প্রশান্তি আন্তর্জাতিক ডেক্স ॥ ভারত সরকার প্রায় আড়াই মাস ধরে বাংলাদেশি নাগরিকদের পর্যটন ভিসা দেওয়া যে বন্ধ রেখেছে, তা চটকরে আগামী দিনগুলোতে আবারও শুরু হবে এমন কোনও সম্ভাবনা নেই!
ভারত সরকার গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, যতক্ষণ না বাংলাদেশে ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটছে’ এবং ‘অনুকূল পরিবেশ আবারও ফিরে না আসছে’, ততক্ষণ সে দেশে তাদের ভিসা কার্যক্রম কোনোমতেই স্বাভাবিক হবে না। ফলে সোজা কথায় অদূর ভবিষ্যতে ভারত যে বাংলাদেশে আবার ট্যুরিস্ট ভিসা দিতে শুরু করছে না, এটা এদিন একেবারে দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে। তবে সীমিত সংখ্যায় মেডিক্যাল বা ইমার্জেন্সি ভিসা ইস্যু করা জারি থাকবে।
অথচ ভারতে বাইরের যে দেশটি থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পর্যটক আসেন, সেটি কিন্তু ইউরোপ-আমেরিকার কোনও দেশ নয় বরং বাংলাদেশ। কোভিড মহামারির আগের বছরও ভারত বাংলাদেশে প্রায় ১৮ লাখ পর্যটন ভিসা ইস্যু করেছিল, যা একটি রেকর্ড। এই ভিসা-প্রাপকদের মধ্যে অনেকে একাধিকবার ভারতে এসেছিলেন। ফলে ধারণা করা হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে অন্তত ২০ থেকে ২২ লাখ বাংলাদেশি পর্যটক ভারতে এসেছিলেন।
কোভিডের পর গত দুই-আড়াই বছরে পর্যটকদের ঢল আবারও সেই রেকর্ড ভাঙার দিকেই এগোচ্ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া কার্যত পুরোপুরি থমকে গেছে। ভারত কেন ভিসা দিচ্ছে না বা পাসপোর্ট নিয়ে দিনের পর দিন আটকে রেখেছে, এই দাবিতে বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা সেন্টারগুলোর সামনে বিক্ষোভ-প্রতিবাদও হয়েছে।
ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে, এই প্রশ্নের জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরা তো সীমিত আকারে (‘লিমিটেড’) ভিসা দিচ্ছি। চিকিৎসার কারণে, বা জরুরি কোনও কারণে কারও ভারত আসার দরকার হলে লিমিটেড সংখ্যায় সেই ভিসা দেওয়া হচ্ছে।’
‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যদি উন্নতি হয় এবং আমাদের স্বাভাবিক কাজকর্মের উপযুক্ত পরিবেশ যদি ফিরে আসে, তখনই আবারও আমরা আগের মতো ভিসা দিতে পারবো।’
কিন্তু দুর্গাপূজার সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পূজামন্ডপে প্রতিমা ভাঙচুরের যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে পরিস্থিতি যে আদৌ স্বাভাবিক হয়নি বলে ভারত মনে করছে, মুখপাত্র সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।
দিল্লির সাউথ ব্লক, যেখানে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গেই যোগ করেছেন, ‘আমি সে দেশের অন্তবর্তী সরকারকে বলবো, বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা দিতে আপনারা যেসব আশ্বাস দিয়েছেন, সেগুলো বাস্তবায়ন করুন। তারা যাতে নিরাপদ বোধ করেন, সেই ব্যবস্থা নিন।’
প্রসঙ্গত, আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর পশ্চিমের অনেক দেশের ভিসা কার্যক্রমও ব্যাহত হয়েছিল কিন্তু সেগুলো ক্রমশ আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
এই ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতিতে বলেন, ‘কোন দেশ কোনটাকে অনুকূল পরিবেশ মনে করছে, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। কিন্তু ভারত নিজেরা যতক্ষণ না মনে করছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও নিরাপদ, ততক্ষণ ভিসা কার্যক্রম স্বাভাবিক হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না!’
শেখ হাসিনার গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে : বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার ব্যাপারে ভারত সরকার এদিন কোনও মন্তব্য করেনি।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালকে নির্দিষ্টভাবে শেখ হাসিনার এই গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাব এড়িয়ে যান এবং বুঝিয়ে দেন, শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের অবস্থান অপরিবর্তিত আছে।
রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমরাও (শেখ হাসিনাকে নিয়ে) নানা ধরনের রিপোর্ট দেখেছি। কিন্তু ওগুলোর ব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’
‘আপনারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ভারতে অবস্থান নিয়ে জানেন… তাকে এখানে খুব স্বল্প সময়ের নোটিশে চলে আসতে হয়েছিল, মূলত নিরাপত্তা বা সুরক্ষার কারণে। তিনি এখনও সেভাবেই আছেন।’
এ মন্তব্যের মাধ্যমে দিল্লি অবশ্য এটাও স্বীকার করে নিয়েছে যে, শেখ হাসিনা ভারত ছেড়ে এখনও কোথাও যাননি, তিনি ভারতেই আছেন।