প্রশান্তি ডেক্স॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লালের নির্দেশে বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিক/ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনায় ১০টি শর্ত পালন করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর ব্যত্যয় হলে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
গত বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়-
১) বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের লাইসেন্সের কপি ওই প্রতিষ্ঠানের মূল প্রবেশ পথের সামনে দৃশ্যমান স্থানে অবশ্যই স্থায়ীভাবে প্রদর্শন করতে হবে।
২) সব বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহের জন্য একজন নির্ধারিত দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা/কর্মচারী থাকতে হবে এবং তার ছবি ও মোবাইল নম্বর দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শন করতে হবে।
৩) যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতাল হিসেবে আছে, কিন্তু শুধু ডায়াগনস্টিক অথবা হাসপাতালের লাইসেন্স রয়েছে তারা লাইসেন্স ছাড়া কোনোভাবেই নামে উল্লেখিত সেবা দিতে পারবে না।
৪) ডায়াগনস্টিক সেন্টার/প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির ক্ষেত্রে যে ক্যাটাগরিতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত শুধু সেই ক্যাটাগরিতে নির্ধারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোনোভাবেই অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না। ক্যাটাগরি অনুযায়ী প্যাথলজি/মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি ও রেডিওলজি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে।
৫) বেসরকারি ক্লিনিক/হাসপাতালের ক্ষেত্রে লাইসেন্সের প্রকারভেদ ও শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী সব শর্তাবলি বাধ্যতামূলকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৬) হাসপাতাল/ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়োজিত সব চিকিৎসকের পেশাগত ডিগ্রির সব সনদ, বিএমডিসি’র হালনাগাদ নিবন্ধন ও নিয়োগপত্রের কপি অবশ্যই সংরক্ষণ করতে হবে।
৭) হাসপাতাল/ক্লিনিকের ক্ষেত্রে যেকোনও ধরনের অপারেশন/সার্জারি/প্রসিডিউরের জন্য অবশ্যই রেজিস্টার্ড চিকিৎসককে সার্জনের সহকারী হিসেবে রাখতে হবে।
৮) কোনও অবস্থায়ই লাইসেন্সপ্রাপ্ত/নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়া চেম্বারে অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেন্থেসিয়া দেওয়া যাবে না। বিএমডিসি স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অ্যানেন্থেসিস্ট ছাড়া যেকোনও ধরনের অপারেশন/সার্জারি/ইন্টারভেনশনাল প্রসিডিউর করা যাবে না।
৯) সব বেসরকারি নিবন্ধিত/লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল/ক্লিনিকে লেবার রুম প্রটোকল অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
১০) নিবন্ধিত/লাইসেন্সপ্রাপ্ত হাসপাতাল/ক্লিনিকে অপারেশন থিয়েটারে অবশ্যই অপারেশন থিয়েটার এটিকেট মেনে চলতে হবে।
উল্লেখ্য, রাজধানীতে কিছু দিনের ব্যবধানে তিনটি মৃত্যুর পেছনে অ্যানেস্থেসিয়ার ভুল প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। এরপরই স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এসব নির্দেশনা এলো।
গত মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) খতনা করাতে গিয়ে আহনাফ তাহমিদ আয়হাম নামের ১০ বছর বয়সী একটি শিশুর মৃত্যু হয় রাজধানীতে। মালিবাগের জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিক্যাল চেকআপ সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। খতনা করার জন্য আংশিক অবশ না করে পুরো অজ্ঞান করা হয় শিশুটিকে। অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়ার পর আর জ্ঞান ফেরেনি তার। পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পর যে চিকিৎসকের অধীনে ভর্তি করা হয়েছিল তিনি সেখান থেকে চলে যান। এই ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন শিশুটির বাবা। তাতে দুই জন চিকিৎসককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং মেডিক্যাল সেন্টারটি সিলগালা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এর আগে গত ৩১ ডিসেম্বর বাড্ডার মাদানী অ্যাভিনিউয়ের ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খতনা করার জন্য নেওয়া হয় পাঁচ বছর ৯ মাস বয়সী আয়ান আহমেদকে। তাকে অস্ত্রোপচারের আগে পুরোপুরি অজ্ঞান করার জন্য অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়। জ্ঞান না ফেরায় তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে এনে লাইফসাপোর্টে রাখা হয়। পরে গত ৭ জানুয়ারি দিবাগত রাত ১১টা ২০ মিনিটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডির বেসরকারি ল্যাব এইড হাসপাতালে পেটে গ্যাসের সমস্যায় এন্ডোস্কপি করাতে গিয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে রাহিব রেজা নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, ল্যাব এইড হাসপাতালে পরীক্ষার রিপোর্ট না দেখেই রাহিব রেজাকে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়। শারীরিক জটিলতার মধ্যেই তার এন্ডোস্কপি করা হয়। যে কারণে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এবং একপর্যায়ে শারীরিক অবস্থা আরও জটিল হয়। তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।