জসীমউদ্দীন ইতি, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি ॥ ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ডের টাকা শূন্য করে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ রায়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ করেছেন মো. আব্দুর রহমান নামে এক অভিভাবক।
দুদকে অভিযোগ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঠাকুরগাঁওয়ের উপ-পরিচালক তাহসিন মুনাবীল হক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, সাবেক এই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ রায় ১৯৯৪ সালে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। ২০২৪ সালের ১৬ ই জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে বসে এবং ৫ ই মে পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তাই এ তিন মাসের ব্যবধানে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে এত টাকা উত্তোলন করাকে নজিরবিহীন ঘটনা বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানটির অনেক শিক্ষক ।
বিভিন্ন তথ্য মতে জানা যায়, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ড হতে ৪০ হতে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সাবেক এই প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের সবগুলো ফান্ড এখন প্রায় শূন্য। বিদ্যালয়ের মাস্টার রোলের কর্মচারী ও মসজিদের ইমাম-মোয়াজ্জেনের বেতন দিতে পারছেন না বর্তমান প্রধান শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, পৌরশহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সততা প্রিন্টিং প্রেস, তাতীপাড়ায় বুক সেন্টার ও চৌরাস্তায় অবস্থিত ডেকোরেশনের দোকানে বিদ্যালয়ের নামে কয়েক লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।
বিদ্যালয়টির বর্তমান প্রধান শিক্ষক মতাহার উল আলম বলেন, তিনি ফান্ডের টাকা থেকে কাজ করার কথা বলেছেন৷ তবে আমাকে ভাউচার জমা দেননি৷ আমি যখন চার্জ বুঝে পায় তখন বিভিন্ন ফান্ডে প্রায় ৮ লাখ টাকা পেয়েছি। ফান্ডে টাকা কম থাকায় মাষ্টার রোলে কর্মচারীদের বেতন দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা৷ আর বিদ্যালয়ের কেনাকাটার অনেক বকেয়া রয়েছে বিভিন্ন দোকানে। আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি ফান্ডিং বাড়ানোর জন্য৷
প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ রায়ের বিরুদ্ধে আনা টাকা আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের তোপের মুখে বর্তমান প্রধান শিক্ষক মতাহার উল আলমের আদেশে একজনকে আহ্বায়ক করে নয় সদস্যের একটি ইন্টারনাল অডিট টিম গঠন করা হয়েছে।
অডিট টিম আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক দায়িত্বে আসার পর ক্ষমতা নেওয়া থেকে বর্তমান প্রধান শিক্ষকের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত ব্যাংক স্টেটমেন্টের ভিত্তিতে সকল আয় ব্যায়ের হিসাব বের করার নির্দেশ দিয়েছেন। উল্লেখ্য যে, প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ রায় বর্তমান পিআরএল ভোগ করছেন।
অভিযুক্ত সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিশ্বনাথ রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ অভিযোগটি সত্য না। আমি বিদ্যালয়ের অনেক গুলো কাজ করেছি। বিদ্যালয়ের রাজা স্যার এসব বিষয়ে সবকিছু অবগত রয়েছেন৷ তাকে জিজ্ঞেস করলে জানতে পারবেন৷
দুদকের জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তাহসিন মুনাবীল হক বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি হেড অফিসে পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে৷
বিদ্যালয়টির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান বলেন, আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের কোন ফাইল আসেনা। সে কারনে এ বিষয়ে জানার বা বলার কোন সুযোগ নেই৷ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রংপুর অঞ্চলের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমাদের কেউ জানাননি বা অভিযোগ করেননি। শুনেছি তিনি অবসরে চলে গেছেন।তবে অভিযোগের সতত্যা পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব৷