প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স॥ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মস্কোতে সাক্ষাতের কয়েক সপ্তাহ পর এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ইউক্রেন সফরে যাচ্ছেন। গত শুক্রবারের এই সফরটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ কারণ কিয়েভ ও কিছু পশ্চিমা দেশ মোদির মস্কো সফর নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছিলেন, বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নেতাকে মস্কোর রক্তাক্ত অপরাধীকে আলিঙ্গন করতে দেখে আমি হতাশ।
তাহলে কি মোদি এই সফরের মাধ্যমে জেলেনস্কি এবং অন্যান্য পশ্চিমা নেতাদের তুষ্ট করতে চাইছেন? পুরোপুরি তা নয়। ভারতকে দুটি প্রতিদ্বন্ধী রাষ্ট্র বা ব্লকের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে দেখা অপ্রত্যাশিত কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরে দেশের সুপরিচিত নিরপেক্ষ নীতি দেশটির ভূরাজনৈতিক অবস্থানে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
এই সপ্তাহে মোদির সফর যা কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম ইউক্রেন সফর : মূলত ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারত রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক বজায় রাখবে। তবে একই সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে।
ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, এই সফর ভারতের কৌশলগত স্বাধীনতাকে আরও জোরালো করবে। তিনি বলেন, ভারত পশ্চিমা শক্তিগুলোকে তুষ্ট করার কাজে নেই। এটি ভারতের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যই একটি সফর, যা কিয়েভের সঙ্গে বন্ধুত্ব পুনর্ব্যক্ত এবং চলমান যুদ্ধের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশের জন্য।
তবে, এই সফরের সময়সূচি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, মোদির মস্কো সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র প্রতিক্রিয়া ভারতীয় কূটনীতিকরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি সমালোচনা করা থেকে ভারত বিরত থেকেছে, যা পশ্চিমা শক্তিগুলোর জন্য বিরক্তির কারণ হয়েছে।
ভারত প্রায়শই জাতিসংঘে জাতীয় অষন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর গুরুত্বের কথা বলেছে এবং যুদ্ধ শেষ করতে কূটনীতি ও সংলাপের জন্য ক্রমাগত চাপ দিয়ে আসছে।
মোদির মস্কো সফরটি জুলাই মাসে এমন এক সময়ে নির্ধারিত হয়েছিল যখন রুশ বোমা হামলায় ইউক্রেনে অন্তত ৪১ জন নিহত হয়েছিলেন। যার মধ্যে কিয়েভের একটি শিশু হাসপাতালের শিশুরাও ছিল, যা বৈশ্বিক প্রতিবাদের ঝড় তোলে।
মোদির কিয়েভ সফরকালে এই অবস্থান থেকে সরে আসার সম্ভাবনা কম। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোও ভারতের এই অবস্থানকে মেনে নিয়েছে। বিশেষত রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক এবং রুশ সামরিক সরঞ্জামের ওপর ভারতের নির্ভরতা বিবেচনায় নিয়ে।
ভারত বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার প্রতিরক্ষা আমদানির পরিসর বৈচিত্র্যময় করেছে এবং দেশীয় উৎপাদনও বাড়িয়েছে, তবে এখনও ৫০ শতাংশের বেশি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রাশিয়া থেকে কেনা হয়।
এছাড়া, রাশিয়া থেকে তেলের আমদানি বাড়িয়েছে ভারত, মস্কোর দেওয়া কম দামের সুযোগ নিয়ে গত বছর রাশিয়া ছিল ভারতের সর্বোচ্চ তেল সরবরাহকারী।
মোদি তার কিয়েভ সফরের সময় শান্তির প্রস্তাব নিয়ে আসবেন, এমন সম্ভাবনা কম। ইউক্রেন অবশ্য মোদির এই সফরকে স্বাগত জানাবে এবং মস্কোর ঘনিষ্ঠ মিত্রের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ হিসেবে দেখবে। তবে, জেলেনস্কি পুতিনের বিরুদ্ধে তার সমালোচনা মোদির সামনে থেকে সরিয়ে রাখবেন বলে আশা করা যাচ্ছে না।
মস্কো সম্ভবত এই সফরের তেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে না। কারণ ইতোমধ্যে দিল্লির বহু-পাক্ষিক ভূরাজনৈতিক কৌশলের জন্য কিছু ছাড় দিয়েছে মস্কো।
পররাষ্ট্র নীতি বিশ্লেষক সি রাজা মোহন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকায় লিখেছেন, ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে পরিবর্তনের স্বীকৃতি দেওয়া এবং মধ্য ও পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা সম্পর্ককে গভীর করার বিষয়ে মোদির ওয়ারশ এবং কিয়েভ সফর।