আইন আছে এবং আইনের ব্যবহারও আছে। তবে এই ব্যবহারের মধ্যেই রয়েছে ইতি ও নেতিবাচকতা। আইনের ব্যবহারের স্বচ্ছতা যারপরনাই দেখা মিলে। তবে এর বিপরীতে আইন ব্যবহৃত হতে দেখা যায় এবং যেখানে আইনে নেই সেখানে নিজস্ব এবং মনগড়া আইন তৈরী করা হচ্ছে এমনকি এর ব্যবহারে পবিত্র রাষ্ট্রের অসম্মানও করা হচ্ছে। কে রাখে কার খবর এখন। তবে আইনের ক্ষেত্রে এবং এর প্রয়োগের ক্ষেত্রে ইতি ও নেতিবাচক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বলা যায় “পানি শুধু নিচের দিকেই গড়াই”। আমাদের দেশের আইন খুবই উপযোগী এবং স্বচ্ছ কিন্তু এর ব্যবহারে নেই স্বচ্ছতা। এই ক্ষেত্রে প্রয়োজন খোদায়ী আইন এবং খোদায়ী মানুষ। যাদের মধ্যেদিয়ে আইনের প্রয়োগ পরিপূর্ণ হবে এবং শাসন নিশ্চিত হবে। যা দুনিয়ার তা দুনিয়াতে থাকবে এবং যা আখেরাতের তা আখেরাতের জন্যই থাকবে। এখানে একটি প্রশ্ন আইন কি কখনো কাউকে পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পেরেছে? অথবা আইন কি সকলকেই সন্তুষ্ট করতে পেরেছে? এই ক্ষেত্রে আমার ভাবনায় না। রাষ্ট্রীয় আইন, সামাজিক আইন, পারিবারিক আইন, আন্তর্জাতিক আইন সবই বাতাসের পিছে দৌঁড়ানে বা দোল খাওয়া নল খাগড়ারই মত। কোন আইনই পরিপক্ক নয় এবং কোন আইন দ্বারাই মানুষ বা সৃষ্টি উপকৃত হতে পারেনি এমনকি পারবেও না। এটা আমার উপলব্দি ও বাস্তবতার নিরীখে অভিজ্ঞতার অর্জন।
ভিসা প্রাপ্তির আইন এখন প্রতিপালন হচ্ছে দেশে ও বিদেশে। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যায় এই ভিসা প্রাপ্তির আইনের ব্যর্ত্যয় ঘটছে স্বয়ং ভিসা অফিসেই। তারা নিজেরাই আইন ভঙ্গ করে নিজেদের মত আইন ব্যবহার করছেন যা সংবিধান, আইন, অধ্যাদেশ এমনকি নিজেদের কোন লিখিত আদেশে নেই। একজন এনজিও কর্মী তাঁর ওয়ার্ক পারমিট এর আবেদন এবং এটাষ্ট্রেশন দিয়ে ভিসা প্রাপ্তির আবেদন করবে। এই আবেদন নিয়ম মাফিক ১ বছরের হবে। কারণ তার ওয়ার্ক পারমিট এক বছরের হবে। এই সময় সে নিরাপত্তা ছাড়পত্রের আশায় অপেক্ষা করবে এবং কর্মসম্পাদন করবে। কিন্তু নিরাপত্তা ছাড়পত্র না পেলে প্রতিষ্ঠান পুনরায় বিবেচনাপ্রসুত পুনতদন্ত করার আবেদন করবে। যাকে আমরা আপিল বলে থাকি। ঐ পুর্ন তদন্তে যদি একই ফল হয় তবে তিনি দেশ ত্যাগ করবেন। এটাই হলো নিয়ম। কিন্তু ভিসা নিতেতে ঐ বিদেশীর জন্য শুধুমাত্র তিনমাস এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে ৬মাস দেশে অবস্থান এবং কর্ম সম্পাদন করার সুযোগ আছে। এর বেশী হলে তাকে জরিমানা গুনতে হবে। এই যখন পরিস্থিতি তখন এনজিও কর্মী কেন বাংলাদেশে আসবে এবং কেন এসে এই খয়রানির স্বিকার হবে? তবে যেই প্রতিষ্ঠান তাকে নিয়োগ দিয়েছে সেই প্রতিষ্ঠান দায়-দায়িত্ব নিতে যথেষ্ট পারঙ্গম নহে এমনকি অসহায়ত্বের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়।
