টিআইএন॥ জাতীয় সংসদ অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বাজেট পেশ করছেন। এই মুহুর্তে বাজেটের সবচেয়ে আলোচিত দিক হল ব্যাংক একাউন্টে আবগারি শুঙ্ক। অনেকে অনেক রকম পোস্ট দিয়ে অনেক কিছু বুঝাইতে চাইছেন কিন্ত পুরা ব্যপারটা বুঝতে পারেন নাই…হুদাই বিভান্তি ছড়াইছেন। এই ব্যপারে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত কথা হইল – “ব্যাংকে ২০ হাজার টাকার বেশি ব্যাংকে জমা দিলে বা তুললে প্রতি লেনদেনে কমপক্ষে ২০০ টাকা আবগারী কর দিতে হবে।” এই কথাটা ১০০% মিথ্যা বা ভুল। এই ভুলের শুরু করে কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা আর তা আরও বাজে ভাবে ভুলচুল মিশিয়ে পরিবেশন করে সাধারণ মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে।
সাধারনত সেভিংস বা কারেন্ট একাউন্টে সরকার মুলত দুই ধরনের শুঙ্ক বা ট্যক্স বা কর কাটে। প্রথমত, একাউন্টে জমা টাকার প্রাপ্ত লাভের উপর TIN ধারী হলে ১০%, TIN ধারী না হলে ১৫%। দ্বিতীয়ত হল এক্সেস ডিউটি বা আবগারি শুঙ্ক। এই আবগারী শুঙ্ক কাটা হয় বছরে একবার। আবগারি শুঙ্ক বহু আগে থেকেই আপনার একাঊন্ট থেকে কাটা হয়। আমি শিঊর না মনে হয় ১৯৯৩/৯৪ সাল থেকে শুরু। তখন শুঙ্ক পরিমান অনেক কম ছিল তাই কারো গায়ে লাগে নাই…এই আবগারি শুঙ্ক আপানর একাঊন্ট থেকে কাটা হয় প্রতি বছরের শেষ দিনে মানে ৩১ ডিসেম্বর বা অনেক ব্যাংকে ১লা জানুয়ারি। আপনাদের একাঊন্ট চেক করলেই পাবেন। এইবার বাজেটে এই শুঙ্ক এর পরিমান বাড়ান হইছে এই যা।
এইবার আসেন কি হিসাবে বছরের শেষ দিনে একবারই শুঙ্ক কাটা হয় তা হিসাব করি। সারা বছর আপনার লেনদেন ঊপর ভিত্তি করে এই আবগারী শুল্ক কাটা হয়…বর্তমান বাজেটের প্রস্তাবনা মত হিসাবটা এই রকম…সারা বছর আপনার একাউন্টের ব্যালেনস যদি ১০০০০০ এর নিচে থাকে তাহলে কোন আবগারী শুল্ক দিতে হবে না, ব্যালেনস যদি ১ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকার মাঝে থাকে তাহলে ৮০০ টাকা আবগারী শুল্ক দিতে হবে এবং ১০ লক্ষ টাকার ঊপর গেলে ২৫০০ টাকা হবে। এবং এই আবগারী কর বা শুল্ক একবারই, হ্যাঁ “একবারই” এবং “একবারই” কাটা হবে…প্রতি বছর ডিসেম্বর ৩১ তারিখে বা জানুয়ারি ১ তারিখে।
এবার বলি এফডিআর ও ডিপিএস এর কথা। এফডিআর ১/৩/৬/১২ মাস যে মেয়াদেই রাখেন ওই একই হিসাব প্রাপ্ত লাভের উপর TIN ধারী হলে ১০%, TIN ধারী না হলে ১৫%। আর আবগারী কর বা শুল্ক তাও ঐ একই হিসাব এফডিআর এ টাকার পরিমাণ ১০০০০০ এর নিচে থাকে তাহলে কোন আবগারী শুল্ক দিতে হবে না, যদি ১ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকার মাঝে থাকে তাহলে ৮০০ টাকা আবগারী শুল্ক দিতে হবে