প্রশান্তি ডেক্স ॥ কুমিল্লা থেকে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য এসেছিলেন ফারুক হাসান নামে এক মুদি দোকানি। তার লিভারের সমস্যা ধরা পড়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন। কিন্তু দুদিন চেষ্টা করেও ডাক্তার দেখাতে পারেননি। কারণ হাসপাতালে ডাক্তার অনুপস্থিত। শুধু তাই নয়, সাধারণ স্বাস্থ্য-পরীক্ষা করাতেও পারেননি তিনি। হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাসেবায় নেমে এসেছে স্থবিরতা। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চিকিৎসক না আসায় বন্ধ আছে অস্ত্রোপচারও।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছে শেখ হাসিনার সরকার। গত ৫ আগস্ট দুপুরে পদত্যাগপত্র স্বাক্ষর করে তিনি দেশ ত্যাগ করেন। তার দেশ ত্যাগের পর দায়িত্ব নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠনের ঘোষণা দেন সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। শেখ হাসিনার সরকার পদত্যাগের পরই ভেঙ্গে পড়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা। অফিস আদালত খুলে দেওয়া হলেও কার্যত অকার্যকর হয়ে রয়েছে সবকিছুই।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত সরকার পতনের পর প্রায় চিকিৎসক-কর্মকর্তাশূন্য হয়ে পড়েছে দেশের হাসপাতালগুলোতে। এসব হাসপাতালে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) সমর্থিত চিকিৎসকরা কর্মরত থাকলেও বর্তমানে তাদের কেউ নেই। তবে কিছু সাধারণ চিকিৎসক আছেন। ঊর্ধ্বতন কেউ নেই। বিএনপি সমর্থিত ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)-এর কিছু সদস্যদের হাসপাতালে দেখা গেলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কেউ অফিস করছেন না। ড্যাব নেতারা মিছিল-মিটিং করে নিজেদের জানান দিচ্ছেন।
স্বাস্থ্য খাতের অভিভাবক মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদফতরেও কেউ অফিস করছেন না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিভিন্ন বিভাগের লাইন ডিরেক্টর, পরিচালকসহ বেশির ভাগ কর্মকর্তা অফিস করছেন না বলে অধিদফতরের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাজে নিয়োজিত একজন স্টাফ জানান, সরকার চলে যাওয়ার পর গতকালই প্রথম অফিস খোলা হয়। কেউই আসছেন না অফিসে। অনেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। একটা প্রেক্ষাপট পাল্টালে তো অনেক কিছুই পাল্টে যায়। সবাই এখন দিকনির্দেশনাহীন অবস্থায় আছে। আমরাও কি করবো জানি না। তবে দফতর খোলা।
আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারা দেশে তাদের সদস্য আছেন সাড়ে ১৩ হাজারেরও বেশি। তারা সবাই চিকিৎসক। তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তারা এখন কেউ হাসপাতালে যাচ্ছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্বাচিপ নেতা বলেন, সব জায়গায় হামলা হচ্ছে, চিকিৎসকরা কেউ নিরাপদ না। তাই অনেকেই নিরাপদে থাকার চেষ্টা করছেন।
ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কাউকে পাওয়া যায়নি। রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল), জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, জাতীয় কিডনি হাসপাতালসহ বেশ কিছু সরকারি হাসপাতালে আওয়ামী লীগের পদধারী ও সমর্থিত চিকিৎসকরা হাসপাতালে আসছেন না বলে সেখানকার অন্য চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেকে প্রাইভেট চেম্বারও করছেন না।
শুধু হাসপাতালের পরিচালক নন, অনুপস্থিত আছেন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও। রাজধানীর বিএসএমএমইউ হাসপাতালেও অনুপস্থিত ছিলেন উপাচার্য।
তবে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেজাউর রহমান জানিয়েছেন, হাসপাতালের সেবা চালু আছে তবে রোগী কিছুটা কম।
তিনি বলেন, প্রথম দিকে কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছিল। তবে আজকে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এসেছিলেন। আলাপ-আলোচনা হয়েছে। হাসপাতালের সেবায় কোনও ঘাটতি নেই, আমাদের চিকিৎসকরা প্রস্তুত আছেন।