ইদানিং ভিসা অফিস অলিখিতভাবে নানান খয়রানি করে যাচ্ছে। যেমন ভিসার আবেদন করার সময় তিনমাসের ভিসা চাওয়ার রেওয়াজ। যদি তার ওয়ার্কপারমিট হয় তখন ফাইল তিনমাসের অনুমোদন হয়েছে তাই আর নতুন করে এক বছরের ভিসা দেয়া যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। যাদের সিকিউরিটি এবং কর্মানুমতি চলমান এই সকলদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট এর আবেদন দিয়ে ১ বছরের ভিসার আবেদন করা যাবে না বরং তিন মাসের আবেদন করতে হবে এই অলিখিত নিয়ম সম্পূর্ণই অবমাননাকর। রাষ্ট্রের সেবা যন্ত্রগুলি যখন এই অবস্থায় তখন দুর্নিতীপরায়নগন দুনির্তীতে চ্যাম্পিয়ান হতে প্রকাশ্যে প্রতিযোগীতায় লিপ্ত। ওয়ার্ক পারমিট আবেদনের পর ১৫দিনের মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায় কিন্তু পনের দিন অপেক্ষা করে ভিসার জন্য আবেদন করলে গুনতে হয় জরিমানা তাই ওয়ার্ক পারমিট আবেদন দিয়েই ভিসার আবেদন করা হয় এবং পরবর্তীতে ওয়ার্ক পারমিট জমা দেয়া হয় এবং ভিসা সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে ভিসা অফিসের স্বেচ্ছাচারিতায় ভিসা আবেদনের ক্ষেত্রে কোম্পানী এবং এনজিও উভয়ই বিব্রতবোধ করছে। ইদানিং ভিসা অফিসের এই অন্যায় দেখার কেউ নেই।
আরেকটি বিষয় হলো ভিসার আবেদন করার পর নিরাপত্তা ছাড়পত্র ও ওয়ার্ক পারমিট পেতে ৬-৭ মাস দেরী হলো এবং ৬-৭মাস পরে ভিসার জন্য গেলে প্রথমেই বলে যে আপনার ভিসার আবেদন’র মেয়াদ শেষ। আপনাকে আবার নতুন করে আবেদন করতে হবে। এই ক্ষেত্রে ৩০০০০টাকা জরিমানা এবং এক বছরের ভিসা ফি দিতে হবে। বিবেকের প্রশ্ন হলো এরজন্য ভিসা প্রার্থী দায়ী নাকি সরকারের সংস্থাগুলো দায়ী? ভিসা প্রার্থী কেন অতিরিক্ত জরিমানা এবং ভিসা ফি দিতে যাবে? ভিসা প্রার্থীর কি অপরাধ? এর কি কোন যৌক্তি কারণ আছে? না নাই বরং এর মাধ্যমে সরকারের ভাবমূর্তী ও দেশের সুনাম বিসর্জনের দিকে যাচ্ছে। একজন বিদেশী উদ্যোক্তা এই বিড়ম্বনার স্বীকার। তিনি ভিসা অফিসে হাজির হয়ে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু তিনি অখুশী হয়ে শেষ অব্দি ৩০০০০টাকা জরিমানা দিয়ে দুই বছরের ভিসা প্রাপ্তির প্রত্যাশায় নতুন করে আরো একবছরের ফি দিয়ে ভিসা প্রাপ্তির অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু দু:ভাগ্য হলো ওনাকে দুইবছরের ভিসা ফি নিয়ে এবং জরিমানা নিয়ে এক বছরের ভিসা দিয়ে বিদায় করে যার ফলে তিনি তার লোক দুইদিন ভিসা অফিসে পাঠান এর ফয়সালা করার জন্য কিন্তু এখনও সেই ফয়সালা হয়নি। আরো কত রকমের হয়রানি ভোক্তভোগীরাই জানে তবে এই হয়রানির পরিসমাপ্তি কবে হবে এবং কে টানবে এই প্রশ্ন এখন সেবা গ্রহীতাদের।
ভিসা নিতিমালা সরকার করেছে এবং এই নীতিমালা যথেষ্ট তবে এর সঙ্গে সিকিউরিটি এবং ওয়ার্কপারমিটসহ ৪টি সংস্থার সমন্বয় জরুরী। সংস্থাগুলো হলো, বিডা, এনএসআই, এসবি, পাসপোর্ট /ভিসা অফিস (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়), এনজিও ব্যুরো। আর এই সমন্বয়ের মাধ্যমেই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ সফল হবে।
