আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত বুধবার রাতে সুইডেন পৌঁছে বিরল অভ্যর্থনা পেয়েছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন লোফভেনের আমন্ত্রণে তিনি এ সফর করছেন। স্থানীয় সময় রাত ৯টা ৪০ মিনিটে স্টকহোম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অরলান্ডায় এসে পৌঁছলে সুইডেন সরকারের চিফ অব প্রটোকল ক্লাস মলিন, বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম সারোয়ার ও তাঁর স্ত্রীসহ সুইডেনের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। বিমানবন্দরে দেশটির সামরিক বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদর্শন করে। উল্লেখ্য, সুইডেনে আগত কোনো সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানকে সামরিক বাহিনীর গার্ড অব অনার দেওয়ার নজির নেই। বিশ্বের সুপারপাওয়ার হিসেবে বিবেচিত দেশগুলোর রাষ্ট্রনায়করাও এর আগে এ সম্মান পাননি বলে জানান স্টকহোমে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। সুইডেন প্রধানমন্ত্রীর অফিস এ বিরল সম্মানের বিষয়ে দুই দেশের অত্যন্ত গভীর ও উষ্ণ সম্পর্কের দিকে ইঙ্গিত করেছে। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে শেখ হাসিনাকে মোটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে গ্র্যান্ড হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়।
শেখ হাসিনা ও স্টিফেন লোফভেনের মধ্যে গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় সুইডিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয় । এতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ও বাণিজ্য উন্নয়নের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। দুই নেতার শীর্ষ বৈঠক শেষে বাংলাদেশ-সুইডেন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে একটি যৌথ ইশতেহার ঘোষণাপত্র সই হয়েছে। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদারে সুইডেন-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (এসবিবিসি) এবং নর্ডিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এনসিসিআই, ঢাকা) মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। বৈঠক শেষে সুইডিশ প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে যোগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। সন্ত্রাস মোকাবেলায় দুই দেশ একযুগে কাজ করার অঙ্গিকারাবদ্ধ হয়। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে সুইডেন অংশী হয়ে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী রাজকীয় প্যালেসে সুইডেনের রাজা কার্ল গুস্তাফের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। সুইডিশ উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসাবেলা লেভিন, বিচার ও অভিবাসন মন্ত্রী মরগান জোহানসন এবং সুইডেনের ডেপুটি স্পিকার শেখ হাসিনার সঙ্গে গ্র্যান্ড হোটেলে এসে সাক্ষাৎ করেন। গত ১৫ জুন সন্ধ্যায় তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রধানমন্ত্রী গত ১৬ জুন সকাল ১০টায় বাংলাদেশ-সুইডেন ব্যবসা ও বিনিয়োগ ফোরামে বক্তব্য দিয়েছেন। এর আগে সুইডিশ পোশাক জায়ান্ট এইচঅ্যান্ডএম, এবিবি ও দেশটির সবচেয়ে বড় ইনভেস্টর গ্রুপ জ্যাকব ওয়ালেনবার্গের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন তিনি। তিন দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার ১৭ জুন লন্ডন হয়ে দেশে ফিরেন। এর আগে গত মঙ্গলবার বিকেলে লন্ডন পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন। লন্ডনে ২৪ ঘণ্টা যাত্রাবিরতির পর তিনি বুধবার বিকেলে স্টকহোমের উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করেন।