প্রশান্তি ডেক্স ॥ চলতি এপ্রিল মাসের ৫ এবং ৬ শুক্র ও শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি এবং পরের দিন রবিবার (৭ এপ্রিল) শবে কদরের ছুটি শেষে গত সোমবার (৮ এপ্রিল ) সরকারি অফিস আদালতের সঙ্গে খুলেছে সরকারের শীর্ষ প্রশাসনিক দফতর বাংলাদেশ সচিবালয়। তবে অন্যান্য দিনের মতো প্রাণ চাঞ্চল্য ছিল না সচিবালয়ে। শবে কদরের ছুটির পর ঈদের বন্ধের মধ্যে দুদিন অফিস থাকায় কেউ কেউ আগেই ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন। কেউবা আবার সোমবার (৮ এপ্রিল) হাজিরা দিয়েই বাড়ি ফিরতে ছুটছেন রেল, বাসস্টেশন কিংবা লঞ্চঘাটের দিকে। সচিবালয় ঘুরে এমন দৃশ্য গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত সোমবার এবং আগামীকাল মঙ্গলবারও (৯ এপ্রিল) সরকারি অফিস-আদালতের সঙ্গে খোলা থাকছে সচিবালয়। বুধবার (১০ এপ্রিল) থেকে শুরু হচ্ছে ঈদ এবং পহেলা বৈশাখের ছুটি। চলবে ১৪ এপ্রিল রবিবার পর্যন্ত টানা ৫দিন। এ কারণে অনেকেই ৮ এবং ৯ এপ্রিল দুদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছেন। এ সব কারণে সোমাবার সচিবালয়ে ছিল না কোনও ব্যস্ততা। স্বাভাবিক নিয়মেই সোমবার সচিবালয়ে কোনও ভিজিটরের প্রবেশাধিকার ছিল না। এ কারণে ছিল না বহিরাগত অতিথিদের আনাগোনাও। ফলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ব্যস্ততা দেখা যায়নি।
ইতোমধ্যেই সচিবালয়ে শুরু হয়ে গেছে ছুটির আমেজ। ঈদুল ফিতরের আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শেষ কর্মদিবস গত মঙ্গলবার। কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক অনেক কম। যারাও এসেছিলেন তাদের মধ্যে ছিল বাড়ি ফেরার তাড়া। ঈদে বাড়ি যাওয়ার আগে সহকর্মীদের সঙ্গে কোলাকুলি করে বিদায় নিতে দেখা গেছে অনেককে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন সুত্রে জানা গেছে, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রোজা ২৯টি হলে ১০ এপ্রিল বুধবার ঈদ, আর রোজা ৩০টি হলে ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে।
সচিবালয় ঘুরে দেখা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা সকাল থেকেই কিছুটা ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেছেন। কারণ আজ কেবিনেট মিটিং ছিল। যদিও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তেজগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে কেবিনেট মিটিং। কিন্ত মিটিং শেষে দুপুরের পর সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে মিটিং পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন। কেবিনেট সচিব মাহাবুব হোসেন এই ব্রিয়িং করেন।
এ ছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রলালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ঘুরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি কিছুটা কম দেখা গেছে। যারাও এসেছেন তারা একে অপরের সঙ্গে গল্প-গুজবে মেতে ছিলেন। অনেকে সহকর্মীদের সঙ্গে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা বিনিময় সেরে নেন।
সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানিয়েছেন, দুই ছুটির মাঝে যারা ছুটি নেন, তাদের এই ছুটি আগের বা পরের সরকারি ছুটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে ছুটি হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য শবে কদর ও ঈদের ছুটির মাঝখানের কর্মদিবসে ছুটি নেওয়ার হার খুব কম। তবে একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে একটু ছাড় দিতে হয়। দু-একজন আজ হাজিরা দিয়ে চলে গেছেন। সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের নির্ধারিত দিন হওয়ায় এমনিতেই সচিবালয়ে দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারেন না। দর্শনার্থী না থাকায় অন্য দিনের মতো ভবনের লিফটের সামনে মানুষের ভিড় ছিল না। সচিবালয়ে যাতায়াতকারী বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ঈদের বকশিশ আদায়ে ব্যস্ত ছিলেন লিফট অপারেটররা।
জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের আগে সরকারি চাকরিজীবীদের আরও একদিন অফিস করতে হবে। ২০২৪ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী, আগামী ১০ থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ঈদুল ফিতরের নির্ধারিত সরকারি ছুটি ছিল। তবে এই ছুটির আমেজ শুরু হয়েছে গত বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) থেকে। কারণ শুক্রবার (৫ এপ্রিল) ও শনিবার (৬ এপ্রিল) সাপ্তাহিক ছুটির পর দিন রবিবার (৭ এপ্রিল) শবে কদরের সরকারি ছুটি। মাঝে সোমবার (৮ এপ্রিল) এবং মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দুই দিন বাদে বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঈদের ছুটি। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি রবিবার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষ। সে হিসাবে যারা ৮ ও ৯ এপ্রিল ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন, তাদের জন্য এবারের ঈদের ছুটি টানা ৯ দিন। মাঝে ৮ ও ৯ এপ্রিল সরকারি ছুটি পেতে মন্ত্রিসভায় সুপারিশ করা হলেও তাতে সায় দেয়নি মন্ত্রিসভা। যে কারণে সোমবার (৮ এপ্রিল) ও মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সরকারি চাকরিজীবীদের কাজ করতে হচ্ছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফাতিমা ইয়াসমিন জানান, অনেকেই ৮ ও ৯ এপ্রিল ঐচ্ছিক ছুটি নিয়েছেন। যে কারণে উপস্থিতি কম দেখা যাচ্ছে। অনেকেই পরিবার পরিজন আগেই গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি মঙ্গলবার অফিস শেষ করে বাড়ি যাবো বলে জানান ফাতিমা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, এবারের ঈদুল ফিতর এবং পহেলা বৈশাখের ছুটি কাছাকাছি হওয়ায় ছুটি দীর্ঘ হয়ে গেছে। মধ্যখানের দুদিন অনেকেই বাড়তি ছুটি নিয়ে এই ছুটিকে আরও দীর্ঘ করেছেন। যারা ছুটি নেননি, তারাই কেবল অফিস করছেন। এ কারণে অফিসে উপস্থিতির হার কম। আশা করছি, ঈদ ও নববর্ষের ছুটি শেষে আগামী ১৫ এপ্রিল সোমবার থেকে পরিপূর্ণ রূপ ফিরে পাবে সচিবালয়।