এবং ১০ লক্ষ টাকার ঊপর গেলে ২৫০০ টাকা হবে। ৩/৬ মাসের এফডিআর এর হিসাবে একটা ধরা আছে। এফডিআর যদি বছরের মাঝে শুরু হয়ে বছরের মাঝেই শেষ হয় তাহলে আবগারী কর বা শুল্ক একবার দিতে হবে। কিন্তু তা যদি এক বছর শুরু হয়ে পরের বছর শেষ হয় মানে অক্টবরে বা নভেম্বরে শুরু হয়ে পরের বছর জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয় তাহলে দুইবার দিতে হবে…এক বছরের বেশি মেয়াদে এফডিআর করলে বছর প্রতি হিসাব হবে।
ডিপিএস এর বেলায় একই কথা যে মেয়াদেই রাখেন প্রাপ্ত লাভের উপর TIN ধারী হলে ১০%, TIN ধারী না হলে ১৫%। আর আবগারী কর বা শুল্ক বছর প্রতি বছর জমা হওয়া টাকার পরিমানের ঊপর ঐ একই ১লক্ষ টাকার উপরে থাকে তাহলে ৮০০ টাকা…ব্লা ব্লা ব্লা…এবং ১০ লক্ষ টাকার ঊপর গেলে ২৫০ টাকা হবে।
অনেক প্রবাসি ভাই দেখি ব্যপক আতংক, টেনশনে আছেন। তাদের বলি আপানাদের পাঠান রেমিটেন্স এ কোন আবগারী কর বা শুল্ক নাই। যত খুশি টাকা পাঠান। হুন্ডি বা বিকাশে বা মোবাইল ব্যাংকিয়ে প্ঠাবেন না। ব্যাংকিং চ্যনেলে বা মানি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে পাঠান। বিদেশ থেকে টাকা পাঠানর জন্য যে ফি দিতে হয় তা সরকার ভর্তুকি দিবে এমন একটা প্রস্তাবনা এবারের বাজেটে দেয়া হয়েছে। পাশ হলেই কোন ফি দিতে হবে না দেশে টাকা পাঠাতে। আশা করি বাজেট নিয়ে অনেকের ভুল ধারনা কাটবে এবার…।
মোট কথা বাজেট এর বিশালত্ত্ব যদিও অনেক বড় কিন্তু আকাঙ্খা এবং সুদুরপ্রাসারী চিন্তার প্রশংসাই করতে হয়। আর যদি সকলের সহযোগীতা পাওয়া যায় এবং এই বিশালায়তনের বাজেট বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে বাংলাদেশ এর উন্নয়ন এবং অগ্রগতি ঠেকায় কে? অনেকে এই বাজেট নিয়ে তাদের নিজস্ব মতামত এবং বিভিন্ন নেতিবাচক কথার ফুলঝুড়ি আওড়িয়েছেন। এতে করে আশা করি জনগন বিভ্রান্ত হয়নি বরং নিজেদের জ্ঞানের দৈওলিয়াত্বই প্রকাশ পেয়েছে। তবে একটি কথা বলতে হয় সময় এখনও আছে প্রশংসা করতে শিখুন এবং গঠনমূলক যুগোপযোগী চিন্তা দিয়ে বাজেট প্রস্তাবনাকে শক্তিশালী করে নিজের ভুমিকা পালন করুন।
রাজনৈতিক নেতিবাচক বিবৃতি থেকে বিরত থাকুন। কারণ আপনাকেও এই একই রকম বাজেট দিতে হবে। এর বিকল্প আর অবশিষ্ট নেই। কারণ দেশ এগুচ্ছে এবং এই অগ্রগামীতার গতি ধরে রাখার নিমিত্তেই এই সুচিন্তিত ও পরিকল্পীত জনবান্ধব বাজেট। গঠনমূলক সমালোচনা করুন এবং নিজের অজ্ঞতা ও হিংসার বহি:প্রকাশ ঘটানো থেকে বিরত থাকুন। জনগণ আপনাকে অনুসরণ কেউ কেউ আবার অনুকরণও করে। তবে এই ডিজিটাল যুগে নিজের জ্ঞানের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ থেকে নিজেকে রক্ষা করার এখনই উপযুক্ত সময়।