির আহ্বান জানান।
নিউজিল্যান্ডে একটি সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটা স্পষ্টতই শক্তির মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা। সংবিধানকে অমান্য করার প্রচেষ্টা।
প্রতিবেশী মালিতে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত রাশিয়ান ওয়াগনার ভাড়াটে সেনারা জিহাদি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সামরিক সরকারকে সাহায্য করছে। নাইজারের অস্থিরতা ওয়াগনার অপারেশন এবং সাহেল অঞ্চলের অস্থিরতা সম্পর্কে বিদ্যমান পশ্চিমা উদ্বেগক ফের সামনে নিয়ে এসেছে।
আফ্রিকায় রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারে আগ্রহী প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত বৃহস্পতিবার সেন্ট পিটার্সবার্গে আফ্রিকান নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
পশ্চিম আফ্রিকার অর্থনৈতিক বক ইকোওয়াস বলছে, নাইজারে জোর করে ক্ষমতা দখলের প্রচেষ্টাকে কঠোর ভাষায় নিন্দা জানায় তারা। ইকোওয়াসের পক্ষ থেকে বেনিনের প্রেসিডেন্ট প্যাট্রিস ট্যালন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে নাইজারের রাজধানী নিয়ামিতে পৌঁছেছেন।
ট্যালন বলেন, ‘নাইজারে সাংবিধানিক শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের জন্য পয়োজন হলে ‘সব উপায় ব্যবহার করা হবে। তবে চাইবো শান্তিপূর্ণভাবে বিষয়টার সুরাহা হোক।
এর আগে গত বুধবার নিয়ামিতে সাধারণ মানুষ বাজুমের সমর্থনে রাস্তয় নেমেছিল। তখন চারপাশের ভারী অস্ত্রে সজ্জিত সেনা মোতায়েন ছিল। এসময় অভ্যুত্থানের পেছনে থাকা সেনারা বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়।
নাইজার সরকার দুটি ইসলামপন্থী বিদ্রোহীর সঙ্গে লড়াই করছে। একটি দক্ষিণ-পশ্চিমে, এই বিদ্রোহী দলটি ২০১৫ সালে মালি থেকে পালিয়ে এখানে অবস্থান নেয়। অন্যটি দক্ষিণ-পূর্বে, উত্তর-পূর্ব নাইজেরিয়াতে অবস্থিত জিহাদিদের সঙ্গে। আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোও নাইজারে সক্রিয় রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট বাজুম ২০২১ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফ্রান্স এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর ঘনিষ্ঠ মিত্র তিনি।
নাইজার ১৯৬০ সালে ফ্রান্স থেকে স্বাধীনতার পর থেকে চারটি অভ্যুত্থানের সম্মুখীন হয়েছে। অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে অসংখ্যবার।
সূত্র: বিবিসি