প্রশান্তি ডেক্স ॥ বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকদের তৃতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান ব্যবহার করে। এ ঘটনায় ৩৩ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিকাল ৫টার পর রাজধানীর আব্দুল গনি রোডে শিক্ষা ভবনের সামনে শিক্ষকদের কর্মসূচি চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশের লাঠিচার্জে আহত কলেজ শিক্ষক আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক মো. মোস্তফা কামাল জানান, পুলিশ আকস্মিক সাউন্ড গ্রেনেড মেরে, জলকামানের ব্যবহার করেছে। বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচির এক পর্যায়ে লং মার্চ কর্মসূচির প্রস্তুতিকালে পুলিশি হামলায় ১১ জন নারী শিক্ষকসহ ৩৩ জন শিক্ষক আহত হয়েছেন।
বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স ফেডারেশনের সভাপতি নেকবর হোসেন শিক্ষক সাধারণ সম্পাদক মেহরাব হোসেন, শিক্ষক হুমায়ুন কবির সুমন, নুরুল আবছার সিকদার, জয়নাল আবেদীন, সুজা উদ্দিন, আবদুল মালেক কাজল, জহিরুল হক, আবুল আলা শিবলী, তৌহিদুর রহমান, শারমিন, রোকসানা ও তানিয়াসহ ৩৩ জন শিক্ষক আহত হন।
শিক্ষকরা বলেন, গত মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করি। তৃতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ছয় জন শিক্ষককে নিয়ে যাওয়া হয় বৈঠক করার জন্য। বৈঠকে জানানো হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে শিক্ষকরা আশ্বস্থ হতে না পেরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের দিকে লং মার্চ শুরু করলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান দিয়ে হামলা চালায় এবং লাঠিচার্জ শুরু করে। পুলিশের পিটুনিতে শিক্ষকরা রাস্তা ছেড়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ ইচ্ছেমতো শিক্ষকদের চড়-থাপ্পড়ও মেরেছেন।
শিক্ষক নাজনীন আক্তার বলেন, পুলিশ শিক্ষকদের পিটিয়ে হাত-পা শরীর থেঁতলে দিয়েছেন। অপ্রয়োজনে একজন শিক্ষককের কানে চড় মেরে আহত করেছেন।
প্রধান সমন্বয়ক মো. মোস্তফা কামাল বলেন, সাউন্ড গ্র্যানেড ও জলকামান মেরে আতঙ্ক তৈরি করে পুলিশ। একপর্যায়ে লাঠি চার্জ শুরু করে। শিক্ষকদের গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কিছু শিক্ষক পুলিশকে অনুরোধ জানায়, এতে তারা আরও মারমুখী হয়ে ওঠে। একজন শিক্ষক আতঙ্কে পুলিশের পা ধরে অনুরোধ করেন। শিক্ষকদের পুলিশ এভাবে অপমান করেছেন। অথচ আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছিলাম।
বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স ফেডারেশনের সভাপতি নেকবর হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মেহরাব হোসেন বলেন, শিক্ষকরা বেশি কিছু চাননি। এমপিওভুক্তি সুনির্দিষ্ট আশ্বাস পেলেই তারা ঘরে ফিরে যেতেন। তাদের পিটিয়ে বিদয়া করা ন্যক্কারজনক।
তারা আরও বলেন, বেসরকারি কলেজের অনার্স-মাস্টার্স স্তরের শিক্ষকরা ৩২ বছর ধরে বলতে গেলে বিনা বেতনে চাকরি করছেন। কলেজ থেকে সামান্য টাকা দেওয়া হয় যা অনিয়মিত। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানার পরও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিগত সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এমপিওভুক্তির জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলেও আমলারা রহস্যজনক কারণে এমপিওভুক্ত করেননি। আর এ কারণে এখন আমরা বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের দাবির পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে আন্দোলন করছি এমপিওভুক্তির জন্য।
কর্মসূচি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর প্রধান সমন্বয় মো. মোস্তফা কামাল জানান, শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা কেন্দ্রে বৈঠক করবেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে।
এর আগে গত বুধবারের (১৬ অক্টোবর) কর্মসূচিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত না পেয়ে সন্ধ্যার পর শিক্ষকরা শিক্ষা ভবনের সামনে শুয়ে পড়েন এবং রাস্তা অবরোধ করেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে রাত পৌনে ১০টার দিকে রাস্তা ছেড়ে দেন।