চুলার অল্প আঁচে বিরক্ত গৃহিণীদের প্রশ্ন, সেবা দিতে না পারলে বিল কেন?

প্রশান্তি ডেক্স ॥ চার দিনের সংস্কার শেষে গত শনিবার (৪ জানুয়ারি) থেকে আবারও গ্যাস সরবরাহে ফিরেছে এলএনজি টার্মিনাল। পেট্রোবাংলা দাবি করছে, এখন আগের মতো পুরোদমে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু ঢাকার সরবরাহ পরিস্থিতি বলছে, সংকট এখনও কাটেনি। বরং গত শনিবার (৪ জানুয়ারি) অনেক এলাকার রান্নাঘরে চুলা জ্বলেনি। আবার কোথাও কোথাও চুলার অল্প আঁচে বিরক্ত গৃহিণীরা।

রাজধানীর বেশিরভাগ মানুষ তিতাস গ্যাসের লাইন ব্যবহার করেন। প্রতি মাসে দুই চুলার জন্য তিতাস গ্যাস বিল নিয়ে থাকে ১ হাজার ৮০ টাকা। মানুষ গ্যাস ব্যবহার করতে পারুক বা না পারুক প্রতি মাসে এই বিল পরিশোধ করতে হয়। প্রতিদিন একটি চুলা গড়ে ১২ ঘণ্টা ধরে জ্বললে যে পরিমাণ গ্যাস প্রয়োজন হতো, সেই দাম হিসাব করেই বাসাবাড়ির গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিদিন তিন বেলায় গড়ে চার ঘণ্টা করেও কেউ রান্না করেন না। তারপরও এমন ‘অন্যায্য দাম’ পরিশোধ করতে হয় গ্রাহকদের। তার ওপর আবার বাসাবাড়ির গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির দিকে সরকারের কোনও নজর নেই। বিগত সরকারের সময় থেকেই সবচেয়ে অবহেলিত অবস্থায় রয়েছে গৃহস্থালির গ্যাস সরবরাহ।

উলনের শিমুলবাগের বাসিন্দা কাজী রুশিয়া জানান, কয়েকদিন ধরে গ্যাস সরবরাহ একেবারেই বন্ধ। আমরা বৈদ্যুতিক চুলাতেই রান্না করছি। এদিকে যখন গ্যাস থাকে তখন প্রি-পেইড মিটারে গ্যাসের বিল ভরলেও চুলার আঁচ এত কম থাকে যে রান্না করাই যায় না।

এদিকে মানিকনগর থেকে সুমা চৌধুরী নামে এক গৃহিণী জানান, ১ জানুয়ারি থেকেই চুলায় আঁচ নেই। গত শনিবার (৪ জানুয়ারি)  তো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও গ্যাস আসেনি। বৈদ্যুতিক চুলায় রান্না করে বাচ্চাদের খেতে দিলাম। একদিকে আমরা গ্যাস পাই আর না পাই, প্রতি মাসে বিল দিচ্ছি; আবার বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ায় সেখানেও বিল দিতে হচ্ছে। এরপর যদি মেহমান আসে তাহলে তো অবস্থা আরও খারাপ।

গংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নীতি নির্ধারকদের কথায় মনে হয়, বিল পরিশোধ করার পরও সরকার দয়া করে গ্যাস সরবরাহ করছে। অধিকাংশ ভোক্তাই মনে করেন গ্যাস সরবরাহ না করতে পারলে এর জন্য জরিমানা হওয়া উচিত। সরকার যেহেতু ফ্রি দিচ্ছে না। গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারভিত্তিক হিসাব করে সেই হিসেবে দেওয়া হচ্ছে, তাই মানুষ কাঙ্ক্ষিত সেবা আশা করে।

গত দুই দিন ধরে দিনে রাতে রাজধানীর হোটেল রেস্তোরাঁর ওপর বেশি নির্ভর করতে হয়েছে মানুষকে। রান্নার সামান্য গ্যাসও মিলছে না চুলাতে। খুব ভোরে উঠে যারা রান্না শেষ করতে পেরেছেন তাদের কথা আলাদা। কিন্তু সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে বেশিরভাগ এলাকার পাইপ গ্যাস শূন্য হয়ে পড়ে, তাই দুপুরের খাবারের ভরসা ছিল পাড়ার মোড়ের হোটেল।

রাজধানীর শুক্রাবাদের বাসিন্দা মাহবুবুর রহমান বলেন, সকালের নাস্তা কদিন ধরে হোটেল থেকে এনেই খেতে হচ্ছে। এদিকে দুপুরেও চুলা জ্বলে না। এখন রাতে গ্যাস অল্প অল্প এলে দুপুর আর রাতের রান্না একসঙ্গে করে রাখার চেষ্টা করি। এরকম অনেক অভিযোগ এসেছে মিরপুর, কামরাঙ্গীরচর, পুরানো ঢাকাসহ অনেক এলাকা থেকেই।

সাধারণত ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হলেও গত দুই দিন ধরে দৈনিক সরবরাহ ৪০০ মিলিয়ন কমিয়ে ২৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট করা হয়েছে। এতে করে দেশের বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রর বেশিরভাগ বন্ধ রেখেও বাসাবাড়িতে গ্যাস দিতে পারছে না।

এদিকে গ্যাস পাচ্ছে না অথচ প্রতি মাসে বিল দিতে হচ্ছে- এই অন্যায় থেকে বের হওয়ার উপায় কী জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, ‘গ্যাস দিতে পারবে না সরকার, অথচ গ্রাহককে বিল দিতে হচ্ছে, মিটার ভাড়া দিতে হচ্ছে। এটা তো অন্যায়। এখন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতিবাদ করতে পারে বিল দেওয়া বন্ধ করে দিয়ে। এছাড়া গ্রাহকদের পক্ষ থেকে সমাজের সুশীলরা কথা তুলতে পারে। ক্যাবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। তবে সবার আগে সরকারের উচিত এটার একটা বিহিত করা। দিনের পর দিন গ্রাহক গ্যাস পাবে না, আবার তাদের বিলও দিতে হবে। এটার সমাধান হওয়া প্রয়োজন।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজ বলেন, ‘আজকের গ্যাস সংকটের বিষয়ে বলা যায় টার্মিনাল চালু হওয়ার পরে পাইপলাইনে গ্যাস আসতে আসতে সময় লাগে। টার্মিনাল সকালে চালু হয়েছে। সুতরাং গত শনিবার (৪ জানুয়ারি) দিনটা অপেক্ষা করতেই হবে।’

এদিকে শীতে গ্যাসের সংকট নিয়ে তিনি বলেন, ‘তিতাসের অধীনে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ২২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পেলে তো সংকট হতো না। বরাদ্দের বিষয়ে বলা আছে ১৭০০ মিলিয়ন দেবে। কিন্তু আমরা পাচ্ছি ১৫০০ মিলিয়ন। যে গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে, এলএনজি থেকে আসছে, তা আমাদের ৬ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির মধ্যে ভাগ করা হয়। বিতরণ কোম্পানিগুলোকে তাদের পাওয়া গ্যাস আবার রেশনিং করে বিদ্যুৎ, শিল্প, আবাসিক, সিএনজিসহ সব খাতে সরবরাহ করতে হয়। ফলে ঘাটতি থাকলে সব খাতেই সেটা তৈরি হয়। এই ঘাটতি মেটাতে হলে উৎপাদন বাড়িয়ে সরবরাহ নিশ্চিত করা ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published.