প্রশান্তি ডেক্স ॥ যখন রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের সময় এসেছে তখনই বিভাজন তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও তাদের দোসররা এখনও ওত পেতে আছে। সুযোগ পেলেই তারা বহু জীবনের বিনিময়ে অর্জিত দ্বিতীয় স্বাধীনতার ওপর আঘাত হানবে। এমন অবস্থায় জুলাই-আগস্টে যেভাবে আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, জনগণের অধিকার রক্ষায় সবাইকে সার্বক্ষণিক সজাগ থাকার আহ্বান জানাই।’
গত বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকালে কক্সবাজারের পাবলিক হলে আয়োজিত দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি নির্মূলে ছাত্র-নাগরিকদের সঙ্গে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
সহযোদ্ধাদের উদ্দেশে হাসনাত আব্দুল্লাহ আরো বলেন, ‘আমাদের রাজনীতির মতাদর্শ আলাদা হতে পারে। আমাদের এখানে জামায়াত থাকতে পারে, শিবির থাকতে পারে, ছাত্রদল থাকতে পারে, বিএনপি থাকতে পারে। আবার ফ্যাসিবাদবিরোধী যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে, তাদের নেতাকর্মীরাও থাকতে পারেন। কিন্তু আমাদের সব একটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, তা হলো স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে।’
স্বৈরাচার সরকার পতনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্তের বিনিময়ে আজ আমরা দ্বিতীয় স্বাধীন দেশ পেয়েছি জানিয়ে সমন্বয়ক হাসনাত বলেন, ‘তাদের রক্তের বিনিময় যদি আমরা পরিশোধ করতে চাই, তাহলে আমাদের কিছু কর্তব্য ও দায়িত্ব আছে। কারণ ফ্যাসিবাদী সরকার আমাদের সব সময় শাসন ও শোষণ করেছে। আজ আমাদের তরুণ প্রজন্ম হিসেবে ব্যবধানটি বুঝিয়ে দেওয়া আমাদের কর্তব্য। এই কর্তব্য পূরণ করার জন্য আমাদের সমাজে বিদ্যমান চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পারিবারিক দুর্নীতি, সমাজের ও রাষ্ট্রের দুর্নীতিসহ সব দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
হাসনাত আরও বলেন, ‘যখন ভাঙার সময় আসে তখন আমরা এক হয়ে যাই। যেমন ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়, একাত্তরের যুদ্ধে, নব্বইয়ের অভ্যুত্থানে কিংবা ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে আমরা সবাই এক হয়ে লড়েছিলাম। এ সময় আমরা কাউকে জিজ্ঞেস করিনি, কে সরকারি চাকরি করে, কে করে না, কে বিসিএস ক্যাডার, কে ক্যাডার না। এভাবে পৃথিবীর সব কিছুতেই ভাঙার সময় এক হয় মানুষ। কিন্তু যখন গড়ার সময় আসে তখন বিভাজন সৃষ্টি হয়। ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত আমাদের মাঝে কোনও বিভেদ ছিল না। যখন রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনের সময় এসেছে তখনই বিভাজন তৈরি হচ্ছে। এই জায়গা থেকে আমাদের বের হতে হবে। বাংলাদেশের প্রশ্নে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
ফ্যাসিস্টদের সরাতে শত শত ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, ‘তারা তো কোনও পদ-পদবি চাননি। আন্দোলন শেষে আমরা যখন রাষ্ট্র ও সরকার মেরামতের কাজে হাত দিয়েছি, তখন অনেকে পদ-পদবির জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এগুলো থেকে বের হয়ে আসতে হবে।’
একটি সুষ্ঠু বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে প্রশাসন, চিকিৎসকসহ সব ধরনের মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন। সে হিসেবে ছাত্রদের দাবি বা প্রত্যাশা পূরণে দাদাগিরির মতো প্রশাসন বা চিকিৎসকদের ওপর চাপ প্রয়োগ না করার নির্দেশ দেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।