প্রশান্তি ডেক্স ॥ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রনীতি জানতে চেয়েছেন ঢাকা সফররত ইউএস ইনস্টিটিউট ফর পিস (ইউএসআইপি) প্রতিনিধি দল। বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত ও চীনের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক কেমন তা জানতে চেয়েছেন তারা। তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
গত শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির নেতাদের সঙ্গে মার্কিন একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠকে আলোচনায় এসব বিষয় উঠেছে। ইউএস ইনস্টিটিউট ফর পিস (ইউএসআইপি)-এর তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন, দলটির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, আন্তর্জাতিক উপ-কমিটির সদস্য খালেদ মাসুদ আহমেদ প্রমুখ। অন্যদিকে, মার্কিন প্রতিনিধি দলে ছিলেন ইউএস ইনস্টিটিউট ফর পিস (ইউএসআইপি)-এর প্রতিনিধি জেফরি ম্যাগডোনাল্ড, ডেন মার্কি ও ইশা গুপ্তা।
বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ফরেন পলিসি এবং বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এই উপমহাদেশের যে রাজনৈতিক টানাপোড়ন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যাচ্ছে; এসব বিষয়ে বাংলাদেশের ভূমিকা কী, আওয়ামী লীগ কী চিন্তা করছে, এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘‘তারা (ইউএসআইপি প্রতিনিধিরা) জানতে চেয়েছেন, ইন্ডিয়ার সাথে (সরকারের সম্পর্ক) কেমন? চায়নার সাথে (সরকারের সম্পর্ক) কেমন? সাব কন্টিনেন্টে যে দেশগুলো আছে, তাদের সাথে আমাদের রিলেশন (সম্পর্ক) কেমন? আমরা আমাদের বিষয়গুলো জানিয়েছি। বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতি, আমাদের জাতির পিতা যেটা দিয়ে গেছেন ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’, এটাই ফোকাস করা হয়েছে।
ভারত-চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তা জানতে চেয়েছেন উল্লেখ করে শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘তারা (ইউএসআইপি প্রতিনিধিরা) নিজেরাও স্বীকার করেছে, চীন একটি ইকোনমিক পাওয়ার। চীন আমাদের অর্থনৈতিক পার্টনার। তারা জানতে চাচ্ছে, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন? আমরা জানিয়েছি, ইন্ডিয়া আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। আমাদের দুর্দিনে, ১৯৭১ সালে ভারত যেভাবে আমাদের পাশে ছিল, সেটাকে আমরা সম্মানের চোখেই দেখি।’
বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার আমাদের উপর ১০ লাখের উপর রোহিঙ্গা চাপিয়ে দিয়েছে। তারপরও আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছি। শুধু আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নয়, গ্লোবাল ভিলেজে আমরা আলোচনার মাধ্যমে সবগুলো সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করি। অন্য কোনোভাবে আমরা করি না। পররাষ্ট্রনীতিকে আমরা ফলো করি। এই বিষয় নিয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বলেন, ‘তাদের আগ্রহ ছিল ইন্দো-চায়না রিলেশন নিয়ে, ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে একটা ব্যাপার ছিল, একই সাথে ইউরোপ, আমেরিকার সঙ্গে বাংলাদেশের রিলেশন নিয়ে আলোচনার বিষয় ছিল।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের হিন্দুত্ববাদ জাগরণ নিয়ে তারা একটা প্রশ্ন করেছে। আমরা উত্তর দিয়েছি আমরা কারও ইন্টারনাল বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করি না। আমরা কারও ইন্টারন্যাল ব্যাপারে কথা বলি না। আমরা অন্য দেশের মতাবাদকে সম্মান দেই। ইন্ডিয়াতে কি হচ্ছে না হচ্ছে, চায়নাতে কি হচ্ছে না হচ্ছে; এটা তাদের দেশের জনগণের বিষয়। আমাদের দেখার বিষয় না।’ তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইউএসআইপি প্রতিনিধি দলের সাথে কোনও কথা হয়নি উল্লেখ করে শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘তারা এ বিষয়ে কোন প্রশ্ন করেনি, আমরাও কোনও উত্তর দেইনি।’