প্রশান্তি ডেক্স ॥ বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়া নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশে ফিরেছেন। দেশের ফিরেই ড. ইউনূস বলেন, ‘আজ আমাদের গৌরবের দিন। যে বিপ্ল্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ নতুন বিজয় দিবস সৃষ্টি করলো, সেটাকে সামনে রেখে এবং আরও মজবুত করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যারা এটাকে যারা সম্ভব করেছে, যে তরুণ সমাজ, তাদের প্রতি আমি আমার সমস্ত প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তারা আমার পাশে আছে। এরা এই দেশকে রক্ষা করেছে, এ দেশকে পুনর্জন্ম দিয়েছে। এ পুনর্জন্মে যে বাংলাদেশ পেলাম, সে বাংলাদেশ যেন দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে পারে সেটাই আমাদের শপথ। সেটি আমরা রক্ষা করতে চাই, এগিয়ে যেতে চাই।’
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম নিহত রংপুরের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের কথা স্মরণ করে আবেগআপ্লুত হয়ে ওঠেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমি আবু সাঈদের কথা মনে পড়ছে। যে আবু সাঈদের ছবি বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের মনে গেঁথে আছে। এটা কেউ ভুলতে পারবে না। কী অবিশ্বাস্য একটা সাহসী যুবক বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে এবং তারপর থেকে আর কোনও যুবক, কোনও যুবতী আর হার মানেনি। সামনে এগিয়ে গেছে এবং বলেছে, যত গুলি মারো, মারতে পারো; আমরা আছি।’
আর এই দৃঢ় প্রত্যয়ের কারণেই সারা দেশে আন্দোলন ছড়িয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যার কারণে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করলো। এই স্বাধীনতাটা আমাদের রক্ষা করতেই হবে। শুধু রক্ষাই নয়, এর সুফল প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে হবে; তা না হলে এ স্বাধীনতার কোনও দাম নেই। এ স্বাধীনতাটা পৌঁছানোই হলো আমাদের শপথ এবং দৃঢ় প্রতীজ্ঞা।’
এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ড. ইউনূসকে বহনকারী ফ্লাইটটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে নেমে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধান, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর গণমাধ্যমে ব্রিফ করেন এই নোবেল বিজয়ী।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ যেন জানে, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অর্থ হলো তার নিজের পরিবর্তন, ব্যক্তির পরিবর্তন, সুযোগের পরিবর্তন, ছেলে-মেয়ের ভবিষ্যতের পরিবর্তন; এটা যেন সবাই বুঝে নেয়।’
একইসঙ্গে তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই দেশ তোমাদের হাতে, তোমরা এটাকে তোমাদের মনের মতো করে গড়ে তুলবে। তোমরা যেভাবে স্বাধীন করতে পেরেছো, সেভাবে তোমরা এটাকে মনের মতো করে গড়তেও পারবে। তোমাদের দেখে সারা দুনিয়া শিখবে, কীভাবে একটা দেশ একটা তরুণ সমাজ গ্রহণ করতে পারে এবং পাল্টে ফেলতে পারে।’
তরুণদের সঙ্গে অন্যান্য সময়ের আলাপের প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূস বলেন, ‘তাদের আমি এমনি বারেবারে পরামর্শ দেই যে, পুরনোদের বাদ দেও। তাদের পুরনো চিন্তা দিয়ে আমাদের মুক্তি হবে না কোনোদিন। সারা দুনিয়ার মধ্যেই এটা হবে না। শুধু বাংলাদেশের কথা না, সারা দুনিয়ার কথাই বলছি। তোমাদের মধ্যে যে শক্তি আছে, যে সৃজনশীলতা আছে; সেটাকেও কাজে লাগাতে হবে।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একরকম অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। এরইমধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী নোবেলজয়ী ড. ইউনূসকে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। দায়িত্ব নিতে ফ্রান্সের প্যারিস থেকে আজ দেশে ফিরলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাকে বরণ করতে ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, বিমানবন্দর জুড়ে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরের দিকে ড. ইউনূসকে বরণ করতে ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে তাকে বরণ করতে উপস্থিত হয়েছেন ইউনূস সেন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার লোকজন। বিমানবন্দরের বাইরে অনেকেই হাতে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড, হাতে ফুল নিয়ে ড. ইউনূসকে বরণ করতে অপেক্ষা করছেন।
এদিকে বিমানবন্দর থেকে তিনি সরাসরি বঙ্গভবন যাবেন বলে জানা গেছে। তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হতে চলেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা এই সরকারের শপথ অনুষ্ঠানের কথা আছে। এর আগে গত বুধবার রাতে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৃহস্পতিবার ঢাকার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১০ মিনিটে দুবাই থেকে এমিরেটস ফ্লাইটে (ইকে-৫৮২) বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সূত্র জানায়, ইউনূস ঢাকায় নেমে সরাসরি বঙ্গভবন যাবেন। সেখানেই বিশ্রাম নেবেন, রাতে শপথ নেবেন।