প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ পূর্বাঞ্চলীয় রণক্ষেত্রে ইউক্রেন সম্প্রতি একটি ব্যাটালিয়ন আকারের রুশ সেনাদের হামলা প্রতিহত করেছে। প্রায় পাঁচ মাসের মধ্যে এটিই এই মাত্রার আক্রমণ প্রথম। হামলাটি প্রতিহত করার মাধ্যমে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর টিকে থাকার শক্তি প্রমাণিত হচ্ছে। একই সঙ্গে তা উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। আর তা হলো রাশিয়া ইউক্রেনে আরও বড় আকারের হামলা চালাতে ক্রমাগত উৎসাহী হয়ে উঠছে।
গত রবিবারের এই হামলায় তিন ডজন ট্যাংক, এক ডজন পদাতিক বাহিনীর সাঁজোয়া যান ছিল। আভদিভকার কাছে টনেঙ্কে গ্রামে এই হামলা চালায় রুশ সেনারা। ১৭ ফেব্রুয়ারি আভদিভকা দখলে নেওয়ার পর থেকে শহরটির পশ্চিম দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে তারা। ইউক্রেনীয় এক সেনা জানিয়েছেন, রাশিয়ার ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ ধ্বংস করা হয়েছে।
রাশিয়ার স্টর্ম-জেড হামলাকারী বাহিনীর এক প্রশিক্ষক বলেছেন, শুরুটা খুব ভালো ছিল। আমরা সমন্বিত হামলা চালিয়েছি। পরে মধ্যাহ্নভোজ পর্যন্ত আমরা টিকে ছিলাম। পরে আমাদের কামানের গোলা কমে যায়। এরপর বড় ধরনের ক্ষতি শুরু হয়।
তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, লড়াইয়ের শেষের দিকে যুক্ত হওয়া যানগুলোর কোনও ক্ষতি হয়নি। যা ইঙ্গিত দিচ্ছে স্থানীয় রুশ প্রতিরক্ষা বাহিনী হয়ত ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। রুশ প্রশিক্ষক বলেছেন, সতর্কতার সঙ্গে আমার পরামর্শ হলো, এমন নিয়মিত হামলা শেষ পর্যন্ত শত্রুর আক্রমণের সামর্থ্য কমিয়ে দেয়।
এই লড়াইয়ের আগের দিন মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছিলেন, পিছু না হটার উপায় খুঁজছি আমরা। যুক্তরাষ্ট্রের কোনও সহযোগিতা যদি না থাকে তাহলে এর অর্থ হবে কোনও আকাশ প্রতিরক্ষা নেই, কোনও প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র নেই, ইলেক্ট্রনিক যুদ্ধের জন্য কোনও জ্যামার নেই, ১৫৫ মিমি কামানের গোলা নেই। এর অর্থ হলো আমরা পিছু হটবো খুব ধীরে ধীরে।
গত বছর ডিসেম্বরে কংগ্রেসের কাছে ইউক্রেনের জন্য ৬০ বিলিয়ন ডলার সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি অনুগত কয়েকজন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা তা আটকে দিয়েছেন। নভেম্বরে মার্কিন নির্বাচনে জয়ী হয়ে আবারও হোয়াইট হাউজে ফিরতে আগ্রহী ট্রাম্প।
এই ঘাটতি মোকাবিলায় এগিয়ে আসে ইউরোপ। চেক প্রজাতন্ত্র একটি উদ্যোগ নিয়েছে, এর আওতায় দেশটিকে লাখো কামানের গোলা সংগ্রহ করে ইউক্রেনে পাঠানো হবে। ফ্রান্সও কয়েক শ’ পুরনো সাঁজোয়া যান দিতে সম্মত হয়েছে।
ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ওলেক্সান্ডার সিরস্কি সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পশ্চিমা সামরিক সহযোগিতার প্রবাহ নিয়মিত থাকলে আভদিভকার পতন হতো না। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে যে পাল্টা আক্রমণ শুরু হয়েছিল আরও টেকসই হতো। ওই পাল্টা আক্রমণে খারকিভ ও খেরসনের বিশাল অংশ পুনরুদ্ধার করেছিল ইউক্রেন।
তিনি বলেছিলেন, ইউক্রেনের সেনা সংখ্যা কম। রাশিয়ার সঙ্গে এই অনুপাত ৬:১। কিন্তু এরপরও রাশিয়া বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ছে। গত দুই মাসে ৫৭০ ট্যাংক, ১৪৩০টি সাঁজোয়া যান ও ১৬৮০ কামান ব্যবস্থা হারিয়েছে রুশবাহিনী। আর তা সম্ভব হয়েছে নিজেদের কাছে অস্ত্র কাজে লাগাতে কৌশল পরিবর্তন করার ফলে।
আভদিভকার পতনের পর রণক্ষেত্র মোটামুটি অটুট রাখতে সক্ষম হয়েছে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী। তবে অপর এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেছেন, রাশিয়ার আরেকটি বড় আকারের হামলা প্রতিহত করতে প্রস্তুত নয় তার সেনাবাহিনী। মিত্ররা অনেক সময় খুশি যে আমরা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পারছি। কিন্তু আমি বলছি আমাদের এখন সহযোগিতা প্রয়োজন।
অবশ্য এই স্থিতিশীলতা শতভাগ নয়। রুশ সেনারা ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অগ্রগতি আভদিভকার আশেপাশের অঞ্চলে ঘটছে। গত রবিবারের পরাজয়ের পরও টনেঙ্কো গ্রামের পশ্চিমে অল্প অগ্রগতি হয়েছে তাদের। সোম ও মঙ্গলবার সেমেনিভকা ও বারদিচিতেও কিছুটা এগিয়েছে তারা।
দক্ষিণেও তারা নভোমিখাইলিভকাতেও এগিয়েছে রুশ বাহিনী। উত্তরাঞ্চলের রণক্ষেত্রে তারা বিলোহরিভকাতে মঙ্গলবার হামলা শুরু করেছে।
মঙ্গলবার রুশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক কনফারেন্স কলে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু বলেছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৪০৩ বর্গ কিলোমিটার এগিয়েছেন তারা।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংক ট্যাংক দ্য ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার এই অগ্রগতি ৩০৫ বর্গ কিলোমিটার বলে উল্লেখ করেছে।