প্রশান্তি ডেক্স ॥ কোনও গবেষণা নেই, নেই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনও। অথচ অধ্যক্ষসহ ১৪ সহকারী অধ্যাপককে পদোন্নতি দিয়ে করা হয়েছে অধ্যাপক। এমপিওভুক্ত হিসেবে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বেতন-ভাতা নেওয়া এসব শিক্ষক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা নিচ্ছেন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে। অধ্যক্ষসহ সম্প্রতি অধ্যাপক হিসেবে ১৪ জন শিক্ষককে সম্প্রতি পদোন্নতিও দেওয়া হয়েছে। যা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত সরকারি বিধিবিধান বহির্ভূত।
অন্যদিকে, নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের সরকার নির্ধারিত স্কেলে দেওয়া হয় না, দেওয়া হয় না বাড়িভাড়ার জন্য কোনও অর্থ।
রাজধানীর ওয়ারীর টিপু সুলতান রোডে অবস্থিত সলিমুল্লাহ কলেজে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শিরীন আক্তারের দুটি মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। তবে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন সলিমুল্লাহ কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি এ কে এম আব্দুল্লাহ মন্নাফী।
পদোন্নতি দেওয়া এসব শিক্ষকদের গবেষণা আছে কিনা, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেসব শিক্ষকের চাকরির সময়কাল ২৪ বছর হয়েছে, তাদের পদোন্নতি দিয়ে অধ্যাপক করা হয়েছে। তবে এখনও বেতন-ভাতা দেওয়া হয়নি।’
কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিতে হলে ২৪ বছর চাকরি বয়স হতে হবে। প্রকাশনা থাকতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন থাকতে হবে। আমার মনে হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কমিটি করে এসব পদোন্নতি দেওয়া প্রয়োজন। ওই কলেজের সভাপতি ভালো মানুষ, তিনি হয়তো দিয়েছেন। বেসরকারি কলেজেতো গভর্নিং বডির ক্ষমতা অনেক বেশি। ’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি সলিমুল্লাহ কলেজের ১৪ জন সিনিয়র শিক্ষক গত তিন বছরের কম সময়ের মধ্যে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। পদের বিপরীতে সরকারি বেতন-ভাতার শতভাগ উত্তোলন করছেন। এসব শিক্ষকরা বেতন বর্তমানে সরকারি বেতন পাচ্ছেন ৩৯ হাজার ১৫০ টাকা (মূল বেতন)।
এদিকে, এসব শিক্ষকদের প্রতিষ্ঠান থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে সরকারি বিধি অমান্য করে। সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলছেন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত বেতন ৫২ হাজার ২৬৭ টাকা থেকে ৫৪ হাজার ৮৮০ টাকা। অর্থাৎ এই শিক্ষকরা সরকারি ও প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বেতন পাচ্ছেন ৯০ হাজারের বেশি। সঙ্গে বাড়িভাড়া পাচ্ছেন সহযোগী অধ্যাপকের বেতন স্কেলের ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ।
এখানেই শেষ নয়, এসব শিক্ষকদের বেতন আরও বাড়িয়ে দিতে সহযোগী অধ্যাপক থেকে গত ৩ মার্চ অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। অথচ বেসরকারি কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ছাড়া সহকারী অধ্যাপকের চেয়ে বড় কোনও পদ নেই। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করেই এসব শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে একটি সিন্ডিকেট কলেজের অর্থ ভাগবাটোয়ারা করে নেন।
অন্যদিকে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের নন-এমপিও শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে মাত্র ২১ হাজার টাকা। এর আগে এসব শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়তো ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে। ফলে অনার্স শিক্ষকদের ভাগ্যে সরকার নির্ধারিত বেতনও জোটে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, সরকারি বেতন-ভাতার শতভাগ বেতন পান সহকারী অধ্যাপক ১৪ জন। তাদের অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। গত ৩ মার্চ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তবে পদোন্নতির পর এখনও প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন দেওয়া হয়নি। উচ্চ মাধ্যমিক ও ডিগ্রি স্তরের এসব শিক্ষকদের অনার্স বা মাস্টার্স স্তরের কোনও ক্লাস নিতে হয় না। পক্ষান্তরে অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের ডিগ্রি ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ক্লাস নিতে হয়।
এই কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে আরও অভিযোগ। অভিযোগ মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে একটি, ব্যবস্থাপনা বিষয়ের দুটি, হিসাববিজ্ঞান বিষয়ের একটি এবং অর্থনীতি বিষয়ের একটি এমপিও পদ ফাঁকা থাকলেও শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে চাহিদা পাঠানো হয় না। পক্ষান্তরে কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় হয়নি। কারণ হিসেবে শিক্ষকরা বলছেন, চাহিদা দিয়ে এনটিআরসিএ এর মাধ্যমে শিক্ষক নিলে কলেজের আয় হয় না। কিন্তু কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠানের সে কারণে কর্মচারী নিয়োগে আগ্রহ বেশি।
অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে কলেজটি পরিচালিত হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিয়ে। আর সে কারণে সিন্ডিকেট ইচ্ছেমতো কলেজ পরিচালনা করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘ধাপে ধাপে এসব শিক্ষকদের পদোন্নতি হওয়ার কথা। পদোন্নতি কমিটিতে আমাদের প্রতিনিধি থাকার কথা। তাছাড়া লেন্থ অব সার্ভিস একমাত্র ক্রাইটেরিয়া হতে পারে না। আমাদের একটি নীতিমালা রয়েছে, তার ব্যত্যয় ঘটলে পরিদর্শককে দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। আমি মনে করি পদোন্নতির ক্ষেত্রে শর্ত থাকা দরকার, যদি গবেষণা না লাগে প্রকাশনা না লাগে তাহলে কেউ গবেষণা করবে না। বই লিখবে না। এসব বিষয় বিবেচনায় রাখা উচিত, তা সরকারি হোক অথবা বেসরকারি।’