প্রশান্তি ডেক্স ॥ যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী টাইম সাময়িকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সাময়িকীটির প্রচ্ছদেও স্থান পেয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণাঙ্গ ছবি। গত বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) ‘শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
সেপ্টেম্বর মাসে নেওয়া প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৭৬ বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্ময়কর রাজনৈতিক নেতা। যিনি এক দশকে গ্রামীণ পাট উৎপাদনকারী ১৭ কোটি মানুষের জাতিকে এশিয়া-প্রশান্ত এলাকার দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে উত্থানের পথ দেখিয়েছেন।
এতে আরও বলা হয়েছে, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের দুই মেয়াদের পর ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা বিশ্বে সবচেয়ে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা নারী রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি ইসলামপন্থিদের পুনরুত্থান এবং হস্তক্ষেপকামী সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।
ব্রিটেনের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার কিংবা ভারতের ইন্দিরা গান্ধীর চেয়ে বেশিবার নির্বাচনে জয়ী হওয়া শেখ হাসিনা আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনে আবারও জয়ী হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এই বিষয়ে সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী জনগণ আমার সঙ্গে আছে। তারাই আমার প্রধান শক্তি।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত কয়েক বছর ধরে শেখ হাসিনাকে ১৯টি হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হতে হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সমর্থকরা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে, পুলিশের গাড়ি ও বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় কয়েক শ’ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো এবারও নির্বাচন বর্জনের অঙ্গীকার করেছে বিএনপি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সদস্যের সংখ্যার দিক থেকে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবদান সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশি অভিবাসীরা এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে বাণিজ্যিক ও শিল্প সমাজে নিহিত। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সরাসরি বিনিয়োগের বৃহত্তম উৎস এবং বাংলাদেশি পণ্য রফতানির শীর্ষ গন্তব্য। ইউক্রেনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আগ্রাসনের নিন্দা জানানো উন্নয়নশীল বিশ্বের কয়েকজন নেতাদের মধ্যে একজন শেখ হাসিনা, যিনি নিজেকে পশ্চিমাদের কাছে প্রয়োজনীয় হিসেবে প্রমাণ করেছেন। প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয়ও দিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক সাফল্য প্রশংসনীয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালে ৭১ বিলিয়ন ডলার জিডিপি থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ৪৬০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হওয়ার মাধ্যমে খাদ্য সংকটের দেশ থেকে খাদ্য রফতানিকারকে পরিণত হয়ে উঠেছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। সামাজিক সূচকগুলোও উন্নত হয়েছে, ৭১ শতাংশ মেয়েরা আজ প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। স্যামসাংয়ের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে চীন থেকে সাপ্লাই চেইন সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশ হাই-টেক ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।