১৪ দলের শরিকদের জন্য বরাদ্ধকৃত আসন কয়টি?

প্রশান্তি ডেক্স ॥ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর আসন ছাড় বা সমঝোতা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদে জোটের ৪টি দলের ৮ জন সংসদ সদস্য থাকলেও এবার তিনটি দল পাচ্ছে ৭টিতে ছাড়। দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ছাড় দেওয়া আসনগুলোতে নৌকায় নির্বাচন করবেন শরিকরা। তবে ছাড় পেলেও ১৪ দলের প্রার্থীদের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটের মাঠে লড়তে হবে।

একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আসন ছাড়  চূড়ান্ত হয় গত বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রাতে। ওই দিন ছাড় দেওয়া আসনের তালিকা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। কোন কোন দলের কার কার আসনে ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তা দুই-একদিনের মধ্যে শরিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমির হোসেন আমু বলেন, এবারও ১৪ দলের শরিক দলগুলোর আসন ছাড় মোটামুটি আগের মতোই থাকছে। ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) তিনটি করে এবং জাতীয় পার্টি (জেপি) ও তরিকত ফেডারেশনের একটি করে আসন আছে। সেগুলো মোটামুটি চূড়ান্ত হয়েছে।

সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান সংসদে ১৪ দলের শরিক ৪টি দলের আটজন সংসদ সদস্য আছেন। এর মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির তিনজন এমপি আছেন। এবারও দলটি তিনটি আসনে ছাড় পাচ্ছে। জাসদের তিন এমপি আছেন, যার মধ্যে একজন বাদ পড়লেও নতুন করে আরেকটি আসনে ছাড় পাচ্ছে দলটি। জাতীয় পার্টির (জেপি) একজন এমপি আছেন। এবারও তিনি ছাড় পাচ্ছেন।

এ ছাড়া বর্তমান সংসদে চট্টগ্রাম-২ আসনে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এবার আওয়ামী লীগের ছাড়ের তালিকা থেকে বাদ পড়তে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে বিষয়টি সুনির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করেননি ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু।

সূত্রমতে, এবার ৭-৮টি আসনে ছাড় দেবে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে ১৪ দলের নেতাদের ৭টি এবং  সুপ্রিম পার্টিকে এবার একটি আসনে ছাড় দেবে দলটি। ছাড় দেওয়া আসনে শরিকদের প্রার্থীকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেবে আওয়ামী লীগ। তবে এসব আসনে দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরানোর কোনও উদ্যোগ নেবে নেওয়া হবে না। এ নিয়ে ১৪ দলের শরিকরা অস্বস্তিতে থাকার কথা একাধিক বৈঠকে জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শরিকদের সঙ্গে আসন ছাড়ের সিদ্ধান্ত হওয়ায় নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে। এর ফলে এসব আসনে আওয়ামী লীগের কোনও প্রার্থী থাকবে না। তবে নৌকা প্রতীক পেলেও শরিকদের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সঙ্গে ভোটের মাঠে লড়তে হবে, প্রতিদ্বন্ধিতা করেই তাদের বিজয়ী হয়ে আসতে হবে।

জানা গেছে, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বরিশাল-৩, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ ও মুস্তফা লুৎফুল্লাহ সাতক্ষীরা-১ আসনে ছাড় পাচ্ছেন। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে কুষ্টিয়া-২, এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনকে বগুড়া-৪, মোশাররফ হোসেনকে লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ছাড় দেওয়া হবে। দলটির সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার (ফেনী-১) ছাড়ের তালিকা থেকে বাদ পড়লেও পরে সংরক্ষিত আসনে এমপি বনানো হতে পারে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদের একাধিক নেতা বলেন, আসন সমঝোতার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে না এবার। শুক্র বা শনিবারের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টি-জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে পিরোজপুর-২ আসনে ছাড় দেওয়া হচ্ছে। দলটির সাধারণ সম্পাদক শেখ শহীদুল ইসলামকে ঢাকা-১৪ আসনে ছাড়ের বিষয়ে আলোচনা হলেও এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ২৯৮ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর (কুষ্টিয়া-২) আসন বাদে ১৪ দলীয় শরিকদের ৭টি আসনেও প্রার্থী দেয় দলটি। এ নিয়ে জোটের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হলে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ৪ ডিসেম্বর বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেখানে ১৪ দলের জোটগতভাবে এবং নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হলেও আসন ছাড়ের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়টি সমন্বয় করতে জোটের মুখপাত্র আমির হোসেন আমুকে প্রধান করে ৬ সদস্যের একটি কমিটি করে দেন শেখ হাসিনা।

এরপর মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে আমুর বাসায় বৈঠক করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বে দল দুটির সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যরা। সেখানেও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে রবিবার (১০ ডিসেম্বর) সংসদ ভবন এলাকার এমপি হোস্টেলে আওয়ামী লীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন ১৪ দলের নেতারা। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমুর সভাপতিত্বে এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিতিতে হওয়া ওই বৈঠকেও আসন ছাড় চূড়ান্ত হয়নি।

জোট সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের কাছে এবার ৪০টি আসন চেয়ে অন্তত ২০ আসনে ছাড় দাবি করে দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলগুলো। গেলো বারের চেয়েও এবার বেশি আসন চাওয়ায় তিন দফা বৈঠকের পরও সমঝোতা ঝুলিয়ে রাখে আওয়ামী লীগ। সময় নিয়ে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং পরে জানানো হবে বলে জানান দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ নিয়ে একাধিক বৈঠকে শরিক দলগুলোর নেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানালেও এবার আসন সংখ্যা একটি কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published.