প্রশান্তি ডেক্স ॥ সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে সরকার। গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকাল পৌনে ৩টায় জাতীয় সংসদের ট্যানেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কোটা সংস্কারের দাবির সঙ্গে সরকার নীতিগতভাবে একমত বলেও জানান তিনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য আমাকে এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে বসবো। তারা যখনই আলোচনায় বসতে চায়… সেটা যদি আজকে হয়, আজই আমরা বসতে রাজি আছি।’
সেইসঙ্গে আপিল বিভাগে আগামী ৭ আগস্ট যে শুনানি হওয়ার কথা ছিল, তাও এগিয়ে আনার ব্যাপারে আপিল করবে সরকার। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ঘোষণা দিতে বলেছেন যে, আগামী ৭ আগস্ট মামলার যে শুনানি হওয়ার কথা ছিল, তা যেন এগিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমি সেই মর্মে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছি, আগামী রবিবার তিনি সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে তারা আপিল করবেন, যেন শুনানিটা এগিয়ে আনা হয়।’ প্রধান বিচারপতি এ বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন আইনমন্ত্রী।
এছাড়া আন্দোলনে হতাহতের ঘটনা তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘গতকাল (বুধবার) প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে যে বিচার বিভাগীয় কমিটির কথা ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খন্দকার দিলীরুজ্জামানকে প্রধান করে একটি কমিটি তৈরি করেছি। এই প্রস্তাব প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে, আমার বিশ্বাস তিনি এই কমিটিতে সম্মতি জানাবেন।’
আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা দেখেছি এবং বিশদভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যালোচনা সবই করেছি। কোটা বিরোধী আন্দোলন করছেন যে শিক্ষার্থীরা, তাদের কিন্তু এ কয়টা দাবিই ছিল। সরকার যেহেতু তাদের দিক বিবেচনা করে এই দাবিগুলোতে রাজি হয়েছেন, আমার মনে হয় আজ থেকে আন্দোলন করার আর কোনও প্রয়োজন নেই।
আন্দোলনকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অনুরোধ করছি… একজন পিতৃতুল্য নাগরিক হিসেবে আমি তাদের অনুরোধ করছি, তারা যেন সহিংসতা না করে এবং আন্দোলন স্থগিত বা প্রত্যাহার করে।’
এ ঘটনায় সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলো কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আজ তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা আলোচনায় বসতে রাজি আছে। আজকে আমরা রাজি হয়েছে। এটাতে দেরি কোথায় হলো, আপনি আমাকে বলে দেন।’
তিনি বলেন, ‘মামলার শুনানি হলে সরকার পক্ষ একটা প্রস্তাব দেবে। আমরা (সরকার) যেহেতু কোটা সংস্কারের পক্ষে, আমরা এ প্রস্তাব দেবো, কোটা সংস্কারের জন্য।’
বিচারের বিভাগের চেয়ে ক্ষমতাশীল নির্বাহী বিভাগ। দেশে এমন পরিস্থিতি হওয়ার আগে নির্বাহী বিভাগ কেন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলো না এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে প্রশ্নের জবাব দিচ্ছি। প্রথম কথা হচ্ছে, ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কোটা বাতিল করা হয়েছিল। এ বাতিলের যে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা হাইকোর্টে গেলেন। আন্দোলনকারীরা তখন কোনও পক্ষভুক্ত হননি। সম্প্রতি যে রায় হলো, তখন কিন্তু তাদের আন্দোলন শুরু হলো। তখনও তারা আদালতে যাননি।
‘পরে আন্দোলনকারীদের পক্ষে যারা আদালতে গেছেন, তাদের আগেও সাধুবাদ জানিয়েছি। আজও তাদের সাধুবাদ জানাই। যখন আদালত এই রায় দিয়েছেন, তখনই এই প্রশ্ন ও আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমি শুধু এটুকু বলবো, তাদের আন্দোলনে তারা তাদের বক্তব্য বলেছেন। আমরা তাদের আন্দোলন বন্ধ করতে বলেছি এবং আদালতে যেতে অনুরোধ করেছি। আদালতে তারা গেছেন, আদালত সিদ্ধান্ত নিলেই আমরা সেটা করতে পারি।
বাংলাদেশে আইনের শাসন আছে উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা ইতিহাস খতিয়ে দেখতে পারেন। আদালতে যখন কোনও প্রশ্ন ওঠে, তখন আদালত যতক্ষণ পর্যন্ত সেটার শেষ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত নির্বাহী বিভাগ কোনও সিদ্ধান্ত নেয় না।’
সংবাদ সম্মেলনের প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি খাদ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি নাইমুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।