প্রশান্তি ডেক্স ॥ রাজধানীর শাহবাগ থানায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতন এবং বারডেম হাসপাতালের ঘটনা অনুসন্ধানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠিত তদন্ত কমিটি সময় বাড়িয়েছে। তারা এখনও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেনি অভিযুক্ত রমনা বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশিদ, অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) সানজিদা আফরিন ও রাষ্ট্রপতির এপিএস আজিজুল হক মামুনকে।
গত বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে তদন্ত কমিটির এক সদস্য এ তথ্য নিশ্চিত করেন। দুই কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার কথা থাকলেও তদন্ত কমিটির সময় বাড়ানোর আবেদনের পর আরও পাঁচ কর্ম দিবস সময় বাড়ানো হয়েছে। ভুক্তভোগী ও এ ঘটনার সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করাও হয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘটনার সূত্রপাত বারডেম হাসপাতালের ইটিটি বিভাগে, সেখানকার আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ছাত্রলীগের দুই নেতাকে যখন থানায় নিয়ে আসা হয় তখন কারা কারা শাহবাগ থানার পরিদর্শকের (তদন্ত) রুমে ঢুকেছে তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে কারা কারা জড়িত সেসব বিষয়কে খতিয়ে দেখছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সব জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে গুরুত্ব সহকারে।
এরই মধ্যে অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার সানজিদা আফরিন গণমাধ্যমে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তব্য দিয়েছেন। তবে এতে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে না উল্লেখ করে তদন্ত কমিটির ওই সদস্য আরও জানান, এ ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছে কমিটি। যাদের বিরুদ্ধে যে ধরনের অপরাধের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যাবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান উপ-পুলিশ কমিশনার অপারেশনস আবু ইউসুফ বলেন, এ ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে ধাপে ধাপে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া শাহবাগ থানায় নির্যাতনের ঘটনায় যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিষয় তুলে ধরে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি।
এদিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, প্রাথমিকভাবে অপেশাদার আচরণ ও সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অপেশাদার আচরণের অভিযোগে অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ এবং শাহবাগ থানার সাবেক অপারেশনস পরিদর্শক গোলাম মোস্তফাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। নির্যাতনের ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে চাউর হয়ে গেছে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদের সাবেক স্ত্রী ছিলেন অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সানজিদা আফরিন। যদিও তদন্ত কমিটিও এসব বিষয় খতিয়ে দেখছেন। এছাড়াও এই ঘটনার পেছনে অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, হাসপাতালের ঘটনা উল্লেখ করে কর্তৃপক্ষ বরাবর একটি চিঠি দেন নিরাপত্তা সুপারভাইজার ওয়ারেছ আলী। সেই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টার দিকে হাসপাতালে আসা একদল দর্শনার্থী ইটিটি কক্ষের সামনে মারামারি করেন। হাসপাতালের বিভিন্ন ইউনিট পরিদর্শন করে এসে তিনি এই মারামারি দেখতে পান। দুই পক্ষকে অনুরোধ করে তিনি মারামারি থামাতে সমর্থ হন।
চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, মারামারিতে লিপ্ত ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে, প্রথমে তারা পরিচয় জানাতে অস্বীকৃতি জানান। পরে অনুরোধ করলে তারা পরিচয় দেন। এতে জানা যায়, একজন রাষ্ট্রপতির এপিএস এবং অন্যজন হচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর বিষয়টি সি.ই.ও স্যারকে অবহিত করি এবং উনার নির্দেশে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করি। পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রমনা ও শাহবাগ থানার পুলিশ এসে উভয় পক্ষকে নিয়ে যায়।
এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের সচেতন হতে হবে এবং নৈতিকতা, সততা এবং দায়িত্ব পালনে আন্তরিকতার সহিত চাকুরি বিধি এবং দেশীয় আইনকে সম্মান জানিয়ে ধর্মীয় কৃষ্টি-কালচার এবং নিয়ম-নিতির সঙ্গে বিধি-নিষেধকে শ্রদ্ধার সঙ্গে পরিপালনে দৃশ্যমান রাখতে হবে। তদন্ত ও বিচার চলাকালিন বিষয়ে নিজস্ব মতামত উল্লেখ না করে বরং জ্ঞান ও সচেতনতার দৃষ্টিভঙ্গি কামনা করছি। এও বলছি যে, আপনাদেরকে মানুষ অনুসরণ ও অনুকরণ করে তাই নিজেদেরকে এবং প্রতিষ্ঠানকে ও রাষ্ট্রকে পাশাপাশি ধর্মীয় মূল্যবোধকে ক্ষুদ্র স্বার্থের জন্য বিসর্জন বা জলাঞ্জলি দিবেন না।