প্রশান্তি ডেক্স ॥ নতুন রেলপথ উদ্বোধন করতে আজ শনিবার (১১ নভেম্বর) কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন নির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন, দেশের প্রথম আইকনিক রেলস্টেশন, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ও গভীর সমুদ্রবন্দরসহ ১৪টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন তিনি। ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন থেকে রামু স্টেশন পর্যন্ত পরিদর্শনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। রেলপথ উদ্বোধন ঘিরে এই পর্যটন নগরীতে বিরাজ করছে উৎসব। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে পুরো শহরে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। জেলা প্রশাসন ও দলীয় নেতাকর্মীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। নগরীজুড়ে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব।
জেলা শহর ঘুরে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নিতে সাজ সাজ রব গোটা কক্সবাজারে। সদর উপজেলার ঝিলংজা চান্দেরপাড়া এলাকায় আইকনিক রেলস্টেশনের পাশের সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে তোরণ। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরে সাঁটানো হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুন। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি ছেয়ে গেছে পোস্টারে। সড়কের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। এখন সড়কের মোড়ে মোড়ে লাইটিং ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।
আগামী ১ ডিসেম্বর হতে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে চালু হচ্ছে ট্রেন। ট্রেন চালু হওয়ার পর এই রুটে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়া যাবে মাত্র ১৮৮ টাকায়।
গত শুক্রবার (১০ নভেম্বর) কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনের উদ্বোধনী প্রস্তুতি সরেজমিন পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে রেল সচিব হুমায়ুন কবির ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেনের সর্বনিম্ন ভাড়া সম্পর্কে এই তথ্য দেন।
এ সময় রেলওয়ে সচিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন শেষে আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করবে বলে আমরা আশা করছি। সেই ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া যেটি ধরা হয়েছে সেটি হচ্ছে ১৮৮ টাকা। আর এটি নন এসি মেইল ট্রেন। সর্বোচ্চ ভাড়া এসি বার্থে ১ হাজার ৭২৫ টাকা। বর্তমানে রেলের যে ভাড়ার হার আছে সেই অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ১ ডিসেম্বর শুধু আন্তঃনগর ট্রেন চালু হবে। পাশাপাশি কমিউটার ও মেইল ট্রেনও চালু হবে।
সচিব বলেন, ভবিষ্যতে এই রুটে পর্যটক কোচ চালু করা হবে। শুধু ঢাকা নয় উত্তর অঞ্চল ও দেশের অন্যান্য অংশ থেকেও কক্সবাজারে রেলপথে আসা যাবে। এতে করে যোগাযোগের নতুন পথ উন্মোচন হবে।
তবে ১ তারিখ থেকে রেল চালু হলেও কক্সবাজারের আইকনিক ঝিনুক স্টেশনে সবরকম সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। পর্যায়ক্রমে এসব সুবিধা চালু করা হবে।
এ সময় বাংলাদেশ রেলের মহাপরিচালক কামরুল আহসান বলেন, ঢাকা থেকে যে ট্রেনটি কক্সবাজার আসবে সেটি সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকা ছাড়বে আর কক্সবাজার এসে পৌঁছাবে ৬টা ৩০ মিনিটে। পর্যায়ক্রমে এই রুটে আরও ট্রেন বাড়ানো হবে।
রেলপথ নির্মাণের আগে কক্সবাজারের সঙ্গে কোনও রেল যোগাযোগ ছিল না। শুরুতে এটি ছিল দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্প। এতে মোট ১২৯ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণের কথা ছিল। পরে রামু থেকে ঘুমধুম অংশের কাজ স্থগিত করা হয়। এখন চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে।
২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু- কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্র জানায়, আজ (শনিবার) সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী এবং প্রথমে তিনি সদর উপজেলার ঝিলংজা চান্দেরপাড়া এলাকায় নির্মিত আইকনিক রেলস্টেশনের উদ্বোধন করবেন। স্টেশন উদ্বোধনের পর সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এরপর ট্রেনে চড়ে রামু পর্যন্ত রেললাইন পরিদর্শন করবেন। পরে মাতারবাড়িতে জনসভায় ভাষণ দেবেন। সেখানে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ও গভীর সমুদ্রবন্দরসহ ১৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং তিনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তরযোগ্য প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ৫৩৪৬৭ দশমিক ৬২২৬ কোটি টাকা।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় রামু, সদর, কুতুবদিয়া ও চকরিয়াসহ প্রতিটি উপজেলা থেকে লাখো লোক জনসভাস্থলে উপস্থিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে পাড়া-মহল্লায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে জোর প্রস্তুতি চলছিল। তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। জনসভায় স্মরণকালের বৃহৎ লোকসমাগম ঘটিয়ে চমক দেখাতে চান জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘রেলপথ উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে আসছেন, এর চেয়ে আনন্দের কিছু নেই। আমরা না চাইতেই এই অঞ্চলের মানুষের জন্য অনেক প্রকল্প উপহার দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগ কক্সবাজারকে ঘিরে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন মাইলফলক খুলতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্য দিয়ে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় আরও একধাপ এগিয়ে যাবে পর্যটন ও বাণিজ্যিক নগরী।’
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজারের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছেন প্রধানমন্ত্রীর। তার জনসভা সফল করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের। জনসভায় স্মরণকালের বৃহৎ লোকসমাগম ঘটাতে চাই আমরা।’
কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া-মহেশখালী) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘আমার নির্বাচনি এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর জনসভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আমরা খুবই সৌভাগ্যবান। এখানে প্রধানমন্ত্রী দেশের বড় বড় প্রকল্পগুলো উদ্বোধন করবেন। এজন্য দ্বীপ উপজেলা মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার মানুষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিরকৃতজ্ঞ। জনসভায় জেলার ৯ উপজেলার নেতাকর্মী ছাড়াও লাখো সাধারণ মানুষ অংশ নেবেন। উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বর্ধিত সভা করে ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি আমরা।’
শেখ হাসিনার জনসভা ও রেলপথ উদ্বোধন ঘিরে জেলাবাসীর মাঝে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। তিনি বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণে পর্যটন নগরীর সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের দাবি ছিল আমাদের বহুদিনের। সেই স্বপ্নপূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য আমরা তার কাছে চিরকৃতজ্ঞ।’
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চালু হলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ঘটবে, বিকশিত হবে দেশের অর্থনীতি উল্লেখ করে সাইমুম সরওয়ার কমল আরও বলেন, ‘এখন থেকে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা সহজে এবং কম খরচে পর্যটন নগরীতে আসা-যাওয়া করতে পারবেন। কক্সবাজার কেন্দ্রিক উন্নয়ন প্রকল্পগুলো অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেবে। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন ঘটবে। সুফল পাবে সবাই।’
কক্সবাজারে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও জনসভা ঘিরে জেলা প্রশাসন এবং অন্যান্য বিভাগের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে ১৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং তিনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। সকাল ১০টায় আইকনিক রেলস্টেশন উদ্বোধন, সুধী সমাবেশ, ট্রেনে চড়ে রামু পর্যন্ত রেললাইন পরিদর্শন এবং দুপুরে মাতারবাড়ির জনসভায় ভাষণ দেবেন।’