নিরাপত্তা ছাড়পত্রের ক্ষেত্রেও যেসকল জটিলতা বিদ্যমান তা দুর করতে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। ব্যক্তিগত লালসার কারণে দেশের ভাবমূর্তী নষ্ট হচ্ছে। উদ্যোক্তাসহ বিদেশী কর্মীগণ এই ব্যক্তি লালসায় স্বীকারে পরিণত হয়ে বিরুপ ধারনা নিয়ে দেশ ত্যাগ করছে। তবে বিডা, এনএসআই, এসবি এই নিরাপত্তা ছাড়পত্রের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তায় একসঙ্গে কাজ করা উচিত। কোনক্রমেই কেউ কাউকে খেয় বা ছোট করে বাহাদুরি বা দেশের ক্ষতি সাধন করা সমুচিন হবে না। যেসকল প্রকর্মিগন দেশে আসছেন তারা অভিজ্ঞ এবং মেহমান তাই তাদেরকে আনা হয়েছে সুতরাং নিজের ক্ষতি বা সর্বনাশ না করার সবিনয় অনুরোধ করছি। আর যারা উদ্যোক্তা হিসেবে এই দেশে ব্যবসা করতে আসছে তাদেরকে সম্মান করুন এবং তাদের নিরাপত্তা ছাড়পত্র, ওয়ার্ক পারমিট এবং ভিসা সহজিকরণে ভুমিকা রাখুন। যেসকল সমস্যা এখনও বিরাজমান সেই সমস্যার সমাধানে কাজ করতে বিডা, এনএসআই, এসবি, এনজিও ব্যুরো ও এনজিও এবং কোম্পানি গুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে সমস্যা সমাধানে একযোগে কাজ করুন নতুবা সমস্যার সমাধান হবে না এমনকি সমস্যা বেড়েই চলবে আর ক্ষতির বিড়ম্বনায় পড়বে দেশ; ব্যবসা এবং কমংসস্থান। তেলের মাথায় তেল দেয়ার স্বভাব এখনও বিরাজমান এমনকি মোসাহেবী চলমান। তাই এই সংস্কৃতি থেকে বেড় হওয়া জরুরী। নবাব সিরাজ-উ-দৌলা যুগের অবসান হয়েছে ঠিকই কিন্তু মোসাহেবী এবং তেলের মাথায় তেল দেয়া সংস্কৃতি এখন অবসানের পথে যায়নি বরং এর ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইনটি যথোপযুক্তি কিন্তু এর ব্যবহারে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয়েছে আমাদের নিরীহ সমাজ। কেউ কারো কথা শুনে না বরং উপরের নির্দেশ এই বাক্যটি উচ্চারণ করে মনগড়া রিপোর্ট এমনকি যে অন্যায় করেনি অথবা বিষয়টির সঙ্গে যুক্ত নয় তাদেরকেই অন্যায়কারী হিসেবে অভিযুক্ত করে বছরের পর বছর ধরে হয়রানি করে যাচ্ছে। শত প্রমান থাকা সত্ত্বেও ঐ অপরাধিদের দিকে আঙ্গুল তোলা হচ্ছে না বরং নিরিহ ও নিরপরাধীদের উপর দায় চাপিয়ে আইনটিকে অপমানিত এবং অপদস্ত ও অযোগ্য করে তুলেছে। কেন অপরাধিদের দিকে আঙ্গুল উঠায়নি কারণ তারা ক্ষমতার শিখরে অথবা ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সংস্পর্শে ও ছায়াতলে বসবাস করছে। এই হলো বাস্তবতা তাই আসুন আমরা আইনের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সৃষ্টিকর্তার স্মরণাপন্ন হয় এবং আমাদের সকলের বিচারই সৃষ্টিকর্তা করবেন ভেবে নিজেদেরকে বিচারের আওতামুক্ত রাখার ব্যবস্থায় মনোনিবেশ করি। আরো অনেক বিষয়াবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং প্রয়োজনে বাস্তব ঘটনাবলীর দৃষ্টান্ত দিয়ে আগামীর পরিচ্ছন্নতায় সহযোগীতা করব। পরিশেষে একটি ে¯্লাগান দিয়ে (যা আল্লাহর কালামের অংশ) শেষ করছি। ‘‘যা সত্য যা উপযুক্ত যা সৎ যা খাঁটি যা সুন্দর যা সম্মান পাবার যোগ্য, মোট কথা যা ভাল এবং প্রশংসার যোগ্য সেই দিকে তোমরা মন দাও।”