প্রশান্তি ডেক্স ॥ জেন্ডার বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ও করণীয়ের ক্ষেত্রে নারী উন্নয়নে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার তথ্য উঠে এসেছে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্যু মন্ত্রণালয়গুলোর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অর্থের অভাব, ধর্মীয় কুসংস্কার ও ধর্মের অপব্যবহার, পুরুষশাসিত সমাজের রক্ষণশীল মনোভাব, অধিকার বিষয়ে নারীর অসচেতনতা প্রভৃতি কারণে নারী উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধা। নারীনেত্রী ও অধিকাকর্মীরা বলছেন, নারীর অগ্রযাত্রায় যখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তখনই এই কারণগুলো সামনে এসে বাধা সৃষ্টি করেছে। সরকার যখন সেগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছে তখন সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসার পথও তারা বের করতে পারবেন সেই প্রত্যাশা রইলো।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কিত বরাদ্দ ও ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জেন্ডারকেন্দ্রিক উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে এ মন্ত্রণালয় ধারাবাহিকভাবে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়েছে। পরিচালন বাজেটে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা থেকে ধারাবাহিকভাবে বেড়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা হয়েছে, যা ২০২২- ২৩ অর্থবছর থেকে পরিচালন বাজেটে জেন্ডারসংশ্লিষ্ট বরাদ্দ হিসেবে ৯৮ শতাংশে স্থিতিশীল রয়েছে।
উন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দের ওঠানামা লক্ষ্যণীয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেন্ডারসংশ্লিষ্ট বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৭৫ শতাংশে উন্নীত হয়।
নারী উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা: বাজেট প্রতিবেদনে বরাদ্দ ও বিশ্লেষণের পাশাপাশি চারটি প্রধান প্রতিবন্ধকতার উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোর নিজস্ব ভবন না থাকায় দাফরিক কার্যক্রমে অসুবিধার কথা। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিচালিত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি মাঠ পর্যায়ে তদারকি করার জন্য প্রয়োজনীয় জনবলের সংকটের কথাও বলা হয়েছে। বারবারই যে বিষয়টি সামনে আসে এবারও প্রতিবন্ধকতা প্রশ্নে সেই বিষয়ের উল্লেখ আছে- ধর্মীয় কুসংস্কার ও ধর্মের অপব্যবহার, পুরুষশাসিত সমাজের রক্ষণশীল মনোভাব, অধিকার বিষয়ে নারীর অসচেতনতা প্রভৃতি কারণে নারী উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাধা।
আছে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশও।
সমতার পথে অগ্রযাত্রী প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মনে করে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি-২০১১-এর আলোকে প্রস্তুতকৃত জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০২১-২০৩০) বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। একইসঙ্গে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতামুক্ত সমাজ গঠন করা। সহিংসতা প্রতিরোধকেন্দ্রিক আরও কিছু উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। এরমধ্যে আছে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং শিশু সুরক্ষায় সামগ্রিক সমন্বয়, পরিবীক্ষণ এবং তদারকির জন্য ন্যাশনাল সেন্টার অন জেন্ডার বেইজড ভায়োলেন্সকে ঈবহঃৎব ড়ভ ঊীপবষষবহপব হিসেবে গড়ে তোলা। নারী অধিকারকর্মীদের দীর্ঘদিনের দাবি নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল ডেটাবেইজ তৈরি করা ও ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার এবং ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল-এর ডেটাবেইজ তৈরি করার ব্যাপারটিও এবার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
প্রতিবন্ধকতার উল্লেখ থাকলে তা দূর করার উপায়ও উল্লেখ থাকতে হবে জানিয়ে নারী অধিকারকর্মী খুশী কবীর বলেন, প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সরকারের উদ্যোগগুলোর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করলে সেটা দূরের উল্লেখ থাকতে হবে। পুরুষ আধিপত্যের বিপরীতে নারীর করণীয়, নারীর সচেতনতা বাড়ানো, ধর্মীয় কুসংস্কারকে দূর করার জন্য কী ধরনের কর্মসূচি নিতে যাচ্ছে তার সুনির্দিষ্ট উল্লেখ থাকতে হবে।
জেন্ডার বাজেট কেন গুরুত্বপূর্ণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা খুব কাজের হতে পারতো। যেহেতু আলাদা করে এই বাজেট দেওয়া হচ্ছে, সেক্ষেত্রে যারা একটু সচেতন যারা জানতে চাইতে পারেন এই বরাদ্দ কোথায় খরচ হচ্ছে এবং কীভাবে কার্যকর হচ্ছে।
চিহ্নিত বাধাগুলো থেকে বের হওয়ার উপায় কী জানতে চাইলে উই ক্যান এর সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বলেন, মহিলা অধিদফতরের সেবা উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত, সেটা ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত নিতে হবে। এই মন্ত্রণালয়ের বাজেট খুবই কম এবং তারা মোটেই অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড না। উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ আইন সংশোধন হয়েছে। প্ল্যান অব অ্যাকশনও বানিয়েছেন তারা। সেখানে লেখা আছে কী কী করতে হবে। কিন্তু সেটা ওই করতে হবে পলিসি পর্যন্ত আছে। সেটা আসলে হচ্ছে কিনা সেই ফলোআপ নেই। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অ্যাকশন ওরিয়েন্টেড কর্মসূচি নিতে হবে এবং সেটা হচ্ছে কিনা সেটার মনিটরিং শক্তিশালী করতে হবে।
কে কী করবে আইনে সেই দায়িত্ব দেওয়া আছে। প্রয়োগকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাকে থানার সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু তিনি কাজটি যেন করতে পারেন সেই পরিস্থিতি কি তৈরি করা গেছে? মূল সমস্যা হলো নারীর জন্য করা পরিকল্পনা করার সময় সমন্বিত একটি পরিকল্পনা দেওয়া হয় না। প্রতি মন্ত্রণালয়ে নারীর উন্নয়নের জন্য যে কাজের জায়গা সেখানে মন্ত্রণালয়ের কোনও যুক্ততা থাকে না, যুক্ত করেন তিনি।