সহিংসতার কারণে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে বিদেশে

প্রশান্তি ডেক্স ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুরে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেছেন। এর ৪৮ ঘণ্টা পরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা চলছে। মানুষ পিটিয়ে মেরে ফেলার পর ঝুলিয়ে রাখা থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু বা ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সাবেক কূটনীতিকদের মতে, এ ধরনের সহিংস ঘটনা এবং হামলা দেশের ভাবমূর্তির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ ধরনের ঘটনায় আন্দোলনকারীরা জড়িত নয় এবং কেউ কেউ পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে। কিন্তু এর ফলে ক্ষতি হচ্ছে দেশের। কারণ ইন্টারনেটের যুগে এ বিষয়গুলো ছড়িয়ে পড়ায় নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে বিদেশে। তারা মনে করেন, সবাইকে অবিলম্বে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।

একজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরের সহিংস ঘটনা বিদেশে প্রচারিত হওয়ার প্রক্রিয়াটি অনেক বেশি জটিল। আগে সীমিত কিছু সাংবাদিকদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার করা হতো এবং সেটির গতিবিধি বোঝা যেতো। এখন ইন্টারনেটের যুগে প্রথাগত গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক গণমাধ্যমও ব্যবহার হচ্ছে। ফলে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বিভিন্ন জায়গায় তথ্য ছড়িয়ে পড়ে।’

সহিংসতার প্রভাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এর স্বল্পমেয়াদি প্রভাব হচ্ছে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে বিদেশে শিক্ষার্থীদের পড়তে যাওয়া পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টিকে এভাবে দেখা যায় যে একজন বাংলাদেশি যদি বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে কোথায় বিনিয়োগ করবেন ভারতে নাকি আফগানিস্থানে। বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি একজন ভারতীয় শিক্ষার্থী এবং একজন আফগান শিক্ষার্থী আবেদন করে, তবে ওই বিশ্ববিদ্যালয় কাকে বেশি পছন্দ করবে।’

নেতিবাচক বার্তা

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মূল্যবোধভিত্তিক আন্দোলন হয় এবং সেটিকে নেতিবাচকভাবে দেখা হয় না। কিন্তু এর সঙ্গে যদি সহিংসতা হয় এবং সেটি যদি মাত্রাতিরিক্ত হয়, তবে সেটির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে।

এ বিষয়ে আরেকজন কূটনীতিক বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে যে আন্দোলন হয়েছে, সেটি করেছে শিক্ষার্থীরা এবং সেটি ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, যা মূল্যবোধকেন্দ্রিক। এর একটি আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা আছে। প্রথম দিকে যখন সহিংস ঘটনা শুরু হলো, সামগ্রিকভাবে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা সেটি বন্ধের আহ্বান জানায়। প্রাথমিকভাবে এর দায়ভার তখন ছিল সরকারের। কিন্তু এখন সরকার পদত্যাগ করার পর যে সহিংসতা হচ্ছে, সেটি সমগ্র বাংলাদেশের ওপর বর্তাবে।’

তিনি বলেন, ‘এই সহিংসতা দ্রুত বন্ধ করা দরকার। এটি চলতে থাকলে বাংলাদেশে যেসব বিদেশি বিনিয়োগকারী আছেন, তারাও হয়তো নিরাপত্তার অভাব বোধ করে চলে যেতে চাইবেন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.