বাআ ॥ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান গভীর সম্পর্ককে আরও জোরদার করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার পাশাপাশি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠকও হয়েছে।
প্রায় দুই বছর পর দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠককে ফলপ্রসূ উল্লেখ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করেছেন। নয়াদিল্লির লোককল্যাণ মার্গে নিজের বাসভবনে বৈঠকের পর মোদি টুইটে (বর্তমানে এক্স) লিখেছেন, ‘গত ৯ বছরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি খুবই সন্তোষজনক। আমাদের আলোচনায় সংযুক্তি, বাণিজ্যিক সংযুক্তি এবং আরও অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল।’
ভারতে গত শনিবার থেকে অনুষ্ঠেয় দুই দিনব্যাপী জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রিত বাংলাদেশ। এই সম্মেলনে যোগ দিতে গত শ্রক্রবার বিকেলে নয়াদিল্লি পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক বৈঠকে নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট কৌতূহল রয়েছে।
দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ভারতের রাজধানীতে দ্য গ্র্যান্ড নিউ দিল্লি হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
গত শুক্রবার রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। তাতে বলা হয়েছে, দুই নেতা রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য এবং সংযুক্তি, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং জনগণের মেলবন্ধনসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই অঞ্চলের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে দুই দেশের সহযোগিতা নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই পশ্চিমাদের চাপ আছে। আবার ভারত আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে জোর দিচ্ছে। ভারতের গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, পশ্চিমা চাপের মুখে বাংলাদেশের সরকারের প্রতি ভারতের সমর্থন থাকবে। এমন প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের ইস্যু হচ্ছে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা। আমরা চাই উভয় দেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। এটা মঙ্গলজনক। ভারত এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে।’
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যমান গভীর সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে একমত হয়েছেন। উভয় দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত সমস্যা সমাধানে আলোচনার তাগিদ দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী সে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিদ্যমান শান্তিপূর্ণ অবস্থা নিশ্চিত করতে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘ভারত আমাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। প্রধানমন্ত্রী ভারত থেকে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছেন। ভারতের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সংযুক্তি তথা রেল ও সড়ক যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে আমাদের চলমান প্রচেষ্টা এবং কার্যক্রম বেগবান করতে দুই প্রধানমন্ত্রী একমত হয়েছেন।’
তিন সমঝোতা স্মারক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে জানান, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক আর্থিক লেনদেনের পথ সুগম করা, কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বিষয়ে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার এবং ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইন চালু করার চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁরা সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির (সেপা) বিষয়ে আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী। ভারত সম্প্রতি বাংলাদেশের ভারত-মহাসাগরীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানিয়েছে।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন হয়। বাংলাদেশসহ নয়টি দেশকে এই শীর্ষ সম্মেলনে ‘অতিথি দেশ’ হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মেলনের দুটি অধিবেশনে বক্তৃতা করবেন।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন, জিু২০ শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে সৌদি যুবরাজ, আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি ১০ সেপ্টেম্বর অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর তিনি জি-২০ সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে অংশগ্রহণ করবেন। গত রোববার সকালে সম্মেলনে সমাপনী পর্বে অংশগ্রহণের পর শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন। তিনি দেশে ফিরেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁকে ঢাকায় অভ্যর্থনা জানাবেন।