প্রশান্তি ডেক্স ॥ ওয়ানডেতে তামিম ইকবাল বাংলাদেশকে প্রথম নেতৃত্ব দেন ২০১৯ বিশ্বকাপের পর। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফির ইনজুরিতে ভারপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। মাশরাফি নেতৃত্ব ছাড়ার পর তামিমের কাঁধে তুলে দেওয়া হয় ওয়ানডের নেতৃত্বভার। ভারমুক্ত হয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে শুরু হয় পথচলা। সবমিলিয়ে ৩৭টি ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে ২১ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৪টি ম্যাচ হারলেও দুটিতে ফল হয়নি। শুধু তাই নয়, তামিমের হাত ধরে ওয়ানডে সুপার লিগে তিন নম্বরে থেকে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে অধিনায়ক তামিম ইকবালকে সফলই বলা চলে। তারপরও ইনজুরির কারণে, জাতীয় দলের স্বার্থে অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে হলো।
এত সাফল্যের পরও স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে পারে তামিম নেতৃত্ব ছাড়লেন কেন? লম্বা সময় পিঠের ইনজুরিতে ভুগছেন। লন্ডনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে তামিমের পিঠের নিচের দিকের দুটি অংশে ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। অস্ত্রপচার না করে এই ধরনের ইনজেকশন ব্যবহারে দ্রুত সময়ে ম্যাচে ফেরা সম্ভব। কিন্তু এটি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত স্নায়ুকে নিস্তেজ করে রাখে। কিন্তু এভাবে কতদিন, তার স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেন না চিকিৎসকরাও। যেকোন সময় ব্যাথা ফিরে আসতে পারে। ফলে বিশ্বকাপের মতো একটি আসরে অধিনায়কত্ব করতে চাননি তামিম। মূলত দেশের স্বার্থে তামিমের এই সেক্রিফাইজ।
গত চার বছরে ওয়ানডে দলটিকে একটু একটু করে গুছিয়ে আনেন তামিম ইকবাল। স্বপ্ন ছিল বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে দারুণ কিছু করার। কিন্তু ইনজুরি তাকে সেই সুযোগটুকু আর দেয়নি।
গত বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে তামিম ইকবাল স্পষ্ট করেই জানান, দেশের স্বার্থে তিনি অধিনায়কত্ব ছেড়েছেন।
বলেন, ‘আমার কাছ মনে হয় সবার লক্ষ্যটা একই। একদিকেই তাকিয়ে আছি আমরা, আমি অধিনায়ক থাকি বা অন্য কেউ থাকুক লক্ষ্য একটাই। আমি যদি বলি যে আমি নাখোস না, তাহলে মিথ্যা হবে কারণ এতদিন একটা দলের সঙ্গে ছিলাম। ৯০ ভাগ মানুষ স্বার্থপর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু যখন দল সামনে আসে, তখন স্বার্থপর ব্যাপারটা দূরে রাখতে হয়। আমি বিশ্বাস করি, আমার এই সিদ্ধান্ত স্বার্থহীন।’
গত মাসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে খেলেই হুট করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন তামিম। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে তামিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসে কথা বলেছি। যখন তিনি আমাকে দোয়া দিয়েছেন তুমি মাঠে থাকো এরপর আর কিছু বলার নেই।’
অধিনায়ক হিসেবে বিদায় বেলায় তৃপ্তির ঢেকুরই তুলে তামিম বলেছেন, ‘জার্নি দারুণ ছিল। ফলাফলই সে কথা বলবে। আমি অধিনায়ক হিসেবে মনে করি ভাল করেছি। কিন্তু পাপন ভাইকে বলেছি যে এটা স্বার্থপরের মতো সিদ্ধান্ত হতো যদি অধিনায়ক থাকতাম। কারণ আমি একটা সিরিজ খেলছি না তারপরও পজিশনটা ধরে রাখি তাহলে প্রশ্ন থাকে। যারা আমাকে চেনেন তারা সবাই জানেন, আমি নিজের চেয়ে দলকে এগিয়ে রাখি।’
অধিনায়ক না থাকলেও মাঠের খেলায় ঠিকই ‘অধিনায়কত্ব’ করবেন তামিম। বলেন, ‘আমি হয়তো নামে অধিনায়ক থাকবো না। কিন্তু একাদশে খেললে অবশ্যই অধিনায়ক হিসেবে কাজ করবো। তার মানে যে অধিনায়ক থাকবে, তাকে আমার তরফ থেকে যতটুকু সাহায্য করা সম্ভব তার সবই করবো।