প্রশান্তি ডেক্স ॥ ‘বিগত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আন্দোলন-কর্মসূচি, হরতাল-অবরোধের সিদ্ধান্ত, অতীতের ভুলত্রুটি বিশ্লেষণ করে মৌখিকভাবে জানানো হলেও বিএনপির কোনও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তারা আসলে আমাদের আলোচনা ‘রিভিউ’ করবে কিনা, তাও এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। ফলে, স্পষ্টত এখানে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে’। এভাবেই বলছিলেন বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ-ধারায় যুক্ত গণতন্ত্র মঞ্চের একজন নেতা।
গণতন্ত্র মঞ্চের এই নেতার ভাষ্য, ‘সর্বশেষ ১৩ জানুয়ারি গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেন বিএনপির নেতারা। সেই বৈঠকের পর এখনও কোনও ফলোআপ হয়নি।’
মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, গত বুধবার (৩০ জানুয়ারি) গণসংহতি আন্দোলনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে ‘ভারত ইস্যুতে’ অবস্থান জানানোর পরামর্শের পর বুধবার সীমান্ত ইস্যুতে বিবৃতি দেয় মঞ্চ।
বিগত কয়েকদিন ধরে সীমান্তে দুইজন বাংলাদেশি হত্যার বিষয়ে পৃথকভাবে বিবৃতি দিয়ে আসছিল মঞ্চের দলগুলো। এ বিষয়ে মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে ১৩ জানুয়ারির পর ফরমাল কোনও মিটিং হয়নি।’
অন্তত ৩৯টি রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ-ধারায় কর্মসূচি পালন করে আসছে। এসব দল ও জোট হলো— গণতন্ত্র মঞ্চ (৬ দলীয় জোট), ১২ দলীয় জোট, গণফোরাম-পিপলস পার্টি (দ্বিদলীয় জোট), সমমনা জোট (১১), গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য (৪ দল)। এককভাবে পালন করেছে বিএনপি, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
১২ দলীয় জোটের একটি সূত্র জানায়, নির্বাচনের পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের স্থায়ী কমিটির সঙ্গে গুলশানে জোটের বৈঠক হয়। সেই বৈঠক ছিল সৌজন্য বিনিময় আর ধন্যবাদজ্ঞাপনের। ওই বৈঠকে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পক্ষ থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন চলমান এবং নতুন করে উদ্যোগ শুরু করার আহ্বান জানানো হয়।
জোটের অন্যতম নেতা শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, ‘আমাদের একদফা আন্দোলনে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন হয়নি। এ কারণে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আমাদের চলমান আন্দোলন-কর্মসূচিতে ভিন্নমাত্রা যোগ হবে। যোগাযোগের মাত্রাও ভিন্ন হবে। সবকিছুকে এক সুতোয় গেঁথে নিতে একটু সময় লাগবে।’
নতুন কর্মসূচি প্রণয়ন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির-কৌশল নির্ধারণ করতে কোনও আলোচনা শুরু করেনি বিএনপি। গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলছেন, আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি দ্রব্যমূল্য ইস্যুতে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। তবে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের প্যাটার্নে পরিবর্তন আসবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া ও লিয়াজোঁ কমিটির অতীত কার্যক্রমের ভিত্তিতে যুগপৎ এগোবে না। সেক্ষেত্রে মূল সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে লিয়াঁজো কমিটির ভূমিকাই চূড়ান্ত বলে মানতে হবে।’
নতুন কর্মসূচির ক্ষেত্রে বিএনপির কারাবন্দি নেতাদের মুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। আপাতত বিএনপি কোনও অবস্থানে না থেকে গ্রাজুয়ালি মুভমেন্ট সৃষ্টি করার প্রক্রিয়া হাতে নিতে পারে, এমন দাবি মঞ্চের একজন নেতার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘আমরা যেকোনও কর্মসূচি দেওয়ার আগে লিয়াজোঁ কমিটি যোগাযোগ করেন। তাদের মতামত নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেই।’ নতুন কর্মসূচির ক্ষেত্রে কী ভাবছে বিএনপি— এমন প্রশ্নে সেলিমা রহমানের মন্তব্য, ‘সময় হলেই জানতে পারবেন।’
বিএনপির একজন প্রভাবশালী দায়িত্বশীল মনে করছেন, বেশ কয়েকটি কারণে বিএনপির অপেক্ষা করতে হচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশি কিছু বিষয়ে মনোযোগ রাখায় বিএনপির নেতৃত্বকে এগুলোও বিবেচনায় নিতে হচ্ছে। বিশেষ করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট। তিনি মুক্ত না হলে পুরো প্রক্রিয়া নতুন কোনও আকার নেবে না। দলের ও দলের বাইরের সবাই তার মুক্তির অপেক্ষা করছে।
সক্রিয় এই দায়িত্বশীল উল্লেখ করেন, সামনে রমজান, ঈদ। দল গোছানো, পুনর্গঠন বা শূন্যপদে নিয়োগ নাকি নতুন রাজনীতি হাজির করবে এ নিয়েও আলোচনা আছে। এছাড়া, আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের নির্বাচন, মিয়ানমার পরিস্থিতিও আমলে নিতে হচ্ছে। এসব কারণে নতুন কৌশল প্রণয়নে সময় লাগতে পারে।